বাংলাদেশ থেকে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ পেল বিশ্ব

1,253
বাংলাদেশ থেকে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ পেল বিশ্ব। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে ব্যাঙটি আবিষ্কার করেন বন্য প্রাণী গবেষক মার্জান মারিয়া ও হাসান আল-রাজী। তবে এই গবেষণার কাজটি রাশিয়া থেকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন রাশিয়ান প্রফেসর নিক পয়ারকভ।

গবেষকেরা এই ব্যাঙের নাম দিয়েছেন ‘সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ’ এবং ইংরেজি নাম Sylheti Litter Frog । গবেষণা পত্রটি বিখ্যাত জার্নাল অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে গত শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন এই ব্যাঙের শরীরে রং ধূসর থেকে কালচে, শরীরে কালো ছোপ রয়েছে। এই রং তাদের ঝরা পাতার সাথে মিশে থাকতে সাহায্য করে। এদের পেছনের পা তুলনামূলকভাবে ছোট তাই খুব বেশি জোরে লাফাতে পারে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের চোখের ওপর অর্ধেক লাল রঙের যেখানে আলো পড়লে উজ্জ্বল প্রতিফলন তৈরি হয়।

গবেষক দলের সূত্রে জানা যায়, নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ আবিষ্কারের আগে বাংলাদেশে মোট ৫৩ প্রজাতির ব্যাঙ ছিল বর্তমানে এটি আবিষ্কারের ফলে ৫৪ টি হয়েছে। এবং বিশ্বে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি ব্যাঙ।

গবেষক দলের সদস্য হাসান আল-রাজী জানান, এই ব্যাঙটিকে Leptobrachium smithi মনে করা হতো কিন্তু Leptobrachium smithi বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। এই গণের আরও দুটি ব্যাঙ পাওয়া যায় Leptobrachium rakhinense অন্যটি Leptobrachium tenasserimense। এসব কিছু চিন্তা করে আমাদের মনে হয় যে আমাদের দেশে Leptobrachium গণের যে প্রজাতিটি আছে সেটা আসলেই Leptobrachium Smithi হতে পারে না। এরই মাঝে আমাদের সাথে রাশিয়ান প্রফেসর নিক পয়ারকভের যোগাযোগ হয়। তিনি আমাদের এই ব্যাঙ নিয়ে একই কথা ভাবছিলেন। আমরা তিনজন মিলে একটা গবেষণা পরিকল্পনা করে জুন ফিল্ডের কাজ শুরু করি।

ফিল্ডে তথ্য সংগ্রহের পর বাংলাদেশের একটি ল্যাবেই আমরা সব কাজ করি।  আমাদের পুরো কাজটি রাশিয়া থেকেই সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন প্রফেসর নিক পয়ারকভ। এই Leptobrachium sylheticum, নতুন প্রজাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা এই ব্যাঙের শারীরিক পরিমাপ, এদের মলিকুলার বিশ্লেষণের পাশাপাশি এদের ডাকের বিশ্লেষণেও করেছি যা এই গণের অন্য ব্যাঙদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গবেষক দলের অপর সদস্য মার্জান মারিয়া জানান, এই ব্যাঙগুলো মূলত বনের ভেতরে পাওয়া যায়। বনের ঝরা পাতার মধ্যে ওরা থাকে। ঝরা পাতার মাঝে এরা এমন ভাবে মিশে থাকে যে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোন ব্যাঙ আছে। তবে প্রজননের সময় এরা এই ঝরা পাতা ছেড়ে ছড়ায় নেমে আসে। ছড়ার প্রবহমান স্বচ্ছ পানিতে এরা ডিম দেয়। ডিম ফুটে ব্যাঙাচি গুলো ছড়ার পানিতে বড় হয়। ঝরা পাতায় থাকে বলে এই ব্যাঙকে ইংরেজিতে Litter Frog বলে। তাই আমরা আমাদের এই ব্যাঙের ইংরেজি নাম দিয়েছি Sylheti Litter Frog আর বাংলা নাম সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ।

তবে এই ব্যাঙ হুমকিতে আছে জানিয়ে গবেষক হাসান আল-রাজী জানান,  এই ব্যাঙ আবিষ্কার করতে পেরে অনেক আনন্দিত কিন্তু একই সাথে দুঃখিত। কারণ জীববৈচিত্র্য ভরপুর লাউয়াছড়া বন তার রূপ হারাচ্ছে। এই ব্যাঙসহ এই পর্যন্ত লাউয়াছড়া বন থেকে বিশ্বের জন্য দুটি নতুন ব্যাঙ আবিষ্কার করা হয়েছে এবং আরও পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বনের যেই ছড়া গুলোতে এই ব্যাঙগুলো প্রজনন করে সেই ছড়াগুলোর বেশির ভাগ শুকিয়ে গেছে। এমনটা হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সিলেটের লাল চোখ ব্যাঙ আর লাউয়াছড়া বনে পাওয়া যাবে না। এই ব্যাঙগুলো সংরক্ষণের জন্য এই ছড়াগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.