নিউইয়র্কে আনন্দ-বেদনায় আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কে ব্যতিক্রমী সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণ করা হলো বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত জগতের অন্যতম পুরোধা ও জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে। সদ্য পরলোগত এই শিল্পীর স্মরণে গত ৯ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসের শিল্পী আর অতিথিরা আনন্দ-বেদনায় আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করেন। প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় শো টাইম মিউজিক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। খবর ইউএনএ’র।
সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে ‘ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’ শীর্ষক এই আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিল্পী চন্দন চৌধুরী, তানভির শাহীন, শাহ মাহবুব, চন্দ্রা রায়, কামরুজ্জামান বকুল, কৃষ্ণা তিথি, রোক্সানা মির্জা, রানো নেওয়াজ, রায়ান তাজ, শামীম সিদ্দিকী, জোহান আলমগীর, জনি, রিপন, রূপা, রাজিব চক্রবর্তী, সৌরভ, মাধব, জনি, রিচার্ড, মায়েস্ট্রো জোহান, টিপু প্রমুখ শিল্পী ছাড়াও আমানত হোসেন আমান প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন সংস্কৃতি কর্মী শিবলী সাদেক।
অনুষ্ঠানের নতুন-পুরাতন শিল্পীদের কন্ঠে উঠে আসে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘এই তারাভড়া রাতে’, ‘এই তুমি কেনো এত অচেনা হলে’,‘এক আকাশের তারা তুই এক গুনিস নে’, ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘রাতে ঘুম নেই আমার চোখে’, ‘আমি ভুল করেছি তোমায় ভালোবেসে’, ‘রূপালী গিটার’,‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসী’, ‘ভাঙা মন নিয়ে তুমি আর কেঁদোনা’, ‘ওড়াল দেবো আকাশে’, ‘বোঝে না কেউ আমার ব্যাথা’ প্রভৃতি গান।অনুষ্ঠানের বাধ্যযন্ত্রে ছিলেন নাঈম, রিচার্ড, জোহান, পার্থ ও রিপন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, ভয়েস অব আমেরিকা’র নিউইয়র্ক প্রতিনিধি আকবর হায়দার কিরণ, ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, জেবিবিএ’র সভাপতি শাহ নেওয়াজ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, কাজী আজম, জাকারিয়া চৌধুরী, মাকসুদুল হক চৌধুরী, আহসান হাবিব, লিটন চৌধুরী, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নূরুল আজিম, বাবু, ভার্জিনিয়া থেকে আগত আকতার হোসেন এবং আয়োজক শো টাইম মিউজিক-এর সত্ত্বাধিকারী আলমগীর খান আলম।
অন্যদিকেএকাধিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বস্ত্রীক এবং কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা মধ্যরাত ১২টার দিকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সাদিয়া ফয়জুন্নেছা বলেন, আইয়ুব বাচ্চুর মতো শিল্পীকে আমরা আর পাবো না। তবে নতুন প্রজন্মকে তার গাওয়া গান-কে আরো এগিয়ে নিতে হবে। তিনি আশির দশকের এক স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন আইয়ুব বাচ্চু যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে নিউইয়র্কের একটি দোকান থেকে একটি গিটার কিনতে যান, কিন্দু গিটারটির দাম অনেক বেশী হওয়ায় দোকানদার তাকে গিটারটি দিতে চাননি। পরবর্তীতে আইয়ুব বাচ্চু শুধু একবার বাজিয়ে দেখার অনুরোধ জনানোর পর দোকানদার গিটারটি তাকে দিলে তিনি বাজাতে থাকেন এবং তার গিটারের শব্দে আশপাশের মানুষ দোকানটির সামনে সমবেত হয়ে মুগ্ধ হয়ে তা উপভোগ করতে থকেন। এই অবস্থায় দোকানদার আইয়ুব বাচ্চুকে গিটারটি উপহার দেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা গভীর শ্রদ্ধায় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু-কে স্মরণ এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। গান পরিবেশনের সময় শিল্পীরাও শ্রদ্ধাভরে মরহুম আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি চারণ করে তার গাওয়া গান পরিবশেন করেন। তবে অনেক শিল্পীর কন্ঠে ‘আইয়ুব বাচ্চু’র মতো খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় শিল্পীর গান অনেকের কন্ঠে বেমানান ছিলো বলে একাধিক দর্শক-শ্রোতা মন্তব্য করেন। আর অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতাও ছিলো কম।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে উপস্থাপনায় ছিলেন শায়লা ইফতেখার ও শিবলী সাদেক। উদ্বোধনী পর্ব উপস্থাপনা করেন শিল্পী সেলিম ইব্রাহীম। টাইম টেলিভিশন অনুষ্ঠানের বিশেষ অংশ সরাসরি সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানটির অন্যতম স্পন্সর ছিলো নিউইয়র্কের শিফট টেকনোলজি সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে আয়োজিত এক কনসার্টের মধ্য দিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে সেই ১৯৯৮ সালে। এরপর ২০০০, ২০০৪, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে শো টাইম মিউজিকের ব্যানারে নিউইয়র্কে আয়োজিত একাধিক এলআরবি’র কনসার্ট হয়েছে। এসব কনসার্টে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু লাইভ গান পরিবেশন করেছেন। আর এসব কনসার্টের মধ্য দিয়ে খুব কাছ থেকে প্রিয় শিল্পী-কে দেখা ও গান শোনার সুযোগ পেয়েছিলেন নিউইয়র্কের ভক্তরা।