‘বহিরাগতদের’ দখলে পবা-মোহনপুর আসন!

656

একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় সংসদ সদস্য পাবে ২০০৮ সালে তৈরি হওয়া রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর)। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে ‘হটিয়ে’ এ আসনটি দখলে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন।

নির্বাচনে আয়েন উদ্দিনের কাছে মেরাজ মোল্লার বিপুল ভোটের (প্রায় ৫৫ হাজার) পরাজয় যেমন আলোচনায় এসেছে, তেমনি ‘বহিরাগতদের’ আসন হিসেবে রাজশাহী-৩ ‘বদনাম’ও কামিয়েছে ঢের।

২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার এমপি হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বাড়ি পবার নওহাটায়। আসনে ওই বছর বিএনপির মনোনয়ন পান দলের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কবীর হোসেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেরাজ মোল্লা স্থানীয় হলেও কবির হোসেন কিন্তু রাজশাহী শহরের বাসিন্দা। তাই প্রথমবারই ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর তকমা পায় আসনটি।

তবে ২০১৪ সালে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসেন মেরাজ মোল্লা। দুর্নীতি, অনিয়মে দলের টিকিট না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ক্ষতটা হয়তো এখনও শুকায়নি। মূলত তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেন তুলনামূলক ‘ক্লিন ইমেজের’ মোহনপুরের স্থানীয় রাজনীতিক আয়েন উদ্দিন। ওইবার তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির বর্তমান জেলা সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। শেষ পর্যন্ত নূন্যতম ভোট না পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

Untitled-12017081204355920120170813161415
এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের ব্যানারে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য মেরাজ মোল্লা ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলটির আরও তিন তরুণ নেতা। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান আসাদের বাড়ি সিটি করপোরেশন এলাকায়, মানজালের বাড়ি পবার নওহাটায় আর আলফোরের বাড়ি মোহনপুরে।

এদিকে বিএনপি থেকেও এ আসনে একাধিক নেতা মনোনয়ন চান। তবে ২০০৮ সালে এ আসনে নির্বাচন করা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর হোসেন প্যারালাইসিস আক্রান্ত হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রায় অনিশ্চিত বলা যায়।

তবে চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা কামরুল মনির, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু ও জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রায়হান মনোনয়ন চান পবা-মোহনপুর আসনে।

এর মধ্যে রায়হানুল হক রায়হানের বাড়ি পবা উপজেলায় হলেও বাকিরা সবাই বহিরাগত। শাহীন শওকতের বাড়ি শিরোইল শান্তিবাগ, শফিকুল হক মিলনের বাড়ি বোয়ালিয়ায়, মতিউর রহমান মন্টুর বাড়ি সাধুর মোড় বলে জানা যায়।

এ আসনের নির্বাচনে বহিরাগতদের আগ্রহের কারণ হিসেবে জানা যায়, নতুন আসন হওয়ায় সহজে মনোনয়নের প্রত্যাশায় সবাই নির্বাচন করতে চান। তাছাড়া স্থানীয় প্রার্থীদের তারা (বহিরাগত) দুর্বল মনে করে জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন!

যদিও ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ফলাফল বহিরাগতদের জন্য সুখকর কোনো বার্তা দেয়নি। স্থানীয়রা দু’বারই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘ঘরের ছেলেকে’। এর মধ্যে প্রথমবার আসনের পবা উপজেলার, দ্বিতীয়বার মোহনপুর উপজেলার। তাই এবারর নির্বাচনেও বহিরাগতদের প্রাধান্য না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

কারণ স্থানীয়রা মনে করেন, ঘরের ছেলে নির্বাচিত হলে অন্তত বিপদে-আপদে তাকে কাছে পাওয়া যাবে। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ বোঝেন না। তাদের অভিমত, অন্তত যেনো কোনো সমস্যা নিয়ে রাজনীতিবিদদের কাছে যেতে না হয়। কারণ তাতে উপকারের চেয়ে ভোগান্তিই বেশি!
সূত্র: বাংলানিউজ২৪ডটকম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.