নির্লজ্জ ভোট ডাকাতি হয়েছে: বঙ্গবীর

250

একাদশ জাতীয় নির্বাচন জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়।

f1f9b21ef6dee41fb761beaaa8128a66-_1

সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতির পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আবার নতুন করে মহাসংকটে নিপতিত হলো। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লোভ দেশ ও দেশের মানুষকে আজকের অবস্থায় এনে ফেলেছে। ৩০ শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা যে নির্লজ্জ ভোট ডাকাতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা এ জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এতে বলা হয়, আপনারা জানেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন এ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। ফলে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং অন্যরাও খুবই নগণ্য ভোটে গত সংসদে নির্বাচিত হয়, যা ছিল ন্যায় ও সত্যের বিচারে অবৈধ। এ বছর নানা টানাপোড়েন থাকলেও দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংবিধান এবং ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতাকে পদদলিত করে এই নির্বাচনকে সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত করেছে। তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে বিরোধী দলের দাবি দাওয়া ও প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তারপরও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার স্বার্থে আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু সমস্ত আইন-কানুন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা ও পুলিশি হয়রানি করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সব রকমের অপচেষ্টা করা হলেও নির্বাচনী মাঠে থাকার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। পদে পদে গ্রেফতার, নির্যাতন, ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে আমাদের কর্মী সমর্থকেরা মাটি কামড়ে নির্বাচনী মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে।

বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় বাধা, হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ও পুড়িয়ে ফেলাসহ এহেন কোনো কাজ নেই যা সরকারি দল করেনি। জনগণ আশা করেছিল, সেনাবাহিনী নামার পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে, কিন্তু তার উল্টো হয়েছে।

উপুর্যপরি ভোটের আগের রাতে সকল কেন্দ্রে সরকারদলীয় কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলেমিশে প্রতি কেন্দ্রে অর্ধেক ভোট, কোনো কোনো কেন্দ্রে তার চেয়েও বেশি নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্স ভরে রাখে। যে কারণে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ায় বেলা ১০-১১টার পর কোনো ভোটার ভোট দিতে পারেনি, কারণ তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি দলের ক্যাডারের ভূমিকা পালন করে। সব কিছু মিলিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটের মৃত্যু ঘটায়, যা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংগঠিত হওয়া অসম্ভব। মানুষের ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে দেশের মানুষের যে ঘৃণা আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর কন্যা অর্জন করলেন তা দেখে আমরা মর্মাহত এবং আতঙ্কিত। যখন স্বাভাবিক পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ হয় তখনই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। তাই দেশের ও মানুষের স্বার্থে এই নির্লজ্জ ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি  বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার প্রমুখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.