প্রিয়বাংলার “চতুরঙ্গ” এবং আরটিভি বাংলাদেশের “আলোকিত নারী”
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ভার্জিনিয়া
গত ২৯শে মে, ২০১৬ ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ থমাস জেফারসন মিডল স্কুলের টি,জে থিয়াটারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বৃহৎ সংগঠন “প্রিয় বাংলা”র বাৎসরিক অনুষ্ঠানমালার অন্যতম আয়োজন “চতুরঙ্গ”। বিপুল লোক সমাগমে এবং মহা আড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রিয় বাংলা “চতুরঙ্গ”-এর এই রঙ্গীন সন্ধ্যা। এবারের আয়োজনে বিশেষ আকর্ষন এবং নতুন সংযোজন ছিল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টি,ভি চ্যানেল আর,টি,ভি,বাংলাদেশের দেশে-প্রবাসে বহুল প্রসংশিত অনুষ্ঠান “আলোকিত নারী”। এছাড়াও ছিল এখানে বেড়ে ওঠা আমাদের তরুন প্রজন্ম এবং প্রবীন প্রজন্মকে একসূত্রে গেঁথে প্রবাসের জীবনভিত্তিক নৃত্য-গীতিসহ একটি নাটিকা। পুরো অনুষ্ঠানটিই ছিল একটি অনুপম পরিবেশনা এবং সবার মন জয় করে সমাদৃত হয়েছে একটি দর্শকনন্দিত অনুষ্ঠান হিসেবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর,টি,ভি,বাংলাদেশের সি,ই,ও জনাব আশিক রহমান। বিশেষ অথিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন “পিপল এন্ড টেকে”র সি,ই,ও জনাব আবুবকর হানিপ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ই-লার্নিং বইয়ের লেখক ডঃ বদরুল হুদা খান এবং ওয়াশিংটনে আসন্ন ফোবানা সম্মেলন ২০১৬-এর আয়োজক কমিটির প্রেসিডেন্ট জনাব মোহাম্মদ আলমগীরসহ উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
প্রিয়বাংলা’র “চতুরঙ্গ” অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন লাভলী শাহিদ এবং এ্যন্থনী পিউস গমেজ। তাদের সাবলীল উপস্থাপনায় চমৎকারভাবে অনুষ্ঠিত হয় “চতুরঙ্গ” অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিল আর,টি,ভি-র “আলোকিত নারী”। আর,টি,ভি-র প্রযোজনায় এবং প্রিয়বাংলার আয়োজনে ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায়, শুধু ওয়াশিংটনেই নয়- যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আর,টি,ভি-র অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “আলোকিত নারী”। “আলোকিত নারী” আর,টি,ভি-র একটি মহতী উদ্যোগ- যার মধ্য দিয়ে তারা সমাজের চারপাশ থেকে আলোকিত নারীদের খুঁজে বের করে সমাজের সামনে নিয়ে এসে তাদেরকে সম্মানিত করে থাকেন। এপ্রয়াস নিঃসন্দেহে সমাজে নারীদের সমান অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় একটি উল্লেখযোগ্য মহতী উদ্যোগ। আর প্রিয়বাংলা যুক্তরাষ্ট্রে “আলোকিত নারী”র প্রথম অনুষ্ঠানের সহযাত্রী হতে পেরে অনেক বেশী আনন্দিত এবং গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত “আলোকিত নারী”র প্রথম অনুষ্ঠানে যাদের আলোকিত নারী হিসেবে সম্মাননা দেয়া হয়, তারা হলেনঃ ফারজানা ক্লারা গ্রাহাম, রেহানা পারভীন, বিথীকা বোস, ডঃ মরিয়ম পারভীন, শাহনাজ ফারুক, ফারহানা হানিপ এবং বনানী চৌধুরী।
আর,টি,ভি-র পক্ষে এই সম্মাননা প্রদান করেন আর,টি,ভি, বাংলাদেশের সি,ই,ও জনাব আশিক রহমান, সাথে ছিলেন প্রিয়বাংলার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং আর,টি,ভি-র ওয়াশিংটন প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম আকাশ। জনাব আশিক রহমান তার মূল্যবান বক্তব্যে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে দু’টো লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর” এবং এই লাইন দু’টো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কেন আমাদের সমাজের নারীদের সমান অধিকার এবং মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন এবং কিভাবে এর মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে অনুপ্রানিত করতে পারি জাতীয় চেতনা ও সমৃদ্ধির পথে নারী-পুরুষ একসাথে এগিয়ে যেতে। তিনি বলেন নারীরা পুরুষের চাইতে কোন অংশেই কম নয়, তাদেরও সমমর্যাদা প্রাপ্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যতেও “আলোকিত নারী”র এই অনুষ্ঠান প্রতিবছর হবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শুধু ওয়াশিংটনেই নয়, অন্যান্য বড় বড় শহরেও তিনি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে সম্মানিত করবেন সেইসব আলোকিত নারীদের, যারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং পেশাগত জীবনে তাদের অসামান্য অবদান ও ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। অতঃপর আর,টি,ভি-র পক্ষে থেকে এবারের নির্বাচিত আলোকিত নারীদের হাতে জনাব আশিক রহমান একটি করে ক্রেষ্ট তুলে দিয়ে তাদেরকে সম্মাননা জানান।
এরপর ই-লার্নিং বইয়ের লেখক ডঃ বদরুল হুদা খান প্রিয়বাংলার ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে তার লিখিত ই-লার্নিং বইয়ের একটি কপি তুলে দেন উপহার হিসেবে। উল্লেখ্য ডঃ বদরুল হুদা খানের ই-লার্নিং বইটি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
তার পর পরই শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব, প্রিয়বাংলার তৃতীয় পরিবেশনা “চতুরঙ্গ”। এপর্বে পরিবেশিত হয় নৃ্ত্য-গীতিসহ প্রবাসের বাস্তব জীবনধারার প্রেক্ষাপটে রচিত নাটিকা- ”প্রবাসের ইতিকথা”। কাহিনী- প্রিয়লাল কর্মকার, চিত্রনাট্য ও সংলাপ- মিজানুর রহমান খান, চিত্রনাট্য সম্পাদনায় এ্যন্থনী পিউস গমেজ এবং ডেমিয়ান ডায়াস, পরিচালনায়- মাহফুজুর রহমান এবং প্রিয়লাল কর্মকার। অভিনয়ে- মাহফুজুর রহমান, এ,কে,এম আসাদুজ্জামান, সুদিপ্তী বড়ুয়া, মোহাম্মদ সিদ্দিক রোমি, রুমি মনসুর, এ্যন্থনী পিউস গমেজ, আবু সরকার, আনোয়ার আনসারী রাসেল, পূর্ন কর্মকার এবং অরোরা কর্মকার পিয়ান। ধারা বর্ননায় মিজানুর রহমান খান এবং কুলসুম আলম খান, সঙ্গীতে পুলি রানী কর্মকার। দর্শকদের করতালিতে নাটিকাটি অভিনন্দিত হয়েছে বার বার। নাটিকাটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে প্রবাসের বহমান জীবনধারার প্রেক্ষাপট থেকে তুলে আনা এক টুকরো প্রবাস জীবন। নাটকের নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন- এলিসা গোমেজ(ইছামতি ও রিদমায়া) কাউন্টেস উইনফ্রি( অল দ্যাট এন্ড জ্যাজ ডান্স এন্ড মিউজিক একাডেমী, সিন্থিয়া গোমেজ(সিন্থিয়া ডান্স গ্রুপ), ফারিহা তাজনিন (ইরা) এবং জিশান হোসেন(ইরা এন্ড জিশান গ্রুপ), লুবাবা রহমান চুরি, মেহেদি হাসান, শিল্পী গ্লোরিয়া রোজারিও(মঞ্জুরী নৃত্যালয়)।
এছাড়াও শতাধিক নৃত্য-শিল্পী এবং কলা-কুশলীদের অংশগ্রহনে পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল একটি প্রানবন্ত উচ্ছল পরিবেশনা। অনুষ্ঠানজুড়ে যেসব কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুনীর অংশগ্রহন করে অনুষ্ঠানটিকে সফল ও প্রানবন্ত করে তুলেছিল, তাতে একটি বিশেষ দিক লক্ষণীয় ছিল- আর তা হল প্রবাসের বহুমাত্রিক মিশ্র সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা তরুন-তরুনীদের আন্তঃসাংস্কৃক পরিবেশনা। বিদেশী হয়েও বাংলা গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ছিল প্রিয়বাংলার ইতিবাচক আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচীর সফল পদক্ষেপ, প্রবাসের মূলধারায় নিজেদের বাংলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের সাথে মিশে যাবার জন্য প্রিয়বাংলার আন্তরিক প্রয়াস।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রিয়বাংলার পক্ষ থেকে আর,টি,ভি, বাংলাদেশের সি,ই,ও জনাব আশিক রহমান এবং “পিপল এন্ড টেক”-এর সি,ই,ও জনাব আবুবকর হানিপের হাতে একটি করে ক্রেষ্ট তুলে দেয়া হয় তাদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরুপ।
উল্লেখ্য পুরো অনুষ্ঠানটি যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্ভব হয়েছে, তারা হলেন- আবুবকর হানিপ (পিপল এন্ড টেক, টাইটেল স্পন্সর), তৌফিক মতিন (কমনওয়েলথ মর্টগেজ, স্পন্সর), দিলাল আহমেদ (ফেয়ারওয়ে মর্টগেজ), মাসুদ আহসান (কুইক সেইল রিয়েল্টি।
“চতুরঙ্গে”র সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও অনুষ্ঠান সমন্বয়ে- জীবক বড়ুয়া, সার্বিক প্রচারনা এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন- অসীম রানা, অনুষ্ঠানের আলোক নিয়ন্ত্রনে ছিলেন- রাহাত সুলতান, শব্দ নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনায় জনাব জামিল খান, মঞ্চসজ্জায়- কলিন্স গমেজ, প্যাট্রিক গমেজ, নির্মল গমেজ, প্রপস- মৌসুমী ফাতেমা সিরাজ, মঞ্চ ব্যবস্থাপনায়- ডেমিয়ান ডায়াস, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা সহযোগিতায় নুপুর চৌধুরী এবং সেলিম আক্তার। কৃতজ্ঞতা স্বীকার- আর্লিংটন আর্টস এন্ড আর্লিংটন কালচারাল এফেয়ার্স।
অনুষ্ঠানের আলোকচিত্র ধারনে ছিলেন রাজীব বড়ুয়া এবং বিপ্লব দত্ত। ভিডিও চিত্র ধারনে “থ্রি স্টার মাল্টিমেডিয়া”।
অতঃপর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী এবং ব্যবস্থাপনাকারী প্রিয়বাংলার প্রতিটি কর্মীসহ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে প্রিয়বাংলার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। একটি সুন্দর সন্ধ্যার অনুপম পরিবেশনার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি নিয়ে সবাই ফিরে যায় যার যার গন্তব্যে।