পৃথিবীব্যাপী নতুন বছর বরণ শুরু

320

নতুন বছর মানে নতুন শুরু, পুরোনোকে পিছে ফেলা। আগের বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব ফেলে নতুন স্বপ্নে গা ভাসিয়ে দেওয়া। পৃথিবীব্যাপী এক উৎসব ইংরেজি নতুন বছর বরণ বা থার্টি ফার্স্ট নাইট। যদিও সময়ের হিসাবে রাত বারটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বছরের শুরু। ইংরেজি নববর্ষ হলেও পৃথিবীর এ মাথা ও মাথা সব দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর মানুষেরা মেতে ওঠেন অন্য এক আনন্দধারায়।

sunset

অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যক্তিগত এবং যৌথভাবে ইংরেজি বর্ষবরণের আয়োজন থাকে। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন গিয়ে নতুন বছর বরণ করে নেন অনেকে। অভিজাত হোটেলগুলো সাজে আলোকসজ্জায়।

সবার আগে বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানায় প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। দ্বীপের পর্যটকদের ভিড়ে উল্লাসে-উদ্যমে আকাশে আলোর ফুলঝুড়ি, এমন দৃশ্যই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাসছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও।

তবে এসব দ্বীপে নতুন এক শঙ্কাও আছে আগামী দিনগুলোতে, বিশেষ করে এ বছরে। জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে এবারে অনেকটা নিষ্প্রভ বলা যায় কিরিবাতি দ্বীপকে। ২০১৯ সালে দ্বীপটির এগারো লাখ মানুষকে অভিবাসী হওয়া ছাড়া গতি নেই। এমন বাস্তবতাই এখন তাদের সামনে।

তিনটি টাইমজোনকে ভাগ করা বিষুবরেখার মধ্যে পড়েছে এ প্রবালদ্বীপ। তাই লন্ডনের টাইমস্কয়ার থেকে ১৪ ঘণ্টা আগেই এখানের বাসিন্দারা বরণ করে নিয়েছে নতুন বছরকে। তবে আগের বছরের তুলনায় যেটি একটু ম্রিয়মাণ চলা বলা যায়। কারণ তো বললামই আগে!

ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য অস্ট্রেলীয় অঞ্চলের দ্বীপগুলোর প্রতি পর্যটকদের অধিক আকর্ষণ। বরাবরের মতো হাজার হাজার মানুষ নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর অকল্যান্ডে একসঙ্গে বরণ করে নেয় ২০১৯ সালকে। বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ৩২৮ মিটার উঁচু স্কাই টাওয়ারের ওপর থেকে ফোটানো আতশবাজি দখল করে নেয় আকাশ। নিচে উল্লাসরত মানুষ পরস্পরকে টেনে নেয় উষ্ণ আলিঙ্গনে।

নতুন বছর মানেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনির আলোঝলমলে উদযাপন। সিডনির অপেরা হাউসের নিউ ইয়ার ইভ উৎসব তো পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত। প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয় এখানে। এবারো ব্যতিক্রম হয়নি। পাঁচ লাখের মতো মানুষ বিখ্যাত আলোর উৎসব দেখতে সিডনিতে জড়ো হন পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে।  তবে এত বড় জমায়েতকে ঘিরে যে কোনো সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী।

এদিকে নতুন বছরকে নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতারেসের স্বাগত বাণীতে যে কাউকেই আশাহত করতে পারে। তার বক্তব্যেও গুরুত্ব পায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে পৃথিবীবাসী এ বছর। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে এ বছরটা গুরুত্বপূর্ণ। এটাই শেষ সুযোগ অস্তিত্বের সংকট থেকে মানুষের রেহাই পাওয়ার।

তিনি বলেন, ‘এরপরেও নতুন বছর আমাদের জন্য আশার।  চলুন আমরা এসব হুমকি মোকাবিলা করি, মানুষের মর্যাদা ও ভালো ভবিষ্যৎ নির্মাণে এগিয়ে আসি।’

রাত বারটা বাজার আগেই দুই কোরিয়ার মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। বরাবরের মতোই সিটি হলে জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ  ঘড়িতে ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে। বারটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সিউলে রাস্তায় মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। আলিঙ্গনে ও পানীয়তে তারা হয়ে ওঠেন মাতোয়ারা।

ফেব্রুয়ারির চন্দ্রপঞ্জিকার নববর্ষই গুরুত্বপূর্ণ চীনাদের কাছে কিন্তু ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনেও তাদের উল্লাস চোখে পড়ার মতো। বিশাল এ ভূখণ্ড জুড়ে এবারও মানুষ বরণ করে নিয়েছে এই বছরকে। ২০১৪ সালে বেইজিংয়ে নতুন বছর বরণ উৎসবে পায়ে পদদলিত হয়ে ৩৬ জনের মতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হংকংয়ের সমুদ্রের পাড়ে মানুষের উপচে ঢল তো সংবাদমাধ্যমের প্রথম সাড়িতেই ওঠে এসেছে।

লন্ডনের টাইম স্কয়ার, নিউইয়র্কসহ পশ্চিমা শহরগুলোতে বরাবরের মতোই নতুন বছরকে বরণ করে নেন উল্লসিত মানুষ। প্যারিস, মাদ্রিজ, বার্লিন, লন্ডন, মস্কো সহ ইউরোপের সব বড় শহরগুলোতেই ২০১৯ সালকে বরণ করে নেওয়ার সেই পুরোনো দৃশ্য। সেলফি শিকারিতে রীতিমতো ভেসে গেছে  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.