বিএনপি পাওয়া ৫টি আসনই উত্তরাঞ্চলে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সারা দেশে যে ৫টি আসন পেয়েছে তার সবক’টিই উত্তরাঞ্চলে। দীর্ঘ দিন ধরে উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে ব্যাপক আধিপত্য ছিল বিএনপি-জামায়াতের। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে এ অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ভর করেছে গভীর হতাশা।
অনেকে রাজনীতি ছাড়ার চিন্তা করছেন। আবার কেউ কেউ দলবদলের কথাও ভাবছেন। উত্তরাঞ্চলে বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও ধরাশায়ী হয়েছেন। পেয়েছেন নামমাত্র ভোট। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই তারা দলীয় নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের শীর্ষ নেতার বাড়িতে গিয়েও সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। ফল প্রকাশের পর থেকেই নেতারা গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলছেন। পরাজিত নেতাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের ৭২টি আসনের মধ্যে বিএনপি বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি করে এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি মাত্র আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এ অঞ্চলের বাকি ১৩ জেলাতে বিএনপি এবার বলতে গেলে ধুয়ে-মুছে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেদের ঘাঁটিতে এমন শোচনীয় পরাজয় মানতে পারছেন না। কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে শুধু তারা সান্ত্বনা খুঁজছেন এখন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বিএনপি উত্তরাঞ্চলের ৭২ আসনের মধ্যে এককভাবেই ৪৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। আওয়ামী লীগ পেয়েছিল মাত্র ৭টি আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সারা দেশে যে মোট ৩০টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল তার মধ্যে রাজশাহী বিভাগে পেয়েছিল ৮টি আসন। রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের একটিতেও সেবার বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৫টি আসনে বিজয়ী হলেও প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান খুবই হতাশাজনক।
উত্তরাঞ্চলে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ও প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকল্প পথে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহীতে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নির্বাচনের শুরুতে প্রার্থী মনোনয়নের সময়ই ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়।
প্রার্থীরা ন্যূনতম প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে নামেন। একই সঙ্গে শুরু হয় পুলিশি নির্যাতন-হয়রানি ও আদালতের লড়াই। নেতাকর্মীরা নিজেদের বাড়িঘরেও থাকতে পারেনি। উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি আসনে উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকেই জেলে ভরা হয়েছে।
তারা এখনও কারাগারে। ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারা দেয়ার মতো নেতা ছিলেন না। এ সুযোগে দুপুরের পর কেন্দ্রগুলো ফাঁকা করে দিয়ে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। তার দাবি, ভোটে অরাজকতার এ চিত্র সারা দেশের চেয়ে উত্তরাঞ্চল আলাদা নয়। এ দায় ভোটারদের ওপর দিতে চাই না।
এমন বিতর্কিত নির্বাচনের দায় কমিশনের। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করেছে। ঠাকুরগাঁও-৩ নম্বর আসনে বিএনপির জাহিদুর রহমান ধানের ধীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে মির্জা ফখরুল ১ লাখ ভোটে পরাজিত হন। যদিও ‘অভিবাসী’ প্রার্থী হিসেবে মির্জা ফখরুল বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২ লাখ ৬ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এটি বরাবরই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসন।
অনেকের মতোই বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু নিজ জেলা লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে ধরাশায়ী হন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী-২ (সদর) আসনে সম্মানজনক ভোট পেলেও জিততে পারেননি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিপুল ভোটে হারেন। নাটোর-২ (সদর) আসনে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (সদর) আসনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশীদ তার আসনটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (গোমস্তাপুর-ভোলাহাট-নাচোল) আসনে বিএনপির নতুন প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বিজয়ী হন ধানের শীষ নিয়ে। এ দুই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ব্যক্তিগত দুর্বলতার কারণে বিএনপি প্রার্থীরা সহজেই জয়ী হন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রবীণ বিএনপি নেতা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের কাছে হেরেছেন।