নিউইয়র্ক বিমান বন্দরে আটক ১১ জন
সাবেদ সাথী, নিউ ইয়র্কঃ সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াতকালে গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে দুই ইরাকি শরণার্থী সহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে দুপুর ১টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকরা জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের চার নম্বর টার্মিনালের গাড়ি পার্কিং এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা আটককৃত ব্যক্তিদের মুক্তি চেয়ে নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ দিনের জন্য সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিমানবন্দরে আটক হওয়া দুই ইরাকির একজন হানিদ খালিদ দারওয়িশ মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে দোভাষীর কাজ করেছেন। ট্রাম্প যখন তার নিষেধাজ্ঞার আদেশ জানি করেন তখন ওই ব্যক্তি বিমানবন্দরের ট্রানজিটে ছিল।
ট্রাম্পের আদেশের পর ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদান এই সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি বা ‘গ্রিন কার্ড’ধারীও হন তারাও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে থাকলে আর সেদেশে ঢুকতে পারবেন না।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ কার্যকর করতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। আর শরণার্থীদের বিমানে আটক করায় ট্রাম্প ও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারিকে বাদী করে মামলা করেছে ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আটক হওয়া সাহসী হানিদ খালিদ দারওয়িশ মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছে এবং সামির আলশাওয়ি মার্কিন সেনাবাহিনীকে সহায়তা করায় স্থানীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল ইরাকে। মামলায় শরণার্থীদের পক্ষ নেয়া আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন বলেছে, আইনজীবীরা বেশ কয়েকটি বিমানের যাত্রী হিসেবে কারা আসছেন তার হিসাব রাখছে। তবে কতজন ব্যক্তি এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন সেটা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
শনিবার মিশরের কায়রো থেকে নিউইয়র্কগামী বেশ কয়েকজন ইরাকি যাত্রীকে আটকে দেয়া হয় সেখানে। যদিও তাদের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ ভিসা ছিল তারপরেও তাদের কায়রোতেই আটকে দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিমানবন্দরেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মিশরের এক বিমান বন্দরে কমপক্ষে সাতজন ইরাক ও ইয়েমেন থেকে আসা লোককে বৈধ ভিসা থাকা সত্বেও আমেরিকাগামী বিমানে উঠতে দেয়া হয়নি।
এদিকে, ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান গুগল তাদের ভ্রমণরত কিছু কর্মীকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে বলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করার পর গুগল বলছে, তাদের প্রায় শ’খানেক কর্মী এর শিকার হতে পারে, এবং আদেশটি কার্যকর হবার আগেই তাদেরকেআমেরিকায় ফিরে আসতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বিবিসিকে বলেছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞা সাথে সাথে বাস্তবায়ন শুরুর জন্য কাজ করছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ‘পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত’ সিরিয়ান শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা নিষিদ্ধ করেন।
ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদান- এই ৭টি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে আসা লোকদের ভিসা দেয়া তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসীদের আমেরিকায় ঢোকা’ বন্ধ করতেই এ পদক্ষেপ। কিন্তু ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ প্রায় সাথে সাথেই রাজনীতিবিদ এবং শরণার্থী সংস্থাগুলোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়।