নিউইয়র্কে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানালো ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশন
মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল দিসগুলোর কথা আবেগঘন কন্ঠে বর্ণনা করলেন জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। উপস্থিত শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠলো সেসব কথা শুনে। জানাগেলো মুক্তিযোদ্ধাদের নানান আকুতি আর আক্ষেপ। বাংলাদেশের ৪৮ তম মহান বিজয় দিবস দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকার নিরব পার্টি সেন্টারে গত ১৫ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশন মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। এসময় বেশ ক’জন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেষ্ট প্রদান করে সম্মাননা জানান হয়। ওই অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন সম্মাননা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মতিন, মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বশির উদ্দিস, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা।
তারা যুদ্ধকালীন স্মৃতি বর্ণনা করে আক্ষেপের সুরে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের বর্তমান যে প্রক্রিয়া তা ভুল। তারা জানান, বর্তমান যে তালিকা তার ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ঠিক আছে। অর্থাৎ তালিকায় বর্তমানে যে এক লাখ ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা আছে এর প্রকৃত সংখ্যা কোন অবস্থাতেই ৮০ হাজারের বেশি হবার কথা নয়।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আমরা অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করেছিলাম দেশে যাতে সত্যিকারের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এক মানবিক মহাসমাজ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের নামে দুটি পক্ষ আছে। তারা পরস্পরের সমালোচনা, আর একে অপরের প্রতি সংহিস আচরনের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। দেশে কোন পক্ষই কারো প্রতি সুবিচার করছে না। আমরা এর অবসান চাই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকতে পারে কিন্তু তারা যেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানের স্বার্থে এক সুরে কন্ঠ মিলিয়ে কথা বলেন।
আয়োজক সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ এ ইসলাম মামুনের সভাপতিত্বে এবং উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোজাফ্ফর হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল’র প্রেসিডেন্ট প্রবাসী আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার, আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইনকের প্রেসিডেন্ট আবদুস শহীদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম বাদশা, মামুন’স টিউটরিয়ালের প্রিন্সিপাল মূলধারার ম্যাথ টিচার শেখ আল মামুন, টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, মার্কস হোম কেয়ারের ব্রঙ্কস শাখার ম্যানেজার ও বিশ্বনাথ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ইউএসএ’র উপদেষ্টা আলমাস আলী, মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা হিউম্যান সাপোর্ট করপোরেশনের সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মো: সোলায়মান আলী, সিপিএ আহাদ আলী, সিপিএ জাকির চৌধুরী, অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান্সের চেয়ারম্যান হাসান আলী, উদযাপন কমিটির মমতাজ উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, মতিন সরকার, আবুল খায়ের আখন্দ, খবির উদ্দিন ভূইয়া প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জালাল আহমেদ এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন স্বপন পাল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
বক্তারা বলেন, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বোল ইতিহাস। তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ছড়িয়ে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাদের সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে তারাই এদেশের বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে। বয়ে আনবে বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সম্মান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে অভিহিত করে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এজন্য পুরো জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
বক্তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে আওয়ামীলীগের একজন নেতাও সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি এ কথা বলার সাথে সাথে অনুষ্ঠানস্থল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম বাদশা ও প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মো: সোলায়মান আলী, আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইনকের প্রেসিডেন্ট আবদুস শহীদ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, যুবলীগ নেতা রেজা আবদুল্লাহ সহ অন্যান্যরা। পরে ফজলুর রহমান চৌধুরীকে তার বক্তব্য অসমাপ্ত রেখেই আসনে ফিরে আসতে হয়।
পরে বেশ ক’জন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এসময় সম্মাননা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা আবেগ আপ্লুত হয়ে আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ এ ইসলাম মামুন অনুষ্ঠানে আগত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়। বাংলাবাজার মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবুল কাশেম এয়াহইয়া দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিভিন্ন কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।