ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বি,সি,সি,ডি,আই বাংলা স্কুলের  ২৬তম “উপহার বাংলাদেশ মেলা ২০১৬”

263

 

এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ভার্জিনিয়াঃ গত শনিবার, ২২শে অক্টোবর, ২০১৬ ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে গানষ্টোন থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল-এর ২৬তম বার্ষিক “উপহার বাংলাদেশ মেলা ২০১৬”।

14874854_1130890930281190_1826382285_n

বিপুল লোক সমাগমে, চমৎকার আয়োজনে এবং হৃদয়গ্রাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এক অনন্য সন্ধ্যা উপহার দিয়েছে বিসিসিডিআই। আর “অনন্য আয়োজন” বলার পেছনে যে ভাবনাটি আমাকে আচ্ছন্ন করেছে, তাহল- আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ত করার অভিলাষে স্বদেশপ্রেমী স্বপ্নের এক প্রত্যয়ী পরিস্ফুটন দেখতে পেয়েছি আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী এবং তরুন-তরুনীদের পরিবেশনায় ।

14858561_1130890776947872_734922679_o

আমাদের ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী-আমেরিকান নতুন প্রজন্ম যে স্বদেশী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ছোঁয়ায় সুন্দরভাবে গড়ে উঠছে, তাদের প্রাঞ্জল দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনায় তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল সুপরিকল্পিত ভাবনার প্রতিফলন… সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থেকে শুরু করে বিসিসিডিআই-এর সাথে সম্পৃক্তদের অবদানের জন্য তাদের অভিনন্দিত করা, বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের উন্নয়ন প্রয়াসে সহভাগিতা ও সহযোগিতার জন্য হিতাকাংখীদের সম্মান্নিত করা, পৃষ্ঠপোষকদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং সেচ্ছাসেবক ও অভিবাবকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনসহ বিভিন্ন দিকে আলোকপাত করে পুরো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা এবং পরিবেশনায় তাদের ঐকান্তিক কর্মপ্রয়াসের ছাপ রেখেছেন এবং সুস্থধারার সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও  চর্চার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে পথচলার একটি সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের এই আত্ননিবেদিত কর্মপ্রয়াস সত্যি প্রশংসনীয় এবং গভীরভাবে ধন্যবাদার্য্য। বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।

14872579_1130891060281177_914520736_n

বিসিসিডিআই আয়োজিত এই “উপহার বাংলাদেশ মেলা”র পুরো অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং সাবলীলভাবে সঞ্চালনা করেন শামীম চৌধুরী, আতিয়া মাহজাবিন এবং শতরুপা বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানের প্রথমেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে দু’দেশের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করা হয়। এর পরপরই শুরু হয়ে যায় বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের বাৎসরিক সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান ।

14886312_1130891100281173_1853331843_n

যেসব বিষয়ের উপড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল, তাহলঃ-   শুদ্ধ বাংলা বানান, বাংলা শব্দ, বাংলা কবিতা আবৃত্তি, আরবী, পালি এবং সংস্কৃত আবৃত্তি, সঙ্গীত এবং নৃত্য প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন করেন এ্যটর্নি সুদীপ বোস, হীরণ চৌধুরী, বুলবুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলম এবং রোকসানা পারভীন।

অতঃপর বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের  অবদানের স্বীকৃতি ও কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়ে তাদের সম্মাননা জানান হয়। যারা এই সম্মাননা পেলেন, তারা হলেনঃ   সুরঞ্জন দত্ত, আতিয়া মাহজাবিন, নিভা বড়ুয়া, নাসের চৌধুরী, জয়ীতা দাসগুপ্ত, মুক্তা বড়ুয়া, তানিয়া খান, ফারজানা সুলতানা, সালমা আক্তার, নিসালা রড্রিগো।

14825755_1130890950281188_1545668185_n

এর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব – “আনন্দধারা”। বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের সঙ্গীত একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীরা চমৎকার সঙ্গীত পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করে।  বাংলা স্কুলের সঙ্গীত একাডেমির সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন স্কুলের সঙ্গীত শিক্ষক  ও পরিচালক, নাসের চৌধুরী। তবলায়- আশীষ বড়ুয়া, বাঁশীতে- মোহাম্মদ মজিদ, গীটারে- মোহাম্মদ হুদা, মন্দিরায়- জয় দত্ত বড়ুয়া। যারা এই সঙ্গীত পর্ব  “আনন্দধারা’য়” অংশগ্রহন করে, তারা হলঃ  সুশান্তিকা, ফারহান, সাঈদ, প্রভা, তানিশা, অনিতা, অহনা, নোরা, ফারিয়েল, অঙ্কিতা, আদিত্য, অপ্সরা, আনন্দী, অবন্তি, বাধন, ফারজান, তাসনুভা, তাজ, সুসময়, স্বপ্নীল, অতসী, স্নেহা, সৃজন, আঞ্জুম, এ্যাম্বার, এমা, দিব্য, কৌশিক, বিজন, রণিতা, মুহিত, নিয়ন্তি, অনন্ত, হৃদিতা এবং শ্রেয়সী।

14877030_1130890780281205_1194739624_n

“আনন্দধারা”র দ্বিতীয় পর্বে  সঙ্গীত পরিবেশনায় যারা অংশগ্রহন করেন, তারা হলেন- নোরা, অঙ্কিতা, আদিত্য, অপ্সরা, আনন্দী, অবন্তী, অনন্ত এবং  হৃদিতা ।  উল্লেখ্য, সঙ্গীত পরিবেশনের সময় গানের সাথে মিল রেখে  পেছনের ব্যাক প্রজেকশন স্ক্রীনে চলছিল চমৎকার এ্যানিমেশন, যা ছিল অত্যন্ত সুন্দর একটি সংযোজনা এবং বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক।

অত:পর  বিসিসিডিআই-এর সভাপতি মিঃ সঞ্জয় বড়ুয়ে তার স্বাগত বক্তব্য পেশ করে সবাইকে সংগঠনের অগ্রযাত্রায় সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বিসিসিডিআই-এর এই মহতী পথচলায় পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বিসিসিডিআই-এর কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যদের দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

বিসিসিডিআই এ পর্বে কম্যুনিটির বিশেষ কিছু ব্যক্তিদের বিসিসিডিআই-এর সাথে  তাদের সম্পৃক্ততা, সহযোগিতা ও বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা জানান হয়। যাদেরকে সম্মানিত করা হয়, তারা হলেনঃ

নাজির ইরফান, সি,ই,ও- টেগ্রা আই,টি, সল্যুশন (গ্র্যান্ড স্পন্সর), আনিস খান (রিয়েলটর- গোল্ড স্পন্সর), ফরেস্ট ফ্যামিলি ডেনটিষ্ট্রি (সিলভার স্পন্সর),  ডঃ আরিফুর রহমান ও মেরিনা রহমান, ডঃ ফাইজুল ইসলাম ও ইনারা ইসলাম, মোহাম্মদ এস আলম, ডঃ মাজহারুল হক, আশীষ বড়ুয়া, জসীম উদ্দিন আহমেদ, আরুন রশিদ (আলাউদ্দিন রেস্তোরা), আলহজ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ এবং রাজীব বড়ুয়া (আনন্দী ফটোগ্রাফী)।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের নৃত্য একাডেমির পক্ষ থেকে একটি চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করা হয়। যারা নৃত্য পরিবেশনায় অংশগ্রহন করে, তারা হল-    অপ্সরা, অহনা, তাসনুভা, তানিসা, অনিতা, অবন্তি, সুশান, আনন্দি, নাজিয়া, রণিতা, অঙ্কিতা, অতসী, মরিয়ম, নাজিলা, নিয়ন্তি, সাব্রিনা, ইশান, নোরা এবং তাজ। নৃত্যের কোরিওগ্রাফীতে ছিলেন বিসিসিডিয়াইয়ের নৃত্য শিক্ষিকা/নৃত্য পরিচালক মুক্তা বড়ুয়া।  তাদের নৃত্যের ঝংকারে সবাই বিমোহিত হয়ে মুহুর্মুহু করতালিতে তাদের অভিনন্দন জানায়।

নৃত্য পরিবেশনার পর পর ছিল তরুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিশেষ অর্জনের জন্য সম্মাননা প্রদান। এপর্বে এ্যনি বড়ুয়া (মিস বাংলাদেশ আমেরিকা) এবং কারিফ শাহির উল্লাহকে (স্পোর্টস) তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অর্জনের জন্য এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ্যনি বড়ুয়া এবছরে “মিস বাংলাদেশ ইউ এস” হওয়ার গৌরব অর্জন করায় তাকে সম্মানিত করা হয় এবং কারিফকে সম্মানিত করা হয় কাপ স্ট্যাকিং-এ অসামান্য পারদর্শীতা প্রদর্শনের জন্য।  বক্তব্যে এ্যনি তার এই অর্জনের জন্য আনন্দিত এবং গর্বিত বলে উল্লেখ করে বলেন যে, এটা এখানকার বাংলাদেশী-আমেরিকান তরুন-তরুণীদের জন্য একটি ভাল এবং অনন্য সুযোগ এবং এর পথ ধরে তারা তাদের জীবনের জন্য ভাল কিছু অর্জন করার যাত্রা শুরু করতে পারেন। কারিফ কাপ স্ট্যাকিং-এ  তার হাতের নৈপুন্য ও ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন করে সবাইকে চমকৃত করে দেয়।

অনুষ্ঠানের আরেকটি বিশেষ অংশ ছিল বিসিসিডিআই-এর বাৎসরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত আসন্ন ফান্ড রেইজিং ডিনার প্রোগ্রাম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে এই মহতী কার্যে সাহায্য করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান ও অনুরোধ জানান। ওয়াশিংটনে সবার পরিচিত মুখ এবং বিসিসিডিআই-এর ফান্ড রেইজিং প্রোগ্রামের কনভেনর, রেদোয়ান চৌধুরী এবিষয়ে আলোকপাত করে যথাযথভাবে এর তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

অবশেষে শুরু হয় সন্ধ্যার অন্যতম প্রধান আকর্ষন- বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয় নজরুলগীতি শিল্পী অনুপ বড়ুয়ার  অনবদ্য সঙ্গীত পরিবেশনা।  টানা এক ঘন্টারও বেশী সময় ধরে তিনি পর পর অনেকগুলো জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করেন। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার এই পর্ব ছিল নজরুলের বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের সম্ভারে পূর্ন। অনুপ বড়ুয়ার সঙ্গীতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তবলায় সঙ্গত করেন রবি শংকর এবং তার তবলা সঙ্গতও ছিল অসাধারন। অনুপ বড়ুয়ার চমৎকার সঙ্গীত পরিবেশনায় মুগ্ধ  ছিল সকল শ্রোতাদর্শকবৃন্দ।

আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিসিসিডিআই-এর পক্ষ থেকে সকল শ্রোতা-দর্শকসহ সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, জনাব আমিনুল হুদা চৌধুরী।  এরপর সবাই যার যার গন্তব্যস্থানে পা বাড়ায় একটি সুন্দর এবং অনুপম সন্ধ্যার স্মৃতি নিয়ে, সফলভাবে আনন্দ  আয়োজনে সমাপ্ত হয় বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল আয়োজিত ২৬তম “উপহার বাংলাদেশ মেলা ২০১৬”!

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.