ভাড়াটে টোকাইরা হামলা করেছে: ড. কামাল

143

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ‘ভাড়াটিয়ারা’ হামলা করেছে। তাঁর অভিযোগ, দুই পয়সা নিয়ে হামলাকারীরা এগুলো করেছে। হামলাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের চার পয়সা দেব, তোমরা ওখান থেকে সরে যাও।’

হামলার ঘটনার পর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বেলা তিনটায় এ জোটের অস্থায়ী কার্যালয় পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

0a20ffaaf4c67f4655f8fc75d2596561-5c13ad5aa9635

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফেরার পথে নিজের গাড়িবহরে হামলা নিয়ে চিন্তা করছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল। তবে তিনি বলেন, এই হামলায় শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে জানানো হয়, কামাল হোসেনের গাড়িবহরের ৭/৮টি গাড়ি ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের গাড়িচালকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল বলেন, ‘আজকের দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রতি কী হয়েছে, তা চিন্তা করি না। কিন্তু শহীদদের প্রতি তারা অবমাননা করেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ শহীদদের আত্মা এতে কষ্ট পেয়েছে বলে তিনি জানান।
ড. কামাল বলেন, পয়সা নিয়ে ‘ভাড়াটিয়ারা’ এ হামলা করেছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। দুই পয়সা নিয়ে তারা এগুলো করেছে বলে জানান।। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের চার পয়সা দেব। তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। কয় পয়সা পেয়ে তোমরা এগুলো করেছ? এটা কোনো সুস্থ দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না।’ ক্ষোভের সঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটা কি ভুলে গেছে তারা?’

আজকের ঘটনা নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠাবেন জানিয়ে বলেন, পুলিশের আইজির কাছে অনেক কিছু আশা করা যায়। কিন্তু পুলিশদের সম্পর্কে যেসব কথা শোনেন, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। আইজিপির উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আমাদের কথাগুলো খুব গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। আপনার কাছে তথ্য দেওয়া হবে। বিশ্বস্ত লোক দিয়ে তদন্ত করাবেন। তদন্তে আমরা সাহায্য করব।’
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কার আদেশে অ্যারেস্ট করে? আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের বিস্তারিত তথ্য চাই।’ বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এ দেশের প্রতিটা মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। কিন্তু পুলিশ বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করছে।

পুলিশকে যাঁরা ‘বেআইনি’ আদেশ দিচ্ছেন, তাঁরা চিরস্থায়ী না, উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের এই আহ্বায়ক বলেন, বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংবিধান ভঙ্গ করা হয়। পুলিশকে তিনি সংবিধান ভঙ্গ করার মতো অপরাধ না করার জন্য বলেন। পুলিশের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাঁর কথামতো পুলিশ এসব করছে, তা তাঁকে (কামাল হোসেন) জানাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, কোনো সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না। বেআইনি আদেশ বন্ধ করার জন্য বলেন তিনি।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও হয়রানি দেখতে হচ্ছে, জানিয়ে ড. কামাল বলেন, যারা দেশ শাসন করছে তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তাদের তিনি মুখ ঢেকে চলার জন্য বলেন। জনগণের প্রতি আস্থা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের কাছে তিনি বিচার দিলে তারাই বিচার করবে।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবও হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানানো হয়। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেন সরে দাঁড়ায়, তাই ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ভয় দেখিয়ে মাঠ থেকে তাঁদের তাড়ানো যাবে না। সারা দেশেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-কর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার চলছে বলে আ স ম রব অভিযোগ করেন।
পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে, অভিযোগ করে রব বলেন, তাঁরা তাঁদের কর্মীদের প্রতিরোধের নির্দেশ দিচ্ছেন না। তাঁরা শক্তি ও সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যালটে লড়াই হবে। আমরা মরব, সরব না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ও তার দলের লোকেরা এ হামলা করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনাদের তো বিব্রত হওয়ার কথা না, ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। যতগুলো হামলা হয়েছে সেগুলোর বিচার করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু তারা পারছে না। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।’

২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কথা বলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ব্যালট বিপ্লব করবে। সরকার নানানভাবে ভয় দেখাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো ভয়ে কামাল হোসেন ভীত না। এ ছাড়া গতকাল উত্তরায় নির্বাচনী প্রচারেও তারা বাধা পেয়েছেন বলে জানান।
ইসির কাছে কোনো রকম প্রতিকার পাননি জানিয়ে মান্না বলেন, ইসি তাঁদের বিরুদ্ধে ও সরকারে পকেটে চলে যাওয়ার আচরণ করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও মান্না অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল মালেক রতন, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.