প্রত্যাখ্যাত মে, ব্রেক্সিটের এখন কি হবে?
ব্রেক্সিট (ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া) ইস্যুতে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। যদিও তার সরকারের প্রতি বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটে কোনো রকমে তিনি টিকে গেছেন।
গত মঙ্গলবার দীর্ঘ আলোচনার পর এক ভোটাভুটিতে ২৩০ ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে পরাজিত হয় থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি। প্রস্তাবটি বাতিলের পক্ষে ভোট দেন ৪৩২ জন সংসদ সদস্য, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ২০২টি। পার্লামেন্টে বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি নিজ দলের ১১৮ জন এমপি বিরোধী দলের সঙ্গে মে’র চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন।
এরপরই বুধবার বিরোধী দলীয় নেতা জেরোমি করবিন সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এই প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে থেরেসা মে মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে টিকে যান। মে’র সরকারের প্রতি সমর্থন জানান ৩২৫ জন এমপি। আর অনাস্থা জানান ৩০৬ জন। ফলে আপাতত সরকার পরিচালনায় তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
তবে সঙ্কট এখনই কেটে গেছে বলা যাবে না। ইতোমধ্যে মে’র দল কনজারবেটিভ পার্টির প্রধান খোঁজা হচ্ছে, যিনি হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য থেরেসা মে এখনই আশা ছাড়ছেন না। ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্ল্যান ‘এ’ ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি প্ল্যান ‘বি’ নিয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা।
চুক্তি ছাড়াই কোন পন্থা অবলম্বন করে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরোমি করবিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ‘নো ডিল’ বা চুক্তি বাতিল না করা পর্যন্ত জেরোমি করবিন মে’র সঙ্গে বসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
ব্রিটিশ এমপিদের একাংশ চান, ব্রেক্সিট ইস্যুতে থেরেসা মে ফের ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা করুক এবং ২৯ মার্চের আগেই এ বিষয়ে রফা হোক। তাদের চাওয়া দ্বিতীয়বার ব্রেক্সিট ইস্যুতে গণভোটের জন্যও লবিং করা হোক। তবে প্রধানমন্ত্রী মে তাদের এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
এসব আলোচনার মধ্যেই ‘নো ডিল’র সঙ্গে তার দেশ কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বৃহস্পতিবার সরকারের বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছেন।
চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে ৩০ মার্চের পরের জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে গতকাল বুধবার ফ্রান্সের সংসদ একটি আইনও করেছে।
আস্থা ভোটে টিকে থাকার প্রতিক্রিয়ায় থেরেসা মে এমপিদের বলেন, ‘গণভোটের ফলাফল অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দেশের জনগণকে দিয়েছেন সেটা তিনি পূরণ করতে কাজ চালিয়ে যাবেন।’
থেরেসা মে’র স্থলে আলোচনায় ১০ জন
আস্থা ভোটে সরকার টিকে গেলেও আপাতত থেরেসা মে অধ্যায়ের শেষ দেখে ফেলেছেন অনেকে। ফলে সরকার ও দলের হাল কে ধরবেন, তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে আলোচনায় এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বরিস জনসন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ক্যামেরন পদত্যাগ করার পর বরিস থেরেসা মে’র সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এরপরই আছেন, ৪৪ বছর বয়সী ডমিনিক র্যা ব। তিনি ব্রেক্সিটের সাবেক সচিব। তাকেও সবাই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমসারিতে রেখেছেন।
এ ছাড়াও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট, পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গোভ, ২০০৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ডেভিড ডেভিস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রাড, জ্যাকব রেস মগ, আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী পেনি মোডান্ট ও লিডার অব কমন্স আন্দ্রে লিডসামের নাম কনজারভেটিব পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে আলোচনায় এসেছে।
মূলত ২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন। পরে থেরেসা মে তার স্থলে এসে বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা।
এ অবস্থায় পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে জোটটির সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর যে চুক্তি হয়েছিল সেটার অনুমোদনের বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ভোটাভুটি হয়। ওই চুক্তিতেও ২৯ শে মার্চের মধ্যে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার শর্ত নির্ধারণ করা হয়।