ভোটে আচরণবিধি দেখভালে ১৬০০ ম্যাজিস্ট্রেট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী অপরাধের বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোটের মাঠে ১ হাজার ৬০০ জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। ইতোমধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনে ৭১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন ও পরের দু’দিন মিলে মোট চার দিন মাঠে থাকবেন ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এ ছাড়া নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ২৪৪ জন জুডিশিয়াল কর্মকর্তাকে নিয়ে ১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ইসির পৃথক পৃথক আদেশে এসব নিয়োগ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রার্থী, তার সমর্থক বা অন্য কেউ আইন ও বিধি লঙ্ঘন করলে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে তাদের সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে সাজা দেবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনেও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’
জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এর ধারা ৮৯এ উল্লেখিত ধারা ৭৩, ৭৪, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১ ও ৮২ ধারা এ অধীন নির্বাচনী অপরাধ আমলে ও সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্য মাঠে থাকবেন ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
৩০০টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটিতে ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। তারা ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চার দিন মাঠে থাকবেন।
একাধিক উপজেলা বা উপজেলার অংশ নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকার ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিটি উপজেলা বা উপজেলার অংশ বিশেষের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হবে। সব মিলিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৪০ জন।
ইসির এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নির্বাচন পূর্ব-অনিয়ম প্রতিরোধ, প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গ তদারকি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনী তদন্ত কমিটি (ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি) গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন-পূর্ব-অনিয়মগুলো আমলে নিয়ে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি ও জরিমানা প্রদান করতে পারবে।
এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য ১২২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; সেখানে একটি কমিটির জন্য দু’জন সদস্য অর্থাৎ ২৪৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হচ্ছে। সোমবার এসব কমিটি গঠনের চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ ছাড়া আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন দেখভালে ৭১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি উপজেলায় ১ জন, সিটি করপোরেশন এলাকায় ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থিত প্রতি ৩-৪টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে, সিটির বাইরে জেলা সদরে প্রতি পৌর এলাকায় ১-২ জন করে এবং পার্বত্য এলাকায় ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থিত ৩-৪টি উপজেলার জন্য ১ জন হারে নিয়োগ দিতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে।
যদিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে নেমেছে। তবে তাদের কার্যক্রম এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভোটকে কেন্দ্র করে আগামী ১০ ডিসেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবে ইসি।
একইসঙ্গে ওইদিন থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়ে যাবে। সাধারণত প্রচারের সময়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, তীর্যক বাক্য-বিনিময় এবং একে অন্যকে ঘায়েল করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ শঙ্কা মাথায় রেখেই ম্যাজিস্টেটদের প্রশিক্ষণে নানা দিক-নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।