‘ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি’র বৈশাখী ও বাউল মেলা ২৯এপ্রিল
এ্যন্থনী পিউস গমেজ,ওয়াশিংটনডিসি : আগামা ২৯শে এপ্রিল,২০১৭, রোজ শনিবার আসছে ওয়াশিংটনে সবার পরিচিত, সবার প্রিয় “ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি”র এবারের বৈশাখী মেলা। ওয়াশিংটনে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বৈশাখী মেলার আয়োজনের সময় হলেই আমরা যেন ফিরে যাই দেশের পহেলা বৈশাখের আনন্দ আয়োজনে, ঢাকায় রমনার বটমূলে… স্মৃতির পথ ধরে আবার মিশে যাই ভোরের শান্ত শীতল ঝির ঝির বাতাসে রমনা পার্কে মানুষের ভিড়ে- ছেলেদের স্বদেশী পোশাকের বাহার আর মেয়েদের সাঁজের বাহার… লাল পাড় শাড়ী, চোখে কাজল, খোঁপায় সাদা বেলী ফুলের মালা, মুখে প্রশান্ত হাসি- এক আনন্দ উচ্ছল পরিবেশ! যেন সবাই জীবনের ছোঁয়ায় জেগে উঠেছে নতুনের আবাহনে নতুন করে, নব আনন্দে… আর কানে ভেসে আসে সেই মধুর গান-
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক
এসো এসো…।
প্রতিবাররের মত এবারও ‘ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি’ আয়োজন করেছে “বৈশাখী মেলা”র। তবে তাদের এবারের বৈশাখী মেলার বিশেষত্ব হল এবার মেলার সাথে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা, আর তাহল- “বাউলিয়ানা”। অর্থাৎ এবারের মেলায় সাংস্কৃতিক অংশে বিশেষভাবে জুড়ে থাকবে গ্রাম বাংলার বাউল গানের সম্ভার। আর শুধু তাই নয়, বাংলার এই বাউল গানের পাশাপাশি সবার মনোরঞ্জনের জন্য আসছেন বাংলাদেশ থেকে বাদশা বুলবুল এবং জিনাত আরা মুনা, এছাড়া থাকছেন ফ্লোড়িডা প্রবাসী জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী অনিমা ডি’কস্তা এবং নিউ ইয়র্ক প্রবাসী শিল্পী শাহ মাহবুব, সাথে থাকছেন সবার পরিচিত শফিক ঢোলকিয়া। এদের সবার পরিবেশনায় এবার আনন্দের ধুম মাচাবে ‘ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি তাদের বৈশাখী চত্বরে। এছাড়া রয়েছে বরাবরের মত বাহারী স্টল… রকমারী পোশাক, গহনা, সুস্বাদু খাবারসহ পেশাগত সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল। ‘ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি’র অন্যতম দুই কর্ণধার- আবু রুমী এবং আক্তার হোসাইন জানিয়েছেন যে এবারের বৈশাখী মেলার আয়োজন হতে যাচ্ছে অন্যান্য বারের আয়োজন থেকে ভিন্ন এবং অনেক বেশী আনন্দময়। সহৃদয় স্পনসরসহ তাদের এই বৈশাখী আয়োজনে বিশেষভাবে সহযোগিতা করছেন নুরুল আমিন নুরু এবং রবিউল ইসলাম শিশির। এছাড়া সবার পার্কং সুবিধার্থে এবারের মেলা প্রাঙ্গণ সংলগ্ন রয়েছে প্রায় ৪৫০টি গাড়ী পার্কিং-এর ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, জনপ্রিয় সংগঠন ‘ফ্র্যান্ডস এন্ড ফ্যামিলি’ ওয়াশিংটনে বিগত বার বছরেরও বেশী সময় ধরে আয়োজন করে যাচ্ছে ‘পিঠা মেলা’ এবং ‘বৈশাখী মেলা’ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা।
বাংলাদেশের শহরতলীতে পহেলা বৈশাখের আয়োজনটা সম্পূর্ন ভিন্ন মাত্রার- অনেকগুলো বিষয় জুড়ে আছে এই আয়োজনের সাথে। প্রথমতঃ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের একটি আনন্দময় অনুভূতি, এছাড়া মেলার আয়োজনে রয়েছে নতুন আনন্দে নতুনভাবে দিনটিকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে লোকসঙ্গীতের ছোঁয়া, মানুষের সাঁজ-পোষাকে সম্পূর্ন স্বদেশী সংস্কৃতির প্রতিফলন, গ্রামীন জীবনের সুস্বাদু খাবারের আয়োজন… পান্তা-ইলিশ থেকে শুরু করে ভর্তা পর্যন্ত সবকিছু। এ যেন মায়ের কোলে ফিরে যাওয়া, শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া- প্রানের স্পর্শ অনুভব করা।
বাংলাদেশে শুধু পহেলা বৈশাখের আয়োজনই নয়, গ্রামীন প্রেক্ষাপটে বার মাসে তের পূজার পসরা বসে বাংলাদেশে। সাধারণ মানুষের জীবনে নির্মল আনন্দের উৎস এসব মেলার আয়োজন। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে গ্রাম বাংলার এমনি মেলার আয়োজন। আগের দিনে গ্রামের বাড়ীতে এমনি বিদ্যুৎ ছিল না, টেলিভিশন ছিলনা, ছিল না আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, ছিলনা আনন্দের বা মনোরঞ্জনের এমনি আয়োজন যা আজ কাল পৌছে গেছে গ্রামীন জীবনের সীমানায়। তবে এত কিছু না থাকলেও একটা জিনিস ছিল- আর তা হল গ্রামীন জীবনের অকৃত্রিম সরলতা, ভালবাসার স্পর্শ, নিজেদের মাঝে এক অদ্ভুত সম্পর্কের বিনিসুতোর মালা, আর ছিল সাধারণ আয়োজনে অসাধারণ আনন্দ উৎসব। মেলা শুরু হবার বেশ আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত আয়োজন….. মেলার সময় যে আনন্দ তারা পেতেন, তার রেশ যেন চলতে থাকতো দীর্ঘ সময় ধরে, মেলার আনন্দ তাদের আচ্ছন্ন করে রাখতো অনেকটা সময় ধরে। শহরের বেশীর ভাগ মানুষতো আসলে গ্রাম থেকেই আসা… তাই এই সব মেলার আয়োজনে তারা যেন খুঁজে পায় তাদের ফেলে আসা গ্রামের সরল আনন্দের ছোঁয়া! জীবনের টানে প্রবাসী হয়ে দেশের এইসব আনন্দ উৎসবকে আরো গভীরভাবে মিস করি আমরা। আর তাইতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীরা আয়োজন করছেন বিভিন্ন জাতীয় দিবস সহ বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আনন্দ অনুষ্ঠানের। এর মাঝে আমরা ফিরে পাই আমাদের ফেলে আসা দিনগুলো, সেই সব স্মৃতিময় উৎসবের আনন্দে। একটি দিনের জন্য হলেও সেই স্বদেশী আবহে, স্বদেশী ছোঁয়ায় প্রবাসের আঙ্গিনায় গড়ে উঠে ক্ষণিকের বাংলাদেশ, আমরা হারিয়ে যাই মেলার আনন্দ উল্লাসে, বন্ধু-বান্ধব আর পরিচিতজনদের সাহচর্যে ব্যস্ত জীবনধারার ফাঁকে এ যেন এক পশলা স্বদেশী আনন্দের বৃষ্টি… ভিজিয়ে নিই আমাদের মনের চত্বর…… সবকিছু মিলিয়ে যেন আবার আমরা ফিরে যাই আমাদের সেই সোনার গাঁয়, আমাদের স্বদেশের আঙ্গিনায়।