পুলিশের নাকখতের বদলা নিতে বদলে যান আদিল
জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় কাঁদছে ভারত। গোটা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছেন আদিল আহমেদ দার, যিনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, জইশ-এ মোহাম্মদের সদস্য।
আদিল কিভাবে জইশ-এ মোহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত হলেন, ফিরিস্তি দিয়েছেন তা মা-বাবা।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা খবরে বলা হয়, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদিন আদিলকে ঘিরে ধরে পুলিশ। প্রচণ্ড মারধর করে। তারপর নাকখত দেয়ায়। নাকখত দিতে দিতেই তাকে ঘোরানো হয় পুলিশের জিপের চার পাশে, বছর তিনেক আগে। ওই ঘটনাই ক্ষেপিয়ে তুলেছিল পুলওয়ামার আত্মঘাতী আদিল আহমেদ দারকে বলে জানিয়েছেন তার মা ও বাবা।
তাদের বক্তব্য, আদিল ছোটবেলায় এমন ছিল না। স্কুলে যেত, আসত। মোটামুটি শান্ত স্বভাবেরই ছেলে। কিন্তু, ওই ঘটনাই তাকে রাগিয়ে দিয়েছিল।
পুলওয়ামার ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কাকাপোরায় আদিলের বাড়ি। তার স্কুল ছিল হাঁটা পথে বড়জোর ২ কিলোমিটার দূরে। আদিলের বাবা গুলাম হাসান দার বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করেন হরেক রকমের জিনিস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শুক্রবার আদিলের বাবা বলেছেন, ‘একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ও (আদিল) স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে পুলিশ ওকে ধরে। অনেকক্ষণ আটকে রাখে। প্রচণ্ড মারধর করে। নাকখত দেয়ায়। নাকখত দিতে দিতে ওকে পুলিশের জিপের চার পাশে ঘোরানো হয়। এতে ও খুব অপমান বোধ করেছিল। মাঝেমধ্যেই ওই ঘটনার কথা বলত আমাদের। পুলিশ ওর সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করল, তা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন করত আমাদের।’
গুলাম হাসান জানিয়েছেন, তিন বছর আগেকার ওই ঘটনার পর থেকেই অনেক বদলে গিয়েছিল আদিল। তার স্বভাবটাও খুব রুক্ষ হয়ে গিয়েছিল।
কেন পুলিশ তাকে ধরে মারধর করেছিল— এমন প্রশ্নে গুলাম হাসান বলেন, ‘স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আদিল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়েছিল। কাজটা যে ও খুব বুঝেসুজে করেছিল, তা মনে হয় না। কিন্তু, তার জন্য ওর কপালে যা জুটেছিল, তা ওকে খুব চটিয়ে দিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই বলত, ওসব দলে ভিড়ে যাবে।’
আদিলের মা ফাহমিদা বলেন, ‘ওই ঘটনায় ও খুব রেগে গিয়েছিল। সব সময় চাইত বদলা নিতে। আমি সব সময় চাইতাম ও ওসব সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। বোঝাতাম। আমি ওকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু, পারিনি।’
স্কুলছুট হয়েই আদিল নাম লিখিয়েছিল জইশ-ই মোহাম্মদে। সেখানে তার আরও দু’টি নাম ছিল। ‘আদিল আহমেদ গাড়ি তাকরানেওয়ালা’ ও ‘ভাকাস কম্যান্ডো অফ গান্ডিবাগ’।
পরিবারের লোকজন ও গ্রামের পড়শিরা শুক্রবার দেহ ছাড়াই আদিলের দাফন সেরেছে। তবে, কাকাপোরার সেই গ্রামে যাতে বাইরের লোকজন যেতে না পারেন, ফের অশান্তির আবহ তৈরি না হয়, সেজন্য কাকাপোরার কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আটোসাঁটো রাখা হয়েছিল।