নিজের মেয়েকে নিয়েও ‘বিব্রতকর’ মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প

279

নিউজবিডি ইউএসডেস্কঃ

এবার মেয়েকে নিয়ে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিব্রতকর মন্তব্যের রেকর্ডিং প্রকাশ হয়েছে। নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের অডিও ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় ও নিন্দার ঝড়ের মধ্যে সিএনএন কিছু পুরোনো রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে, যাতে

নিজের মেয়ে ইভানকাকে নিয়েও তিনি বেফাঁস মন্তব্য করেছেন।
২০০৪ সালে এক রেডিও সাক্ষাৎকারের সময় রেডিও জকি ট্রাম্পের মেয়েকে ‘অ্যা পিস অব অ্যাস’ বলে উল্লেখ করলে তিনি তাতে সায় দেন। মেয়ে ইভানকাকে নিতম্বের সঙ্গে তুলনা করলেও তিনি বিন্দুমাত্র বিব্রত না হয়ে উত্তর দেন ‘হ্যা’।
২০০৫ সালে নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের আপত্তিকর মন্তব্যের রেকর্ডিং শুক্রবার প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। এ নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। অনেকে তার বদলে প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার বলেছেন, হিলারিকে ভোট না দিলেও তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না।
২০০৪ সাল থেকে শুরু করে বেশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ কিছু রেকর্ডিং একসঙ্গে প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে এমন সব কথা বলতে শোনা গেছে ট্রাম্পকে, যা শুনলে অনেকে বিব্রত হবেন। যেমনটি বিব্রত হয়েছেন ট্রাম্পের স্ত্রীও। তার সৌন্দর্য নিয়ে ট্রাম্প এমনভাবে কথা বলেছেন, যা নিয়ে খোমামেলা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেলানিয়া ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় রোববার রাতে দ্বিতীয়বার টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হবেন ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন। এ বিতর্কে ট্রাম্প নিঃসন্দেহে তার বেফাঁস মন্তব্যের জন্য হিলারির আক্রমণের শিকার হবেন। যদি এ বিতর্কেও তিনি হিলারির কাছে হেরে যান, তবে নির্বাচনে জয় তার জন্য দুঃস্বপ্নই হয়ে যাবে।
১১ বছরের পুরনো নারীবিদ্বেষী বক্তব্য ফাঁস হয়ে ব্যাপক সমালোচনায় রয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তার প্রার্থিতাকে আগেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন দলের কেউ কেউ। তবে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) নারীবিদ্বেষী অডিও সাক্ষাৎকারটি ফাঁস হওয়ার পর নতুন করে রিপাবলিকানদের মধ্যে বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে ৩০ জনেরও বেশি রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। অবশ্য, ট্রাম্প নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় রিপাবলিকান পার্টির ভেতরকার বিভাজন জোরালো হয়ে উঠেছে। তবে আদৌ কি ট্রাম্পের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে? আর যদি ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেই নেন তাহলেই বা কী হবে? আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পকে এ মুহূর্তে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরানোর সম্ভাবনা নেই, তবে অসম্ভবও নয়।
যে অডিও সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন করে তোপের মুখে ট্রাম্প
১১ বছর আগে দেওয়া একটি নারীবিদ্বেষী বক্তব্য গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ফাঁস হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। ২০০৫ সালে ধারণ করা অডিও সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ফাঁস করে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি-র উপস্থাপক বিলি বুশকে টেলিফোনে ওই ‘বিতর্কিত’ সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। ফাঁস হওয়া অডিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘তারকারা নারীদের নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে আর এতে ওই নারীরাও বাধা দেবে না।’ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এক বিবাহিত অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তার আগ্রহের কথা জানান। তাছাড়া, মিস ইউনিভার্সসহ কয়েকটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক ট্রাম্প সুন্দরী নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাও জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সেই মন্তব্য ফাঁস হবার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। শনিবার ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের জন্য এক ভিডিও বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যা বলেছি এবং করেছি, তার জন্য আমি অনুশোচনায় ভুগছি। যারা আমাকে কাছ থেকে চেনেন, তারা জানেন, এসব কথা আমার সঙ্গে যায় না। আমি যা বলেছি, আমি ভুল ছিলাম, এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

trump-dauther
শুক্রবার ট্রাম্পের অডিও সাক্ষাৎকারটি ফাঁস হবার পর পরই বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা জানিয়ে দেন তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। ট্রাম্পের রানিং মেটকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। এরইমধ্যে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া রিপাবলিকান নেতার সংখ্যা ৩০ জন ছাড়িয়েছে। জন ম্যাককেইন, পল রায়ান, কন্ডোলিৎজা রাইসসহ অনেক সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জন ম্যাককেইন বলেছেন,ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণে ‘তার প্রতি শর্তসাপেক্ষে সমর্থন দেওয়াও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে’। কন্ডোলিৎজা রাইস বলেন ‘যথেষ্ট হয়েছে! ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত নয়। তার সরে দাঁড়ানো উচিত’। মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পল রায়ান জানান,তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে উইসকনসিনের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবেন না। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য শুনে তিনি ‘অসুস্থবোধ করছেন’। উতাহ অঙ্গরাজ‌্যের রিপাবলিকান গভর্নর গারি হারভার্ট জানান,তিনি ট্রাম্পের সমাবেশে যাবেন না, তাকে ভোটও দেবেন না।
ট্রাম্পকে ঠেকাতে চলছে রিপাবলিকান নেতাদের তৎপরতা
বেশ কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার রাতে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি (আরএনসি) এর একটি বৈঠক হয়েছে। ট্রাম্পকে কিভাবে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় সেই প্রশ্নে বেঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও সমাধান ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয় বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
ট্রাম্পট্রাম্পকে সরানো কি আদৌ সম্ভব?
ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া সংকটের ব্যাপারে গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।  তারা বলছেন, নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি থাকায় এবং কোথাও কোথাও আগাম ভোটগ্রহণের কারণে ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়া এবং কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করার সম্ভাবনা নেই। তবে ট্রাম্পকে নির্বাচন থেকে সরানোটা অসম্ভব নয় বলেই মত দিয়েছেন তারা।
রক্ষণশীল আইনজীবী জিম বপ এক্ষেত্রে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি (আরএনসি)-এর গঠনতন্ত্রের ব্যাপারটি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আরএনসি-এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মৃত্যু, নিজে থেকে সরে যাওয়া (ডিক্লাইনেশন) বা অন্য কোনও কারণে যদি দলের কোনও পদ শূন্য হয় তবে সদস্যরা ওই পদ পূরণ করতে পারবেন।’                                                                                                                                                     সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের স্থলাভিষিক্ত করতে হলে তার মৃত্যু হতে হবে, নয়তো তাকে অযোগ্য হতে হবে নয়তো তাকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে হবে। তবে কোনও কোনও পর্যবেক্ষক এক্ষেত্রে আরেকটি সম্ভাব্যতার কথা বলছেন। তারা মনে করেন, আরএনসি’র গঠনতন্ত্রে ‘অন্য কারণ’ বলে যে শব্দের উল্লেখ রয়েছে তাকে প্রার্থী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের ভেতর থেকে ব্যাপক বিরোধিতা দেখা গেলে তখন ‘অন্য কারণ’ দেখিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা যেতে পারে।
অবশ্য, জিম বপ মনে করেন, আরএনসি’র নীতিমালায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কিংবা তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি সেই পদে শূন্যতা তৈরি হয়, তখনই কেবল সে শূন্যতা পূরণ করা যাবে। বপের মতে, রিপাবলিকানরা যদি এখন তাদের নিয়মের পরিবর্তন করতে যায় তবে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। ট্রাম্পের সমর্থকদের ভেতরে উত্তেজনা তৈরি হবে।
তাহলে বিকল্প উপায় কি? ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ল-এর অধ্যাপক বিক্রম অমর কল্পনাপূর্ণ এক দৃশ্যপটের বর্ণনা দিয়েছেন। তার মতে, নির্বাচনে জয়লাভের পর নিজেকে অযোগ্য ঘোষণা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ট্রাম্পের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে পারেন রিপাবলিকান নেতারা। অমর বলেন, ’২৫-তম সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নিজেকে অক্ষম ঘোষণা করতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পেন্সকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্টের সকল দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে পারেন।’ অমরের মতে, এটাই এখন রিপাবলিকানদের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়। কেননা, অনেক অঙ্গরাজ্যে ব্যালট পেপার প্রিন্ট হয়ে যাওয়ায় প্রার্থী বদলানোর চেয়ে এভাবে এগুলেই রিপাবলিকানদের জন্য ভালো হতে পারে।
বপও মনে করেন, এ মুহূর্তে প্রার্থিতার বদল ঘটলে তা রিপাবলিকানদের বিপদে ফেলে দেবে এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জন্যই সুফল বয়ে আনবে। আর তাই নির্বাচনের এক মাস আগে স্থলাভিষিক্ত করার জন্য ট্রাম্পের টেকসই বিকল্প এখন রিপাবলিকানদের হাতে নেই।
উল্লেখ্য, ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে জয়ের জন্য ট্রাম্প যখন মরিয়া হয়ে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন, তখন নারীদের নিয়ে তার অশালীন মন্তব্য তাকে প্রচন্ড চাপে ফেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর চাপ বাড়ছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচনে লড়বেন। সরে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্ন ওঠে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.