ভার্জিনিয়ায় বসন্ত উৎসব
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ভার্জিনিয়া
যেমন দেশের অঙ্গনে, তেমনি প্রবাসেও লেগেছে বসন্তের দোলা প্রবাসীদের মনের আঙ্গিনায়, প্রবাসেও বসন্তের আগমনে নানা রঙে রাঙ্গিয়ে তুলছে প্রবাসী বাঙ্গালীদের অনুভূতির আকাশ। বসন্ত বিহারে বিমোহিত প্রবাসী মন গুন গুন করে গেয়ে উঠে…… “বসন্ত বাতাসে সই গো… বসন্ত বাতাসে”। আর তাই প্রবাসে বসবাসরত বাঙ্গালীরা আনন্দ আবাহনে মেতে উঠছে বিশ্বে্র বিভিন্ন প্রান্তে, সুদূর প্রবাসভূমি থেকেও স্বদেশের ঐতিহ্যের ভালবাসায় উদ্বেলিত হয়ে উঠে সবার মন- মেতে উঠে বসন্ত বরণের আয়োজনে। নানা রঙ, নানা সাজ, বাহারী খাবার আর সঙ্গীতের সুরে একাকার হয়ে যায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন। প্রবাসী ব্যস্ত জীবনধারায় স্বদেশী উৎসব আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমাদের সংস্কৃতির শেকড়ে, আমরা ফিরে পাই আমাদের ফেলে আসা নিজেকে, অনুভবে ফিরে আসে ফেলে আসা স্বদেশের উৎসবমুখর দিনগুলির ছোঁয়া।
সম্প্রতি এমনি এক আনন্দ-ঘন বসন্ত উৎসব হয়ে গেল ভার্জিনিয়ায়। গত শনিবার, ১৪ই মে, ২০১৬ আক্তার হোসেন ও ফাহমিদা হোসেন শম্পা তাদের বাসভবনে আয়োজন করেছিলেন বসন্ত উৎসব। আত্মীয়-বন্ধুসহ কাছের মানুষগুলোকে ডেকেছিলেন বসন্ত উৎসবের এই আনন্দ আয়োজনে… ।
বসন্ত উৎসব বা এর আয়োজনের কথা এলেই আমাদের বাংলাদেশের পাশাপাশি মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের শান্তিনিকতনের প্রানের বসন্ত উৎসবের কথা। আমার কখনো শান্তিনিকেতনে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব দেখা হয়নি… তবে অনেকের লেখায় তা মূর্ত হয়ে উঠেছে, অনেকের ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী রঙ্গিন স্থিরচিত্রে স্মৃতিময় মূহুর্তগুলো ফুটে উঠেছে আবিরের রঙে-এ মেতে উঠা বসন্ত উৎসবে আসা মানুষগুলোর প্রানের আনন্দ। লেখাগুলো পড়তে পড়তে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেছি…… কল্পনায় দাঁড়িয়ে থেকেছি ঐ মানুষগুলোর ভিড়ে ওদের প্রানের আনন্দ অনুভব করার জন্য। যেন কানে বেজে উঠেছে সেই গান…
“রঙে রঙে রঙিল আকাশ, গানে গানে নিখিল উদাস –
যেন চলচঞ্চল নব পল্লবদল মর্মরে মোর মনে মনে।।
ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে”শুধু শান্তিনিকেতই নয়, বাংলাদেশের বসন্ত উৎসবের আয়োজনও আনন্দ আর রঙের আবিরে মেতে উঠে। বাঙ্গালী ললনারা যখন বসন্ত সাজে সেজে বরণ করেন নেয় বসন্তকে, যখন নবজীবনের সবুজ ছোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারিদিক, যখন কৃষ্ণচূড়া আর শিমুল-পলাশের আগুনঝরা রঙে সেজে উঠে প্রকৃতির খোঁপা, তখন যেন মনে এসে দোল দেয় সেই গান…
“ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে –
ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।।”
আর সবুজ শ্যমল বাংলাদেশের বসন্ত উৎসবের সেই ছোঁয়া প্রবাসের আমাদের মনেও দোলা দেয়। এখানে প্রকৃতির বুকে কৃষ্ণচূড়া-শিমুল-পলাশ ফোটে না, কিন্তু ফোটে আমাদের মনের সবুজ চত্বরে… তাইতো প্রবাসেও আমরা মেতে উঠি প্রানের আনন্দে, সাজিয়ে তুলি রঙে রঙে বসন্ত বিলাসে।
সেদিন আক্তার হোসেন ও ফাহমিদা হোসেন শম্পার আয়োজিত বসন্ত উৎসবে সবাই মেতে উঠেছিল বসন্ত বিলাসের আনন্দে। আত্মীয়-বন্ধুর উপস্থিতি, রকমারী খাবারের বাহার, চারিদিকে বসন্তের ছোঁয়ায় সাজসজ্জা, প্রানের উৎসবে সুরের মূর্ছনা- এসব মিলে সত্যিই সবাই হারিয়ে গিয়েছিল বসন্তের আনন্দে, উৎসব আবেশে। আক্তার হোসেন জানালেন, তার আত্মীয়-বন্ধুসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এসে সহভাগিতা করেছে তাদের এই আনন্দ আয়োজনে। যারা এসেছিলেন, তারা হলেনঃ ফোবানা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান জনাব নাহিদ চৌধুরী, বাংলাদেশ দূতাবাসের জনাব তৌফিক আহমেদ ও আক্তার হোসেন, ডঃ বদরুল খান, সীমা খান, জামিল খান, সুহাস, শেখ মিলন মাওলা, প্রজ্ঞা আহমেদ, শিব্বির আহমেদ, আবু রুমি, তমাল ঠাকুর, মোস্তফা হোসেন মুকুল, বুলবুল ইসলাম, শম্পা বনিক, বিপ্লব দত্ত, রাজিব বড়ুয়া প্রমুখ। শুধু মিলন উৎসব, আনন্দ আর খাবারের বাহার নয়, মেঘমেদুর আকাশের দিকে তাকিয়ে সবাই অনুভব করার চেষ্টা করছিল বহুদিন আগে ফেলে আসা দেশের সেই বৈশাখের বাদল ঝড়া উত্তাল আকাশ। বৃষ্টির ছোঁয়ায় সেদিন বসন্তের অনুভূতিতে সবাইকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এর সাথে ছিল সঙ্গীতের সুরে একাকার হয়ে জাওয়ার আয়োজন। যারা গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করলেন, তারা হলেন- সীমা খান, শেখ মিলন মাওলা, আবু রুমি, বুলবুল ইসলাম, মেট্রো বাউল, সাবরিনা রহমান, ফামমিদা হোসেন শম্পা, এমেলিয়া ঠাকুর, শিমুল ঘোষ প্রমুখ।
সারাদিনব্যপি আনন্দ আয়োজনে, মিলন-উৎসবে হারিয়ে গেল বসন্ত উৎসব আয়োজনের দিনটি, কিন্ত মনের মাঝে রেখে গেল স্মৃতির আলো-ছায়া। সবাই এক আনন্দ আয়োজনের অনুভূতি নিয়েই বেড়িয়ে গেল যার যার গন্তব্যের দিকে।