‘বীরের বেশে’ ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের নেতা-কর্মীরা; বিএনপি-তে হতাশা
নিউইয়র্ক (ইউএনএ):
সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচনে দল ও দলীয় প্রার্থীদের জন্য প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ শেষে ‘বীরের বেশে’ যুক্তরাষ্ট্র ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে একাদশ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনাগ্রের পাশাপাশি হতাশা-ই বেশী লক্ষ্য করা গেছে। দলের হাতে গোনা কয়েকজন নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ সফল করেছেন বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। আর বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা দেশে গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এবং হাতাশ হয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর রোববার এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ও দীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট ২৮৬ আসনে জয়লাভ করে।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসনে জয়লাভ করে এবং নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ রয়েছে ঐক্যফ্রন্ট-এর। খবর ইউএনএ’র।
এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে পৃথক পৃথক ভাবে, আবার দলীয়ভাবে সাক্ষাৎ করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
জানা গেছে, বাংলাদেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আগে থেকেই দল ও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। দলীয় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ৫০০ শতাধিক নেতা-কর্মীর বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও দলীয় সূত্র মতে আড়াই শতাধিক দলীয় নেতা-কর্মী বাংলাদেশে গিয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রচালনায় অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মী বহুল আলোচিত সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট মনোনীত প্রার্থী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেনের পক্ষে সিলেট প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ সফর করেন বা এখনো দেশে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী ও আইরীন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান বজলু চৌধুরী, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, কার্যকরী পরিষদ সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা, খোরশেদ খন্দকার, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নবী, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নূরুজ্জামান সরদার, সহ সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা জামাল হোসাইন, ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, যুবলীগ নেতা মামুন খান, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেড চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী (এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান) ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নবী দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
এদিকে ড. মোমেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, নিউইয়র্ক প্রবাসী, সিলেট পৌর সভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সহ অনেক প্রবাসী।
অপরদিকে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে কমিটি বিহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মধ্যকার দ্বিধা-বিভক্তি ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়হীনতার প্রেক্ষপটে দলের অনেক নেতা-কর্মী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আগ্রহী থাকলেও নানা দিক বিবেচনা বিশেষ করে ‘সরকার ও সরকার দলীয়’ নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলা-মামলার আশংকায় হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ নেতা-কর্মী বাংলাদেশ গমণে বিরত থাকেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
তাদের প্রশ্ন- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের হামলা-মামলার ভয়ে যেখানে দেশের শত শত বিএনপি নেতা-কর্মী ভীত, ঘর ছাড়া সেখানে প্রবাস থেকে গিয়ে নিরাপদে থাকারই বা নিশ্চয়তা কোথায়। তাই সবদিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র অনেক নেতা-কর্মী দেশে গিয়ে নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরও যারা দেশে গিয়ে মনোনয়ন চেয়েছেন বা নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি আলহাজ সোলায়মান ভূইয়া, বিএনপি নেতা পারভেজ সাজ্জাদ প্রমুখ।