পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা বোলিংয়ের কীর্তিতে ইয়াসির
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর একটা বিশেষ ফোন কল আজ পেতেই পারেন ইয়াসির শাহ্। পাকিস্তানের পক্ষে টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু এ কারণে ধন্যবাদ জানাবেন, তা কিন্তু নয়। ইয়াসির আজ এই রেকর্ডে যাঁর নামের পাশে বসেছেন, সেই ইমরান খানই যে এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। দুবাই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়াসির নিয়েছেন ৬ উইকেট। ১৮৪ রান খরচে ম্যাচে ১৪ উইকেট তাঁর। ১৯৮২ সালে লাহোর টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন ইমরান, ১১৬ রান খরচায়। ইমরানের সেই কীর্তি ছোঁয়ার ম্যাচে পাকিস্তানকে ইনিংস ও ১৬ রানে জিতিয়েছেন ইয়াসির।
এই টেস্টে নিউজিল্যান্ড হারতে চলেছে, তা অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কৌতূহল ছিল ইয়াসির কী করেন, তা নিয়ে। প্রথম ইনিংসে ‘একটুর জন্য’-র আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে। ৮ উইকেট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষে ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড করা হয়নি। আবদুল কাদির আর সরফরাজ নওয়াজের যে ইনিংসে ৯ উইকেট আছে। ইয়াসিরের সামনে তখন হাতছানি ছিল ম্যাচে পাকিস্তানের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ার। দ্বিতীয় ইনিংসে রেকর্ড ছুঁতে ৬টি আর ভাঙতে ৭টি উইকেট দরকার ছিল তাঁর।
আগের দিন নিউজিল্যান্ডের ২ উইকেটের দুটোই তুলে নিয়ে ইয়াসির সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করে তোলেন। যদিও নিউজিল্যান্ডও দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ২ উইকেটে ১৩১ রানে দিন শেষ করে তারা। আজ দিনের সপ্তম ওভারে আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান ল্যাথামকে ফিফটির পরপরই হাসান আলী তুলে নেন। অন্য অপরাজিত ব্যাটসম্যান রস টেলর (৮২) আরও কিছুটা প্রতিরোধ করে ফিরে যান বিলালের বলে। টেলরের ক্যাচটা ইয়াসিরই ধরেন।
দিনের ২ উইকেট পড়ে গেছে, তবু ইয়াসিরের উইকেটসংখ্যা বাড়েনি! ইয়াসির এবার ওয়াটলিংকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের উইকেটসংখ্যা নিয়ে গেলেন ১১তে। কিন্তু গ্রান্ডহোম হাসান আলীর শিকার হলে শঙ্কা জাগে, ইয়াসিরের রেকর্ডটা হয়তো হচ্ছে না। দিনের প্রথম ৪ উইকেটের ৩টিই যে তাঁর নয়! নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ২৭০। ইনিংস ব্যবধানে হারটা ভালোমতোই চোখ রাঙাচ্ছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের চেয়ে বেশি টেনশনে তখন হয়তো ইয়াসিরই!
রেকর্ড গড়তে হলে যে শেষ ৪ উইকেটের সবই তাঁর চাই। ইশ সোধিকে বোল্ড করে এক ডজন উইকেট পূরণ করেন। কিন্তু ‘ঝামেলা’ করে ফেলেন হাসান। পাঁচে নেমে একপ্রান্ত আগলে রাখা নিকোলসকে বোল্ড করে দিয়ে। রেকর্ড ভাঙা আর হচ্ছে না ইয়াসিরের, তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়। সতীর্থদের কেউ আর এক উইকেট নিলে রেকর্ডও ছোঁয়া হবে না, এমন সমীকরণের সামনে তখন তিনি।
ইয়াসির বেশি ঝামেলায় গেলেন না। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে একই ওভারে তুলে নিয়ে ফুটবলারদের মতো দৌড়ে ঘাসের জমিনে বুক পেতে দিলেন। ইমরান খানের পাশাপাশি পাকিস্তানের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডে নাম উঠে গেল ইয়াসিরের। এটা তাঁর প্রাপ্যই ছিল। আগের দিন ২১ বলের মধ্যে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন, সারা দিনে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ১৯৯৯ সালে অনিল কুম্বলে সর্বশেষ টেস্টের কোনো এক দিনে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। টেস্টে এক ইনিংসে ১০ উইকেট দ্বিতীয় নেওয়ার দ্বিতীয় কীর্তি সেটি। ইয়াসির দুই ইনিংস মিলিয়ে হলেও একই দিনে নিলেন ১০ উইকেট। দুবাই টেস্ট শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল ইয়াসির শাহ্র টেস্ট।
প্রথম টেস্ট মাত্র ৪ রানে হেরে যাওয়ার পর দলকে দারুণ এক জয় দিয়ে সিরিজে ফিরিয়ে আনলেন ইয়াসির। তৃতীয় টেস্ট হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী।