বেতন-কারখানা বন্ধের হুমকি বিজিএমইএ’র
আগামীকাল সোমবার আন্দোলনরত শ্রমিকেরা কাজে না ফিরলে মজুরি এবং সংশ্লিষ্ট কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
রোববার বিজিএমইএ ভবনে ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ‘বেতন বৈষম্য নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকলেও একটি মহলের ইন্ধনে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।’
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগামীকাল সোমবার থেকে যদি আপনারা কাজে যোগ না দেন, তাহলে আপনাদের কোনো মজুরি দেয়া হবে না। শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা অনুযায়ী, কারাখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে।’
নতুন মজুরি কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে চলমান মজুরির চেয়েও পারিশ্রমিক কমের অভিযোগ তুলে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা।
আবার অনেক কারখানায় নির্ধারিত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বস্তবায়ন হয়নি বলেও অভিযোগ শ্রমিকদের।
এই অভিযোগের বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘মজুরির ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে যদি কোনো সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা বিবেচনার কথা জানিয়েছে সরকার গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি। রোববার বিকেলে ৩টায় মন্ত্রণালয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক হবে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের মেনে নিতে হবে। এরপরেও যদি কেউ কাজে যোগ না দেন, তাহলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বেতন দেয়া হবে না।’
অনেক কারখানায় নতুন মজুরি কার্যকর হয়নি— এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব কারখানায় মজুরি কাঠামো বস্তবায়ন হয়েছে, সেখানেই বিক্ষোভ হচ্ছে।’
সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, ‘এই শ্রমিক বিক্ষোভে একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার। এরা দেশীয় হতে পারে; বিদেশিও। যখনই আমরা উপরে উঠার চেষ্টা করি, তখনই একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনের ফলে একেকজনের লোকসান একেকরকম। সবচেয়ে বড় লোকসান ইমেজের। আর্থিক ক্ষতি কোনো না কোনোভাবে পুষিয়ে নেয়া যায়। আমরা পুষিয়ে নিতে পারি। কিন্তু, বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটিই বড় ক্ষতি। একবার ইমেজের ক্ষতি হলে, সেটি পুষিয়ে নিতে ২ থেকে ৩ বছর লেগে যায়।’
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বলেছিলাম একটি মহল উস্কানি দিচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো, এখনো সে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পোশাক খাতকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মজুরি কাঠামো নিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। এ বিষয়ে সরকার গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। আপনাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থন্বেষী মহল শিল্পে আপনাদের ব্যবহার করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন দেয়া হচ্ছে। কিছু বত্যয় হলে সেখানেও দেয়া হবে। তবে আমরা দেখেছি, যেখানে নতুন মজুরি অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়েছে, সেসব কারখানায় বেশি ভাংচুর করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি ও পোশাক ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএ পরিচালক আবু নাছের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।