ভেনিজুয়েলায় একের পর এক বিদেশি সাংবাদিক আটক

252

ভেনিজুয়েলার চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আরো তিন বিদেশি সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। এদিকে, দেশটির বিরোধী নেতা সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেছেন। আর গত কয়েক দিনের অস্থিতিশীলতার মধ্যেই আরো কয়েক লাখ লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। বুধবার দেশটির কয়েকটি শহরে মানবিক সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে।

venezuela-home

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ভেনিজুয়েলা কর্র্তপক্ষ তিনজন বিদেশি সাংবাদিক এবং তাদের এক গাড়ি চালককে আটক করেছে। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোবিরোধী সংবাদ সংগ্রহের সময় তাদের আটক করা হয়। তারা স্পেনীয় সংবাদ সংস্থা ইইই’র হয়ে কাজ করছিলেন।

খবরে বলা হয়েছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে খবর সংগ্রহের সময় কলম্বিয়ার ফটোগ্রাফার লিউনার্দো মুনোজ ও তার ভেনিজুয়েলান গাড়ি চালক জোসে সালাসকে আটক করা হয়েছে।

কারাকাসে (ভেনিজুয়েলার রাজধানী) ইইই’র ব্যুরো প্রধান নেলিদা ফার্নান্দেজের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, এর কয়েক ঘণ্টা পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা স্পেনীয় রিপোর্টার গঞ্জালো ডোমিনগুয়েজ লোয়েদা এবং কলম্বিয়ার টিভি প্রসিউসার মরেন ব্যারিগা ভার্গাসকে তাদের হোটেল থেকে আটক করা হয়।

এই টিমটি চলতি মাসের শুরুতে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতা থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে ভেনিজুয়েলায় যায়।

এর আগে চলতি সপ্তাহে চিলির দুই সাংবাদিককে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ফরাসি কূটনীতিকদের একটি সূত্র বুধবার জানায়, ভেনিজুয়েলার চলমান ডাসাডোলের খবর সংগ্রহ করতে গেলে তাদের দুই সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। ভেনিজুয়েলায় অবস্থিত ফরাসি দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের মুক্তিও দাবি করা হয়েছে।

ওই সূত্র বলেছে, ‘ভিয়েনা কনভেনশন ও বিশেষত প্রবেশাধিকারের অধিকারের ভিত্তিতে আমাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তার অনুরোধ করা হয়েছে।’

ফরাসি ওই রিপোর্টাররা টিএফ১ টেলিভিশনের প্রতিদিনের কুতোদিন প্রগ্রামের জন্য কাজ করছিলেন। তবে টিএফ১ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

ছয় বছর আগে সাবেক নেতা হুগো শ্যাভেজের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর এই প্রথম ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নিকোলাস মাদুরো। ভোট জালিয়াতি ও অথনৈতিক সংকটের অভিযোগ তুলে বিরোধী পক্ষ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে অনেক দিন থেকেই।

চলতি মাসের শুরুতে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরই সেই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে দেশ ও বিদেশে।

 চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মাঝেই গত বুধবার নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীর্কতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া কানাডা ও ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ গুইদোকে সমর্থন জানিয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও ইরানসহ বেশ কিছু দেশ মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে।

এ ছাড়া দেশটির সেনাবাহিনী এখনও মাদুরোর প্রতি আনুগত্য অব্যাহত রেখেছে।

তবে বুধবার বিরোধী নেতা গুইদো চলমান সংকট উত্তরনে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।

আলজাজিরা বলছে, ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থী পার্শ্ববর্তী কলম্বিয়া, পেরু, ইকুয়েডরসহ অন্যান্য দেশগুলোতে অবস্থান করছে। এর মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরির পর থেকেই কয়েক লাখ লোক পালিয়ে গেছে।

গতকাল রাজধানী কারাকাস-সহ দেশটির কয়েকটি শহরে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে মানবিক সাহায্যেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

মাদুরো অভিযোগ করছেন, গুইদোকে সমর্থন দিয়ে আমেরিকা দেশটিতে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে।

আর রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভেনিজুয়েলায় ‘বহিরাগত’দের হস্তক্ষেপ হলে পরিস্থিতি ‘বিপজ্জনক’ হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.