নিউইয়র্কে বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পীসহ গ্রেপ্তার ৩০
নিউ ইয়র্কঃ নিউ ইয়র্কে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটানায় বাংলাদেশি এক সঙ্গীতশিল্পীসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত এক সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।
গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন। তথাকথিত সঙ্গীতশিল্পী শম্পা জামানের বাসা কুইন্সের জ্যামাইকায়। নিজের কোনো মৌলিক গান না থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করে আসছিলেন। ব্যক্তি-বিশেষের অনুরোধে বিভিন্ন মঞ্চে গান গাইলেও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন শম্পা জামানকে জনপ্রিয় বাঙালি শিল্পী হিসাবে উপস্থাপন করেছে। সঙ্গীতশিল্পী পরিচয়ের আড়ালে মূলতঃ তিনি ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য চুরি করে ক্রেডিট কার্ড উৎপাদন করতো। এরপর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে সেসব কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতো। আর এই কেনাকাটার মূল কাজটি করতেন কথিত সঙ্গীতশিল্পী শম্পা জামান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে এই চক্রটিকে অনুসরণ করছিল। হাতে-নাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের দখল থেকে ক্রেডিট কার্ড তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

শিল্পী শম্পা জামান ছবিঃ বাংলাপ্রেস
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী একাধিক শিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী অভিযোগ করে বাংলা প্রেস’কে বলেন, শম্পা জামান প্রবাসে শিল্পী সমাজের জন্য একটি কলঙ্ক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার পরনের পোষাক পরিচ্ছদ একেবারেই অসামঞ্জস্য দেখা যেত। যা বাঙালি সমাজে একেবারেই বেমানান, অন্য শিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীরা তার পোষাক দেখে লজ্জা পেত। তিনি পাকিস্তানি কমিউনিটিতে গজল গাইতেন। সেই সুবাদে একজন পাকিস্তানি বয়ফ্রেন্ডও রয়েছে। এ বিষয়টি তার স্বামীও জানেন। শুধু তাই নয়, গান বাজনার আঁড়ালে শম্পা অসামাজিক কার্যকলাপ ও দেহব্যবসা চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শম্পা জামান উৎপাদিত ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বেশিরভাগ সময় বারবারি, শ্যানেল, ব্লুমিংডেলস, নর্ডস্ট্রম, অ্যাপল, হোম ডিপো, রেস্টুরেন্ট ডিপোসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ড স্টোর ও শপিং মলে কেনাকাটা করতেন। নামী-দামী পণ্যের পাশাপাশি তিনি গিফট কার্ড কিনতেন। আর সবকিছুই কিনতেন ‘বস’ মোহাম্মদ রানার নির্দেশনায়। পুলিশ বিভিন্ন সময় পিছু নিয়ে ও ওৎ পেতে থেকে শম্পা জামান ও তার বস রানাসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- ইন্দরজিত সিং (২৪), রণভি সিপারসাদ (২৫), সোনম কুকরিজা (২৬), রণজিৎ সিং (৩০), বলবিন্দর সিং (৩৬), অংকিত চাধা (২৯), জন ডো (বয়স অজ্ঞাত), কমলজত সিং (২৪), সিঙ্গারা সিং (২৮), সুখজিন্দার সিং (বয়স অজ্ঞাত), তাজিন্দার সিং (২৫), তানভির সিধু (২৫), মহসীন খান (৫৯), আলেজান্দ্রো গয়েসো (৪৬), গৌরব চাবরা (৩৩), প্রদীপ গ্রোভার (৪৬), ক্যাপ্টেন সিং (২০), বারিন্দার সিং (২৭), হিলদা কোয়াডরোজ (২৯), সলোমান ক্যাস্টিলো (২৬), মো. ইকবাল (৩০), মো. হাসান (৫৬), আদেল নাবিল (৫১), জামি রিওস (৫২), জাভেদ মালিক (৬০), গুরবাচন সিং (৫৫) প্রমুখ।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের অপরাধ সংঘটনের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিভিন্ন ও দীর্ঘ মেয়াদে সাজা হতে পারে।ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশি এ সঙ্গীতশিল্পী গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আলোচনার ঝড় বইছে।