বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে আইএমেএফের কারনেঃওয়াশিংটনে অর্থ মন্ত্রী
নিউজবিডি ইউএসডেস্কঃ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ তাদের নীতির পরিবর্তন এনেছে। এতদিন তারা উন্নত দেশগুলোর মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিত। এখন তারা বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর কথা বেশি শোনে, গুরুত্ব দেয়।
এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ এই দেশগুলোতে বাস করে। ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের শেষ দিন রোববার এই সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের চরিত্র বদলেছে মন্তব্য করে তারা এখন বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দেয়। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের আসন্ন ঢাকা সফরকেও সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের নীতির এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, “উন্নত দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধি একটা জায়গায় আটকে গেছে। অনেক দেশের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে।
“অন্যদিকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আমরা গত কয়েক বছর ধরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৭ শতাংশে পৌঁছেছি। এবার আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হবে।” “এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। আর সেটি হচ্ছে, এই প্রবৃদ্ধির সুফল বিশ্বের গরিব মানুষ পাচ্ছে।” এ সব বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এখন বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করছেন মুহিত। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সংস্থা দুটি ঠিক কাজটিই করছে বলে অভিমত তার। “বিশ্ব ব্যাংক এখন যে কোনো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেয়,” বলেন তিনি। সংস্থা দুটির কাজের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এখন একই কাজ করছে। দুই সংস্থাই এখন ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করছে। গ্রোথের (প্রবৃদ্ধি) জন্য কাজ করছে। আইএমএফকে এতদিন নীতি নির্ধারণী-নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়ই দেখা যেত।”
বিশ্ব ব্যাংক-আইএএফের এবারের সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী পেল-এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, “আমি আগেই বলেছি, এ দুই সংস্থা এখন বাংলাদেশকে বেশ গুরুত্ব দেয়। পৃথিবীর কম দেশই আছে টানা ছয়-সাত বছর ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা সেটা করে দেখিয়েছি…। এখন ৭ শতাংশের বেশি করছি। “আমরা শনৈ শনৈ করে উন্নতি করছি। ব্রিটেন, ফ্রান্স ২০০ বছরে যা করতে পারেনি; আমরা ৪৫ বছরেই তা করেছি। এসব কারণেই বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সব বৈঠকে এখন আমাদের গুরুত্ব দেয়। এবারের সম্মেলনেও তেমনটি হয়েছে।”
বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর নিয়ে মুহিত বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা যে সাফল্য দেখিয়েছি, যে উন্নয়ন করেছি, তা সরেজমিনে দেখতেই কিন্তু ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি।” সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরই এবারের সম্মেলনে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি।
এর বাইরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা আগের চেয়ে বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মুহিত বলেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এরমধ্যে ছাড় করেছে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ ছাড় অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর আগে কোনো বছরই ১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেনি বিশ্ব ব্যাংক। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরসহ আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে তিন দিনের এই সম্মেলনে ১৫ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি।
বৈঠক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ মাল্টিল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি ‘মিগার’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। যোগ দিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ফোরামের বৈঠকে। আর বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের আসন্ন সফর তো আছেই।