বুয়েটে ৩ সাংবাদিককে আটকে রেখে ছাত্রলীগের মারধর

124

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে কর্মরত তিন সাংবাদিককে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের শিকার সাংবাদিকরা ছাত্রলীগের কয়েকজন পদধারী নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে এ ঘটনা ঘটে।

student-leaugh-20181216160248মারধরের শিকার তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক জনকণ্ঠ’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মুনতাসির জিহাদ, কালের কণ্ঠ’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও ইত্তেফাক’র বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার কবির কানন।

অভিযুক্তরা হলেন- বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নাফিউল আলম ফুজি, প্রচার সম্পাদক নিলাদ্রি নিলয় দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহমুদ অয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এসএম মাহমুদ সেতু।
মারধরের শিকার সাংবাদিকরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বুয়েটে যান তারা। হলে প্রবেশ করতে গেলে গেটের দারোয়ান তাদের পরিচয় জানতে চান। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে দারোয়ান জানান, ভেতরে ঢুকতে ছাত্রলীগের নিষেধ আছে। একপর্যায়ে তাকে বুঝিয়ে তারা হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। হলটিতে প্রবেশ করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং হলের ভেতরে প্রবেশের কারণ জানতে চান। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অপহরণের খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ওপর চটে গিয়ে তাদের মারধর করেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, পত্রিকার পরিচয়পত্র ও মানিব্যাগ কেড়ে নেন। সেখান থেকে তাদের হলের ক্রীড়া কক্ষে নেওয়া হয়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কক্ষটিতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তীতে ঘটনাটি জানাজানি হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মারধরের শিকার ঢাবির কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধরে নিয়ে গেছে, এমন তথ্য পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। কারণ ঘটনাটির বিষয়ে একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছিল। হলের ভেতর প্রবেশ করার পরেই হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আমাদের মারধর করে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম মাহমুদ সেতু বলেন, ‘ঘটনাটি একবারেই সত্য নয়। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ছাত্রলীগের একটি কর্মসূচিতে ছিলাম।’

ঘটনার জন্য শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী-উস সানী ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এসে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। কিন্তু, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবেন না বলে জানান।

মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে জামী-উস সানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেখানে কাউকে মারধর করা হয়নি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে কয়েকজন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা দুঃখজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বুয়েটের শেরে বাংলা হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে রবিবার ঢাবি সাংবাদিক সমিতি একটি বিবৃতি দিয়েছে। সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নয়ন স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় সারাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক মাসে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অথচ একটি ঘটনাতেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দায়সারা দুঃখ প্রকাশ করেই তারা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এছাড়া বিবৃতিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.