নিউইয়র্কে অনিয়ম ও দূর্নীতির কবলে বহু বাংলাদেশি ফার্মেসি
শাহাব উদ্দিন সাগর,নিউইয়র্কঃবাংলাদেশিদের ফার্মেসি ব্যবসার যত ব্যাপ্তি ঘটছে তত তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ জমা হচ্ছে। অনেক ফার্মেসির প্রাপ্য লাখ লাখ ডলার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আটকে দিয়েছে। এ সব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, রোগিদের নামে বরাদ্দ ওষুধের ‘রিফিল’ তুলে নেয়া ও মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়া ওষুধ কমদামে এনে তা বিক্রি করা। আবার কোন কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ফার্মেসির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত করে সেগুলোকে সিলগালা করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার সময় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলো এসব ফার্মেসির এ ধরনের কর্মকান্ডকে ‘প্রকাশ্য ডাকাতি’ বলে অভিহিত করেছে।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ফার্মেসির এই অনিয়মে রীতিমত বিস্মিত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, ফার্মেসিগুলোর অর্থ ইন্স্যুরেন্স আটকে দেয়া এবং অনেক ফার্মেসি সিলগালা করে দেয়ার পর তারা আবার নতুন জায়গায় নতুন নামে ফার্মেসি খুলে বসছেন।
এদেশের মানুষের ওষুধের ব্যবস্থা করে থাকে ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো। মেডিকেড বা মেডিকেয়ারের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা রোগির নামে প্রেসক্রিপশন সরাসরি পাঠিয়ে দেন ফার্মেসিতে। এসময় সাধারণত সেই ওষুধের দুই বা তিনটি ‘রিফিল’ তারা দিয়ে থাকেন। ডাক্তারের কাছে বার বার না এসে রোগি যাতে সহজইে ফার্মেসী থেকে সরাসরি ওষুধ তুলে নিতে পারেন তার জন্য কোন কোন ডাক্তার একই ওষুধের আরো বেশি ‘রিফিল’ দিয়ে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক রোগীই এসব ‘রিফিল’-এর ওষুধ ফার্মেসিগুলো থেকে তোলেন না। হয়ত তাদের রোগের উপশম হয়ে গেলে এই ওষুধের আর প্রয়োজন পড়ে না। আবার ডাক্তাররাও অনেক সময় ওষুধ বদল করে অন্য ওষুধ দেন। ফলে আগের ওষুধগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং রিফিলগুলিও অব্যবহৃত থেকে যায়। কিন্তু রোগিরা রিফিলগুলো ব্যবহার না করলেও অধিকাংশ ফার্মেসি তাদের নামের এই ‘রিফিল’-এর ওষুধ সুকৌশলে তুলে নিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কাছে অর্থ দাবী করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, বাংলাদেশি মালিকানাধীন অধিকাংশ ফার্মেসি হরহামেশাই এ ধরনের কাজ করছে। এমনকি যে রোগি মাসের পর মাস যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকেন তাদের নামেও ‘রিফিল’ নেয়া হয়। যা গর্হিত অপরাধ। আর এটি আমাদের তদন্তে ধরা পড়ার পর আমরা হাজার হাজার ডলার জরিমানা করি।
তিনি বলেন, তদন্তকালে রিফিল-এর ওষুধ নেয়ার সময় ফার্মেসিগুলোর রশিদে করা রোগির সাক্ষরেও মিল পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে ফার্মেসিগুলোর যুক্তি হচ্ছে রোগিরা নিজেরা নন, তাদের স্বজনরা এই ওষুধ নিয়ে গেছেন।
চলতি বছরের শুরুতে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার কয়েকটি ফার্মেসিতে এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়ার পর বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রায় সব ফার্মেসিতে সংশ্লিষ্টরা অভিযান পরিচালনা করেন। ‘রিফিল’ তুলে নেয়ার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসে। তারা কয়েকটি ফার্মেসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও পান যা প্রায় অবিশ্বাস্য।
অভিযান পরিচালনাকারী দলের এক সদস্য সাপ্তাহিক আজকালকে জানান, এমনও কিছু ফার্মেসি পাওয়া গেছে যারা মেয়াদ প্রায় উত্তীর্ণ হয়ে আসা ওষুধ কম দামে এনে তা রোগিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সম্প্রতি সিল-গালা করে দেয়া জ্যামাইকা ও জ্যাকসন হাইটসের দুটি বাংলাদেশি ফার্মেসীর নাম উল্লেখ করে তারা জানান এদের বড় অংকের অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।
ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের বাংলাদেশি মালিকানাধীন কয়েকটি ফার্মেসির বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। এসব এলাকায় কোন কোন ফার্মেসি সিলগালা করা না হলেও তাদের একাউন্ট স্থগিত রাখা হয়েছে। তাদের অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
জ্যামাইকার অধিবাসী আশিকুর রহমান বলেন, আমি গত বছর তিন মাসের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম। জ্যামাইকার একটি ফার্মেসিতে আমার ওষুধের রিফিল ছিল। কিন্তু আমি এসে দেখি আমার সব রিফিল শেষ। পরে বিষয়টি ফার্মেসির মালিককে জানালে তিনি আমার কাছে ভুল স্বীকার করেন এবং বলেন ‘এটি কম্পিউটারের ত্রুটি’। পরে অবশ্য আমাকে রিফিলগুলোর ওষুধ দেয়া হয়।
জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ডাক্তার প্রায় সময় আমার নামে রিফিল পাঠান। আমি অনেক সময় তা নিই না। কিন্তু মেট্রোপ্লাস থেকে পাঠানো বিলে দেখতে পাই আমার সব ওষুধ তুলে নেয়া হয়েছে। এ এক ধরনের ডাকাতি বলে তিনি মন্তব্য করেন