পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের

504

কলেজের অধ্যক্ষ ও শাখাপ্রধানের পূর্ণ বরখাস্ত, গভর্নিং বডি বাতিল, প্রচলিত আইনে অরিত্রী হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে কলেজের ফটকে অবস্থান নেয়া হবে বলেও তারা জানায়।

aritti-(1)

আজ মঙ্গলবার স্কুলের বেইলি রোড শাখায় আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তারা বলেন, তিন দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা না হলে লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সব পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় স্কুলের ১ নম্বর ফটকের সামনে তারা অবস্থান নেবেন।

ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে আজ দিনভর সেখানে বিক্ষোভ হয়।

রাজারবাগের শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে অরিত্রি অধিকারীর।

মেয়েকে হারিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বাবা দিলীপ অধিকারী।

 দিলীপ অধিকারী বলেন, আমার মেয়েটা পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। কিভাবে কি ঘটে গেল কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার মেয়েটা অকালে এইভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।

তিনি বলেন, অরিত্রি ক্লাস পরীক্ষায় মোবাইলে উত্তরপত্র লিখে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দিয়ে স্কুল থেকে গতকাল আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। আমি স্কুলের প্রিন্সিপালের রুমে দুঃখ প্রকাশ করতে গেলে তারা অরিত্রিকে টিসি দিয়ে দেবে বলে জানান এবং আমাকে অনেক কথা শোনান।

তিনি বলেন, এ সময় আমি মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেলি। অরিত্রি হয়তো আমার ওই কান্না-অপমান মেনে নিতে পারেনি। বাসায় ফিরে সে তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যানের সাথে ঝুলে অাত্মহত্যা করে। বাহির থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও দরজা না খোলায়, দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করি। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্কুল প্রিন্সিপালকেই দায়ী করছে অরিত্রির সহপাঠীরা:

নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, এমনটাই দাবি করেছে অরিত্রির সহপাঠীরা।

তারা বলছে, বাবা-মাকে অপমান করে স্কুল থেকে অরিত্রিকে টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল নাজনীন। যা মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে অরিত্রি।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ করেন।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত সুবর্ণ বলে, আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। অধ্যক্ষের খামখেয়ালির কারণেই মরতে হয়েছে অরিত্রিকে, আমরা তার পদত্যাগ চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অরিত্রির আরেক সহপাঠী বলেন, অরিত্রির মৃত্যুর জন্য প্রিন্সিপালই দায়ী। সে যদি পরীক্ষায় নকল করে থাকে, তাহলে তার ওই কাজের জন্য সে পরবর্তীতে পায়ে ধরে ক্ষমাও চেয়েছে। অথচ তারপরও তার অভিভাবককে ডেকে যাচ্ছে তাই ভাবে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে। টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে কারণে অরিত্রি বাধ্য হয়েছে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে।

টিসির বিষয়টি অস্বীকার প্রিন্সিপালের, তদন্ত কমিটি গঠন:

যদিও অরিত্রিকে টিসি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রিন্সিপাল নাজনীন।

তিনি বলেন, যা ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক। তবে টিসির যে সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। ওই ঘটনায় স্কুলের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আতাউর রহমান (অভিভাবক প্রতিনিধি), তিন্না খুরশীদ জাহান (অভিভাবক প্রতিনিধি, সংরক্ষিত মহিলা) এবং ভিকারুননিসার শিক্ষক ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.