ফোন পেয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে ড. কামালের কাছে ছুটে যান মন্টু
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শওকত নামের এক ব্যক্তি। মুঠোফোনে গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে ওই জনৈক ব্যক্তি বিষয়টি জানান। এই কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সেই শওকতকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন মন্টু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা মহসিন মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, উদ্বিগ্ন হয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে বিষয়টি আমি ড. কামাল স্যারকে জানাই। যেটা তাৎক্ষণিক করার দরকার ছিল, তা করেছি। তবে শওকতকে আমি চিনিও না, জানিও না। কখনও দেখিওনি।
ফাঁস হবার পর থেকে ফোনালাপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কথোপকথনে শওকত নামের ওই ব্যক্তি মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ড. কামালের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
তার দাবি, ‘আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির যদি টাকা-পয়সায় কাজ না হয়, তাহলে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা হতে পারে।’
ফোনালাপের মধ্যে নিজের অংশের কথার ব্যাপারে স্বীকার করে গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘জ্বি, কথা যেহেতু হয়েছে। অস্বীকারের কিছু নেই। সেখানে আমার কথা ছিল।’
কে এই শওকত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি সামনাসামনি আসেন। বলব। ওকে (শওকতকে) আমি চিনিও না, জানিও না। জীবনে দেখিওনি। তিনি একটা কথা বলেছেন, আমি শুধু উত্তর দিয়েছি। কে শওকত তা আমার জানারও দরকার নাই। পুলিশের দরকার পড়লে খুঁজে বের করুক। অসুবিধা কী?
যেহেতু এমন একটা মে ম্যাসেজ আপনাদের কাছে গেছে। ড. কামাল গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা। এমন ম্যাসেজের পর আপনারা উদ্বিগ্ন কি না- জবাবে মন্টু বলেন, যার (ড. কামাল) সম্পর্কে কথাটা আসছে, আমি ২০ মিনিটের মধ্যে তার কাছে পৌঁছে গেছি এবং স্যারকে (ড. কামাল) বিষয়টি জানিয়েছি। সে ব্যাপারে ওনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা তিনিই জানেন। আমাদের যেটা বলা দরকার, সেটা বলেছি, যেটা করা দরকার করেছি।
তিনি দাবি করে বলেন, ‘আপনি যাই বলেন না কেন, নিরাপত্তার বিষয় তো? এগুলো বের করে কোনো লাভ হবে না। আমরা কোনো অসামাজিক, অবাস্তব কথা বলিও না। আমরা যাই বলি, সঠিক কথাই বলি। ভাইরাল করবেন না, এর গ্যারান্টিটা কোথায়? ভাইরাল করতে চান তো করেন, কিচ্ছু বলব না। শুধু বলব এই রেকর্ড ফাঁস কে করেছে? প্রশ্ন করুন, খুঁজুন।
ফোনালাপ ফাঁস হলেই যে আমরা লিখব, ব্যাপারটা এ রকম নয়, আদতে শওকতের সঙ্গে ফোনালাপের কথা আপনার কথা কি-না সেটা নিশ্চিত হতেই…
এ ব্যাপারে মিন্টু বলেন, ‘আমি তো বললাম, শওকত নামের একজন কথা বলেছে। সে বিএলএসএস… একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। সে আমাকে যা বলেছে, সে কথাগুলোর উত্তর আমি দিয়েছি, যে বাংলাদেশের মানুষ কেউ নিরাপদ নয় এবং যার সম্পর্কে বলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে জানিয়ে আসছি এবং আমার যেটা করার সেটাও করে আসছি।’
বিষয়টি শুনে ড. কামাল কিছু বলেছেন কি না- জানতে চাইলে মন্টু বলেন, এই বিষয়টি তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।
ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথন পুরোপুরি তুলে ধরা হলো-
শওকত : মন্টু ভাই আমি শওকত বলছিলাম। বিএলএসএস…
মোস্তফা মহসিন মন্টু : হ্যা শওকত কেমন আছো?
শওকত : আছি ভালো, আপনি কেমন আছেন। আমি একটা ইমপর্টেন্ট খবর দেয়ার জন্য আপনাকে ফোন করলাম। আপনি ড. কামাল হোসেনকে যে কোনোভাবে, কোনো নিরাপত্তার হেফাজতে নিয়ে যান।
মোস্তফা মহসিন মন্টু: আচ্ছা।
শওকত : কারণ, ওনার (ড. কামাল হোসেন) ওপরে এটেপ্ট আছে। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য। যদি টাকা-পয়সায় কাজ না হয় বিএনপির, তাহলে তাদের লাস্ট… হলো যে, ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা। ড. কামাল হোসেন বিএনপির কেউ না। ওনাকে (ড. কামাল) মারলে তারা (বিএনপি) রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে।
মোস্তফা মহসিন মন্টু: হুম।
শওকত: বুঝছেন, আপনি ইমিডিয়েটলি মন্টু ভাই… আপনি যেহেতু আমার, আমরা এক সাথের। আমি এটা লন্ডন থেকে খবর পেয়েছি, তারেক রহমানের খুব ক্লোজ, আমাদের সিলেটি, কারণ, আপনি জানেন যে লন্ডনে বিএনপির সব নেতাকর্মী হচ্ছে সিলেটের। সে তারেক রহমানের খুব কাছের এবং দুবাই থেকে অলরেডি সাতজন কিলার, পাকিস্তানি বাংলাদেশে ঢুকছে। লাস্ট মোমেন্টে তারা চেষ্টা করবে, ইভেন ইলেকশনের আগের দিন হলেও ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা। আপনি… আমি ডিসি, ডিবিকে বলছি। তারা ইয়ে নিচ্ছে।… আপনাদের কালকে অপমান করেছে ড. কামাল হোসেন, ওই অজুহাতে আপনারা ওনাকে নিয়ে আসেন, কারণ ওনাকে সেভ করা হচ্ছে এখন আপনাদের দায়িত্ব।
মোস্তফা মহসিন মন্টু : ওরা (ডিসি, ডিবি) কোথায় নিয়ে যাবে?
শওকত: ওরা (ডিসি, ডিবি) নিয়ে কাস্টডিতে রাখবে। সেভ কাস্টডিতে।
মোস্তফা মহসিন মন্টু: ওনাকে (ড. কামাল) কাস্টডিতে নিয়ে নিরাপত্তা দিলে তো…
শওকত: বাইরে থাকলে ওনার লাইফ রিস্ক।
মোস্তফা মহসিন মন্টু : না না… ওরা কি গ্রাউন্ডে নিয়ে যাবে?
শওকত: ওনার জীবনের নিরাপত্তার জন্য। গ্রাউন্ড তো ব্যাপার না এখানে মন্টু ভাই।
মোস্তফা মহসিন মন্টু : নিরাপত্তা তো বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেও ছিল না, জাতীয় চার নেতার জেলখানার ভেতরেও ছিল না। আমাদের (পুলিশি) হেফাজতে কি মানুষ মরে না?
শওকত : তা তো মরে, কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য যদি কেউ করে তাহলে এখন…
সূত্র: জাগো নিউজ