প্রবাসে বাংলাদেশ,প্রিয় বাংলার পথমেলা…
-সুবীর কাস্মীর পেরেরা,ওয়াশিংটনডিসিঃ
মেট্রোওয়াশিংটনে সারা বছরব্যাপী নানা বাংলা অনুষ্ঠানে মুখর থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনের কোন জমে থাকা দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধক যেন এই অনুষ্ঠানমালার বহিঃপ্রকাশ। পহেলা বৈশাখ, পিঠা উৎসব, বাংলা উতসব, বাংলা মেলা, নবান্ন উৎসব , বসন্ত উতসব, প্রবাসী শিল্পীদের অংশগ্রহণে বাংলা গানের আসর এ যেন আমেরিকার বুকে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ। শুধু কি তাই? ভিনদেশিদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। বিদেশ-বিভুঁই যারা আছেন, কেবল তারাই বুঝেন প্রবাসে থাকার দুঃখ যন্ত্রণার কথা। ক্ষণিক সময়ে এই সব উৎসব আমাদের নিয়ে যায় বাংলা মায়ের কোলে। মেট্রোওয়াশিংটনে বছরে যতগুলো বাংলা অনুষ্ঠান হয়, তার মধ্যে প্রিয়লাল কর্মকারের প্রিয়বাংলা সংগঠনের পথমেলা অন্যতম। হাজার মানুষের মিলন মেলা বসে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের অরলিঙ্গটনে।
প্রিয়বাংলার পথমেলাতে থাকে নানা আয়োজন। প্রবাসী শিশু-কিশোর-বয়স্কদের পরিবেশনার সাথে একই মঞ্চে পরিবেশন করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ সাথে ইউৰোপের বিভিন্ন দেশ। ভিনদেশিদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি সম্মাননা দেখিয়ে এক হয়ে মিশে যায় পথমেলায়। সব চেয়ে আকষণীয় পরিবেশনার মধ্যে বলিভিয়ার ঐহিহ্যবাহী আদিবাসী পোশাকে আদিবাসী নৃত্য। নিজেদের নাচের তালে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে থাকে এই আদিবাসী শিল্পীরা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাস্তার দুপাশ জুড়ে থাকে গ্রাম বাংলার জীবন্ত চিত্র। প্রবাসে বসে আমরা যা মনে কল্পনা করি , এই পথমেলাতে এসে তা বাস্তবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। অরলিঙ্গটনের ওয়াল্টার স্ট্রিটের পুরুটা দখল করে সারাদিন ব্যাপী চলে এই অনুষ্ঠান। তাই রাস্তার দুধারে নানা জাতীয় পসরা সাজিয়ে বসে বাংলার রমণীরা। শাড়ি, মাটির গহনা, পাঞ্জাবি-পাজামা, সালোয়ার, চুরি, বাহারি পিঠা, চা, সিঙ্গারা, ঝালমুড়ি, চটপটি সাজানো এই মেলা যেন আমার সোনার বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে ফাঁকে ফাঁকে চলে ভিবিন্ন সেক্টরে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান। দেশ ছাড়া ভিনদেশীরাও এই সম্মানে ভূষিত হয়। আর্লিংটনে নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার, গভর্নর এই বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন। এই কারণে পথমেলার প্রতি তারা বিশেষ যত্নশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। গত বছর উক্ত কাউন্ট্রি থেকে মেলার জন্য আরো দুই ঘন্টা বাড়িয়ে দেয় কাউন্টরির কর্মকতাবৃন্দ।
প্রিয়লাল কর্মকার, জীবুক বড়ুয়া,প্যাট্রিক গোমেজ, ডেমিয়ান ডায়েস, সেলিম আক্তার, শিবলী, রুম্পা বড়ুয়া,জাহিদ আহমেদসহ আরো অনেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই পথমেলা। প্রিয়বাংলা প্রবাসের বুকে শুধু একটি সংগঠন নয়, এই যেন বাংলাদের প্রতীক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মেট্রোওয়াসিংটনে। ভিন দেশের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতির চর্চা, ধারণ ও লালন পালন কষ্টসাধ্য ও সময়ের ব্যাপার। এতো প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ওয়াশিংটন এলাকায় চলছে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির চর্চা।
অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায় , তারা এই অনুষ্ঠানে আসেন, দেশের মাটির সুধা গন্ধের টানে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য তারা দেশকে খুঁজে পান সাত সমুদ্র টের নদীর পারে। অনেকে গর্ব করে বলেন, প্রবাসের বুকে বাংলাদেশীদের এতো অনুষ্ঠান হয় যা অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
কেউ বলেন, সারা বিশ্ব থেকে অংশ সংস্কৃতি মুছে গেলেও বাংলা সংস্কৃতি থাকবে চির উজ্জ্বল-অম্লান।
মানুষের মনের এই অভিব্যক্তির প্রতি সম্মান রেখে প্রিয়বাংলাকে পথ চলতে হবে। ধরে রাখতে হবে, বাংলা সংস্কৃতিকে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রিয়বাংলা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর আর্লিংটনের ওয়াল্টার স্ট্রিটে সকাল ১১ থেকে সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা পর্যন্ত ৫ম পথমেরা আয়োজন করতে যাচ্ছে। প্রিয়বাংলার কর্ণধার প্রিয়লাল কর্মকার জানান ,এবারের আয়োজন বরাবরের মতোই বাংলাদেশী শিল্পীদের পাশাপাশি ভিনদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণ থামবে। থামবে বিশেষ সম্মাননা পর্ব। পাশাপাশি, ভিবিন্ন স্টল তো থাৰেই। এইবার বাংলাদেশ থেকে মেলা মাতাতে আসছেন সুকণ্ঠী গায়িকা বেবি নাজনীন ও মুক্ত সারওয়ার। প্রিয়লাল বলেন, সমস্ত প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
মেট্রোওয়াশিংটনের পাশাপাশি অন্যান্য স্ট্রেটের ভিবিন্ন বাংলাদেশী সংগঠন বাংলাদেশকে প্রবাসের বুকে জাগিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই জন্য সকল আয়োজকদের স্যালুট তো জানাতেই হবে।