বন্ধ মিডিয়া খুলে দিয়ে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের সব কিছু পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যা যা দরকার তার সকল ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার বিধানও সংবিধানে আছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সৃষ্টি করতে পারেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হলো বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সরকারের সময় বন্ধকৃত মিডিয়া খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু ঘটনা ঘটছে উল্টোটা। তফসিল ঘোষণার পরও ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চারটি পোর্টাল বাদ দিয়ে বাকি ৫৪টি পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ মিডিয়া খুলে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শাহিন হাসনাত, শীর্ষনিউজ২৪ ডটকম এর সম্পাদক একরামুল হক, ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ আকন, ডিইউজের জনকল্যাণ সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসেন, নুরুল আমিন রোকন, মোদাব্বের হোসেন, সাদ বিন রাবি, কামরুজ্জামান কাজল প্রমুখ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের সব কিছু পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যা যা দরকার তার সকল ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার বিধানও সংবিধানে আছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সৃষ্টি করতে পারেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হলো বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই প্রথমে ৫৮টি পরে চারটি বাদে বাকি ৫৪টি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কী কারণে এসব নিউজপোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে সেটা স্পষ্ট করুন। কোন সংবাদটি হলুদ কিংবা বৈধ হয়নি সেটাও স্পষ্ট নয়। সরকারের জবাবদিহিতা নেই বলেই এসব বিষয়ে কোনো কৈফিয়তও নেই। কোনো কিছু না বলেই নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেবেন। যা ইচ্ছা তাই করবেন এভাবে দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিনেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা ভাঙচুর হলো এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ হামলা প্রমাণ করে আবারও ২০১৪ সালের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে সরকার। মানুষ গুম ও খুনের সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সরকারের সময় বন্ধকৃত মিডিয়া খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু ঘটনা ঘটছে উল্টোটা। তফসিল ঘোষণার পরও ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চারটি পোর্টাল বাদ দিয়ে বাকি ৫৪টি পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ মধ্যরাতে দেয়া হয়েছে। বেকার করে দেয়া হয়েছে হাজার হাজার সাংবাদিকদের। এখন চাকরি হারিয়ে তারা তাদের পরিবারদের নিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
তিনি বলেন, বিটিআরসি বলছে পুলিশের সুপারিশে এ পোর্টালগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাহলে কি আমরা ধরে নেবো দেশ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সব অবৈধ কাজের বৈধ্যতা নিয়েছে। এখন আবার পুলিশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কার্য হাসিলের কথা ভাবছে। যে সরকার লুটেরা শাসন কায়েম করতে চায় সেই সরকার প্রথমেই আঘাত করে সংবাদপত্রের ওপর। বর্তমান সরকারের বেলাই সেটাই ঘটছে। বন্ধ মিডিয়া খুলে না দিলে নির্বাচনের নামে তামাশা হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। সেই কথা যেন পত্রপত্রিকায় না লেখা হয় সে জন্য জনপ্রিয় পোর্টালগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতুষ্ট ও মেরুদ-হীন। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের মতো ফ্যাসিবাদী আচরণ বন্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বন্ধ মিডিয়া খুলে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বহি:প্রকাশ। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনও সে আচরণ থেকে বের হতে পারছে না। এজন্য তফসিল ঘোষণার পরও ৫৪টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে অসংখ্য সাংবাদিক বেকার হয়ে গেছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ একটি দুর্বিসহ সময় অতিক্রম করছে। সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। আর সত্যের বিজয় হবেই। মানুষের বাকস্বাধীনতার অধিকার, সংবাদপত্র ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যখন রাস্তায় নেমেছি তখন বিজয় ছিনিয়ে নিয়েই ঘরে ফিরবো ইনশাল্লাহ।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকার কথা দিয়েছিল হামলা-মামলা কিংবা গ্রেফতার হবে না। অথচ সরকার সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে গণগ্রেফতার চালিয়ে যাচ্ছে।
কর্মসূচি: বন্ধের নির্দেশ দেয়া দেশের পাঠক প্রিয় ৫৪টি নিউজ পোর্টাল খুলে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব নিউজপোর্টাল খুলে দিতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।