পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা

188
নিউজবিডিইউএস:জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে এবার পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেছে ৫৭ মুসলিম দেশের জোট ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে বাকি বিশ্বকেও ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর অধিকৃত রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।oic-ankara-131217-1293329549
গতকাল বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির জরুরি সম্মেলনে এক বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্বের নেতারা এই ঘোষণা দেন। এর আগে সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে মুসলিম বিশ্বের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেরুজালেম ইস্যুতে ওআইসি চুপ থাকতে পারে না।

গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশও তিনি দেন। ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে নামে ফিলিস্তিনিরা। মুসলিম বিশ্বেও বিক্ষোভ করে জনতা। ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

গতকাল বিবৃতিতে ওআইসির ঘোষণায় আরো বলা হয়, ৫৭ সদস্যের এই জোট শুধুই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ওপর ভিত্তি করে সমন্বিত শান্তিপ্রক্রিয়ার ওপর অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে।
একই সঙ্গে ‘ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সিদ্ধান্তের পর সব দায় ট্রাম্প প্রশাসনের বলেও ঘোষণা দেয়। বিবৃতি বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, এই নগরীর (জেরুজালেম) আইনগত মর্যাদার পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যেই এই বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও এর আইনি ভিত্তি নেই। ’

ঘোষণায় আরো বলা হয়, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ট্রাম্প উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সব শান্তিপ্রচেষ্টা ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করেছেন এবং ইসরায়েলের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ওআইসি জানায়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে তারা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিপ্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রত্যাহারের ঘোষণা হিসেবে নিয়েছে।

অন্যদিকে এবার ওআইসির বিবৃতিতে পূর্ব জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো বটে, তবে এ স্বীকৃতি বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি।

আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, এবারের ওআইসি সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফিলিস্তিনি, আরব ও মুসলিমরা শান্তির প্রতি অঙ্গীকার অব্যাহত রাখতে চায়।

এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন। তিনি মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সে ইস্যুতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। বলেন, ওআইসি আমেরিকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছে এবং তাদের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছে।

গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এর এক সপ্তাহের মাথায় সম্মেলনে ওআইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করা হলো। সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর বাইরে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বৈঠকে অংশ নেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ওআইসির চেয়ার রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ওআইসির এই জরুরি সম্মেলন ডাকেন। গতকাল সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে এরদোয়ান ইসরায়েলকে দখলদার ও সন্ত্রাসী অ্যাখ্যা দেন এবং এসব কর্মকাণ্ডের ‘পুরস্কার’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েল যত সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছে, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশটিকে সেসব কর্মকাণ্ডের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। ’

আরব নেতাদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন আর ন্যায়ের প্রতি যেসব দেশের শ্রদ্ধা আছে, তাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই, দখলে থাকা জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিন। ’

৫৭ সদস্যের এ সংস্থার অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র সৌদি আরব সম্মেলনে শীর্ষপর্যায়ের কোনো নেতাকে পাঠায়নি, বরং ঊর্ধ্বতন এক পররাষ্ট্র কর্মকর্তাকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে দায় সেরেছে।

সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং সব সময় সেটাই থাকবে। এর অন্যথা হলে শান্তি থাকবে না। ’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ইহুদিবাদী আন্দোলনের উপহার’ হিসেবে এমনভাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, যেন তিনি ‘একটা আমেরিকান শহর দিয়ে দিচ্ছিলেন’—এমন মন্তব্য করেন আব্বাস। সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি।

ওআইসির সুদৃঢ় অবস্থান চায় বাংলাদেশও : ওআইসির ষষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই বৈরী পদক্ষেপে ওআইসি দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের অবশ্যই আল কুদস (জেরুজালেম) বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত ওআইসির বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে নিবিষ্টভাবে এগিয়ে যেতে হবে। ’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই জরুরি সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোরালো বার্তা পৌঁছে দেবে যে আমরা ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে তাদের পেছনে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও শক্তি জোগাব। ’

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের কথিত রাজধানী হিসেবে মার্কিন ঘোষণার বিপক্ষে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রহসনের সম্মুখীন ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার গঠনমূলক ও আশাব্যঞ্জক ভূমিকা আহ্বানের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে শামিল হয়েছেন।

হামিদ-এরদোয়ান বৈঠক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আরো সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল ইস্তাম্বুলে কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে ওআইসি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এরদোয়ান এই আশ্বাস দেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। পরে রাষ্ট্রপতি সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আহমদ আল-বশিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সূত্র : বাসস।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.