বাংলার নায়াগ্রা নাফাখুম
ইব্রাহীম আরাফাত খানঃ
বাংলার একটি বিস্ময়কর সৌন্দর্যের নাম নাফাখুম ঝর্ণা। প্রতি বছর ভ্রমণ পিয়াসী মানুষেরা ছুটে যান বান্দরবানের নাফাখুম ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এই শীতে আপনিও ঘুরে আসুন বান্দরবানের থানচি উপজেলায় অবস্থিত রূপের রানী নাফাখুম ঝর্ণা থেকে।
বান্দরবানের প্রাণ সাঙ্গু নদী পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অজস্র ছোট খুম বা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। রেমাক্রিখুম ও নাফাখুম এর মধ্যে অন্যতম। রেমাক্রি নদীতে এক ধরনের মাছ পাওয়া যায়- যার নাম নাফা। মাছটি সব সময় স্রোতের বিপরীতে চলে। স্থানীয় মারমা ভাষায় খুম অর্থ ঝর্ণা। এ থেকেই নাফাখুম ঝর্ণার নামকরণ হয়েছে।
উপরে খোলা আকাশে রৌদ্র-মেঘের লুকোচুরি আর নিচে খরস্রোতা নদীর ধেয়ে আসা ছল ছল শব্দ। সব মিলিয়ে এ যেন স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। চারিদিকে পাহাড়-পর্বত, নদী ও পাথুরে খাল দেখে যে কারো মনে হতে পারে যেনো শিল্পীর আকা কোনো ছবি চোখের সামনে ভাসছে। বর্ষাকালে ঝর্না দিয়ে তীব্র গতীতে বড় হয়ে পানি নিচের দিকে পতিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে তীব্রতা কমে যায় ও ঝরনার আকার ছোট হয়ে আসে। তবে যারা নাফাখুম ঝর্নার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চান তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করলে তা দেখতে পারবেন। এই সময় উপর থেকে আছড়ে পড়া পানির প্রচন্ড আঘাতে ঝর্নার চারপাশে অনেকটা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার সেই সাথে উপর থেকে নিচে পানি পতিত হওয়ার আওয়াজ তো রয়েছেই।বাতাসের সাথে উড়ে যাওয়া পানির বিন্দু পর্যটকদের দেহ মন সব আনন্দে ভিজিয়ে দেয়। যা কিনা মুহুর্তের মধ্যে যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম। এই স্থানের কিছু কিছু পাহাড় বেশ উচু। দেখে মনে হবে সেই সেই পাহাড়গুলোর চুড়া মেঘের আবরণে ঢাকা পড়েছে। পাহাড়ের ঢালে মাঝে মাঝে রয়েছে টিনের ঘরবাড়ি। এই এলাকার নদীগুলোর গভীরতা খুব কম। কোনো কোনো স্থানে পানির নিচের মাটি দেখা যায়। তবে নদীগুলো সবসময় প্রচন্ড স্রোত থাকে। তাই পথ চলতে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বান্দরবানের সরাসরি বাস পাওয়া যায়। ৭-৮ থেকে ঘণ্টায় বান্দরবানে পৌঁছানো যায়। বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিঃমিঃ। রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা, ভাড়া নেবে প্রায় ৪ হাজার টাকা। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মত নদীতে যথেষ্ট গভীরতা থাকেনা। তখন বৈঠাসহ নৌকাই একমাত্র বাহন।
সাথে রাখতে পারেনঃ
পাহাড়ি এলাকায় মশা যাতে না কামড়ায় সে জন্য মলম বা স্প্রে, ছাতা, টয়লেট টিস্যু, হাফ বা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, পিচ্ছিল পথে হাঁটার উপযোগী স্যান্ডেল, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ক্যাপ, টি-শার্ট, টর্চলাইট, হেডল্যাম্প ইত্যাদি সাথে রাখা অত্যন্ত জরুরী।
আর দেরী না করে আজই ঘুরে আসুন।