বিএনপি ২৪২ আসন রেখে জোটকে দিল ৫৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের জন্য ৫৮টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনে রোববার দলটি ৩০০ আসনে জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ করেছে।
নিজেদের জন্য বিএনপি ২৪২টি আসন রেখেছে। তবে এই জোটের ২৯৮ প্রার্থীই বিএনপির জন্য সংরক্ষিত ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বাকি দুই প্রার্থীর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ নিজ দলের ‘ছাতা’ প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এবং কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশন মনোনীত প্রতীকে ভোট করবেন।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি ও জোটের শরিকরা ৩০০ আসনে প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। এর মধ্যে ২৯৮টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২৫৯টি আসনে এককভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীসহ শরিকদের ৪১টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল তারা।
এর আগে রাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটও নির্বাচন কমিশনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এতে নিজেদের জন্য ২৫৮ আসন রেখে বাকি ৪২টি জোটের শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছে দলটি।
এবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে দুটি অংশ রয়েছে। আগে থেকে ২৩ দলের সমন্বয়ে গঠিত ২০ দল এবং নির্বাচন ঘিরে কয়েক মাস আগে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপি ২০ দলের শরিকদের এবার ৩৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সর্বোচ্চ ২২টি আসন পেয়েছে। এলডিপি ৫, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৩, খেলাফত মজলিস ২, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২ এবং কল্যাণ পার্টি, বিজেপি, এনপিপি, লেবার পার্টি ও পিপিবি প্রত্যেক দলকে একটি করে আসন দেয়া হয়েছে।
আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রত্যেকে ৪টি করে আসন পেয়েছে।
বিএনপি জোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন যারা
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন— অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), মোস্তফা মহসীন মন্টু (ঢাকা-৭), এএইচএম খালেকুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৮), রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), অধ্যাপক আবু সাইয়্যিদ (পাবনা-১), আ ম সা আমিন (কুড়িগ্রাম-২) ও সুলতান মোহাম্মদ মনুসর আহমেদ (মৌলভীবাজার-২)।
আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন, আ স ম আব্দুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), আব্দুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪), শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ঢাকা-১৮) ও সাইফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩)।
বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন, তার মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮), লিয়াকত আলী (টাঙ্গাইল-৪), ইকবাল সিদ্দিকী (গাজীপুর-৩) ও মনজুরুল ইসলাম (নাটোর-১)।
মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন, মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), এসএম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), শাহ রহমত উল্লাহ (রংপুর-১) ও নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর (বরিশাল-৪)।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে বিজেপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭); এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২); পিপিবি রিটা রহমান (রংপুর-৩); কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম (চট্টগ্রাম-৫); এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ (চট্টগ্রাম-১৪), মো. নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১) ও সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ (ময়মনসিংহ-১০)।
খেলাফত মজলিশ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪), আবদুল বাসিদ আজাদ (হবিগঞ্জ-২); জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শাহিনুর পাশা চোধুরী (সুনামগঞ্জ-৩) ও মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫)।
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন টিআই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২)। আর লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান (পিরোজপুর-২)।
জামায়াতে ইসলামী থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন, ডা. শফিকুর রহমান (ঢাকা-১৫), রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), মিয়া গোলাম পারোয়ার (খুলনা-৫), আবুল কালাম আজাদ (খুলনা-৬), সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (কুমিল্লা-১১), শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম- ১৫), হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সাবাজার-২), আবদুল হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২), আবু হানিফ (দিনাজপুর-১), আনোয়ারুল ইসলাম (দিনাজপুর-৬), মনিরুজ্জামান মন্টু (নীলফামারী-২), আজিজুল ইসলাম (নীলফামারী-৩), মাজেদুর রহমান (গাইবান্ধা-১), মুহাদ্দিস আবদুল খালেক (সাতক্ষীরা-২), গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪), শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-১), আবদুল ওয়াদুদ (বাগেরহাট-৩), আবদুল আলীম (বাগেরহাই-৪), আবু সাঈদ মো. সাহাদাত হোসেইন (যশোর-২), মতিউর রহমান (ঝিনাইদহ-৩), ইকবাল হোসেইন (পাবনা -৫) ও গোলাম রাব্বানী (রংপুর- ৫)।
এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন পাবনা-১ আসনে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নুরুল ইসলাম বুলবুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
পাবনা-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়্যিদ।
রংপুর-৫ আসনে নাগরিক ঐক্যের মোফাখরুল ইসলামকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে এসে এখানে জামায়াত নেতা গোলাম রাব্বানীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছে।