ফেলানী হত্যার ৮ বছর, বিএসএফের বিচার দাবি
নানা আয়োজনে সোমবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরী ফেলানীকে স্মরণ করা হয়েছে।
সোমবার ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ৮ বছর পালন করা হয়েছে। বাদ যোহর ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা কলোনিতে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
নাখারগঞ্জ হাফিজিয়া মাদ্রাসার হাফেজ আব্দুল আলিম দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এতে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল আনোয়ার-উল আলম, ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মা জাহানারা বেগম ছাড়াও স্থানীয়রা অংশ নেন।
এ সময় তিনি ফেলানীর বাবাকে লুঙ্গি, মাকে শাড়ি এবং ফেলানীর রুহের মাগফেরাতের দোয়া মাহফিলের খরচের অর্থ দেন।
এ সময় লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্ত কাশিপুর কোম্পানির অনন্তপুর বিওপির বিজিবি সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মেয়ে হত্যার বিচার দিয়েছি। আশা করছি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।’
এ সময় তিনি ভারত সরকারের কাছে ফেলানী হত্যার ক্ষতিপূরণও দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিএসএফের বিচার দাবি করছি। হত্যাকারীদের ফাঁসি হলে আমার মেয়ের আত্মার শান্তি পাবে।’
কি ঘটেছিল সেদিন
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের আসাম রাজ্যের বনগাঁও থেকে নুর ইসলাম মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তের ৯৪৭/৩ এস আন্তর্জাতিক পিলারের পাশে ভারতীয় খেতাবেরকুটি সীমান্তে চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ জওয়ানরা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় নুর ইসলাম সীমান্ত পার হলেও ধরা পড়ে যান ফেলানী। তাকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ জওয়ানরা।
বিএসএফ ফেলানীকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তার লাশ দীর্ঘ সময় কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে। এ দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে এলে গোটা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠে।
পরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ভারতের উচ্চ আদালতে গড়ালেও এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কুচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ফেলানীর বাবা দু’দফা ওই আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায় পুনর্বিবেচনায় বিজিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি করে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফের যে রায় দেন আদালত, তাতেও অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়া হয়।
এরপর ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবী অপর্ণা ভাট এবং মানবাধিকার সংগঠন মাসুম’র সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রিট করেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। তবে এখনও সেই রিটের কোনো রায় হয়নি।