নেতারা পারেনি, যা পেরেছে ফাতেমা

186

বাংলাদেশ:ইতিহাস মানুষকে স্মরন রাখে তার কর্ম দিয়ে। সেই ইতিহাসই আমাদের সামনে উপস্থাপন করে নবাব সিরাজদৌলাকে, মীরজাফর আলী খানকে। একজন জীবন দিয়ে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, অন্যজন কুখ্যাত হয়ে আছেন সেই একই ঘটনায়। যে কারনে ‘মীরজাফর’ এখন দেশদ্রোহীর প্রতিশব্দে পরিনত হয়েছে। আড়াইশো বছর পর সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। আবারো ফিরে এসেছিল মীরজাফর এবং যার সর্বশেষ রূপ হলো বেগম জিয়া যার তুলনা চলে কেবলই ‘ঘষেটি বেগমের’ সাথে। সেই ঘষেটি বেগম এখন এতিমের টাকা চুরির দায়ে কারাগারে। আর তার সাথে স্বেচ্ছা বন্দীত্ব বরন করেছে তারই সার্বক্ষণিক পরিচারিকা ফাতেমা।কে-এই-ফাতেমা--5a87d125a32b6 বেগম জিয়া ইতিহাসে কতটা সুখ্যাতি পাবেন বা নিন্দিত হবেন সেটি পরে বিবেচ্য, তবে চরম প্রভুভক্তি ও ত্যাগের জন্য মহিমান্বিত হয়ে থাকবে এই ফাতেমা।
বেগম জিয়া কারাগারে যাবার পরে অনেক বিএনপি নেতা টকশোতে এসে ছলছল চোখে তাঁর প্রতি অনুরাগ দেখাচ্ছে। অনেকে তাঁকে মা বলে সম্বোধন করে তাঁর মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনের শপথ নিচ্ছে। এই নেতারা ঘোষনা দিয়েছিল, বেগম জিয়ার জেল হলে তারা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, স্বেচ্ছায় কারাবরণ তো দুরের কথা, বেগম জিয়া কারাগারে যাবার পর সেই নেতাদের টিকিটির দেখাও মিলছে না। অন্যদিকে বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক পরিচারিকা ফাতেমা ঠিকই কারাগারে গেছে। বেগম জিয়ার এই দুর্দিনে অনেক নেতা-কর্মী পালিয়ে গেলেও স্বেচ্ছা বন্দীত্ব মেনে নিয়েছে কাজের মেয়ে ফাতেমা।
জিয়া এতিমখানা মামলায় বেগম জিয়ার সাজার মেয়াদ পাঁচ বছর। যদি জামিন পান তবে অচিরেই তিনি বাড়ি ফিরবেন, নতুবা দীর্ঘ হতে পারে বেগম জিয়ার কারা-জীবন। ফাতেমা কিন্তু আইন-কানুনের কিছুই জানেনা, কতদিন থাকতে হবে এও জানা নেই তার। সম্পুর্ন অনিশ্চিত জীবন জেনেও বেগম জিয়ার কারা-জীবনের সঙ্গী হয়েছে ফাতেমা। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু মামলার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। সেগুলোর রায় যদি বেগম জিয়ার বিপক্ষে যায় তবে সত্যিই বিএনপি নেত্রীর জেল জীবন দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই অনিশ্চত জীবনে বেগম জিয়ার একাকী, নিঃসঙ্গ জীবনে একমাত্র সঙ্গাটি ফাতেমা।
এই প্রসঙ্গে বিএনপি নামক রাজনৈতিক প্লাটফরম সম্পর্কে দু’কথা না বললেই নয়। বিএনপির বলার মতো তেমন কোন অতীত নাই, ইতিহাস নাই, ঐতিহ্য নাই। বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেছিল মেজর জিয়া, এখন সেটিকে মূলধন করছে। বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষনাএক প্রকার জোর বা ছিনতাই করেছে বিএনপি। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও এর আগের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম দেখেছে তেমন অনেকেই এখন বিএনপি নেতা, যাদের সীমাহীন লোভের জোগান দেয়নি আওয়ামী লীগ। এই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতেই এই ভন্ডরা মেজর জিয়ার পক্ষাবলম্বন করে। এদের একটাই নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপুটে নেয়া। এই সুবিধাবাদীরা সময়ের সুফলভোগী, দুঃসময়ে এদের বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে বিএনপি নেত্রীর দুঃসময়ে এটিই ঘটেছে। বাড়ির সামান্য কাজের মেয়েটি যে উদারতা প্রদর্শন করেছে, বিএনপির কোনো স্তরের কোনো নেতা এর ধারে-কাছেও যেতে পারেনি।
আমি স্বীকার করি বা না করি, বেগম জিয়া এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শাসনামলে নানা অসঙ্গতি আছে, দুর্বলতা-দুর্নীতি আছে। তাঁর ছেলেমানুষি নেতৃত্বের সুযোগে তাঁরই  অর্বাচীন পুত্র বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে একেবারে নিশ্চিহ্নের চেষ্টা করেছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে গেলেও সময়ের পরিক্রমায় এ দেশে তাঁরও সমর্থকগুষ্ঠি তৈরী হয়েছে। মীরজাফর মতো বেগম জিয়াও তাঁর ও তাঁর স্বামীর কুকর্মের জন্য নিন্দিত হবেন। তাঁর দুঃশাসনের ফিরিস্তি ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা লিখবেন। তবে ইতিহাস বেত্তারা ফাতেমার এই কারা-জীবন নিয়েও লিখবেন। মনিবের প্রতি এই যে ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অনাগত সময়ে এর অন্যতম উদাহরন হবে ফাতেমা। ফলে ফাতেমা কেবলই একটি নাম নয়, ত্যাগ-তিতিক্ষার মুর্ত প্রতীকও বটে। এভাবেই কাজের মেয়ে ফাতেমা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।(বাংলাদেশ প্রেস)

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.