ভয়াবহ তুষারঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে
জাহিদ রহমান, ওয়াশিংটন ডিসিঃ
বরফের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে ও তুষার সরাতে গিয়ে নিউজার্সী, টেনেসি, নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি ও ম্যারিল্যান্ডে এদের মৃত্যু হয় বলে রাজ্যগুলোর প্রশাসন জানিয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ’ নাগরিক।
তবে হতাহতের এ তালিকায় কোনো প্রবাসী বাংলাদেশির নাম নেই। বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
ফিলাডেলফিয়া সংলগ্ন আপারডারবি সিটির কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিক শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ ইঞ্চি তুষার পড়ার খবর জানিয়ে বলেন, এ রাজ্যের বাংলাদেশীরা নিরাপদে রয়েছেন।
“রোববার সকাল পর্যন্ত তুষার ২৬ ইঞ্চি ছাড়িয়ে যাবে বলে আবহাওয়া দফতরের বুলেটিনে বলা হচ্ছে। পেনসিলভেনিয়ায় এক ব্যক্তির প্রাণহানী ঘটার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন,” বলেন তিনি।
‘নিউ ইংল্যান্ড বাংলাদেশ এসোসিয়েশন’-র প্রেসিডেন্ট তামান্না করিম বস্টনে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
“এখানে তুষার অতটা বিপজ্জনক নয়। অবশ্য পাশের রোড আইল্যান্ড ও কানেকটিকাটের অবস্থা ভয়াবহ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিরা নিরাপদেই আছেন বলে সংবাদ পাচ্ছি।”
বস্টন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ বলেন, “অধিকাংশ বাংলাদেশি নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। রোববার নাগাদ সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
“আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, রোববার সকাল ৮টা নাগাদ এই দুর্যোগ কেটে যেতে পারে। ততক্ষণ পর্যন্ত লোকজনকে ঘরের বাইরে বের না হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
রোববার সন্ধ্যায় ব্রঙ্কসের মুসলিম সম্প্রদায়ের আয়োজনে এক সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে বলে ইকবাল জানান। বাংলাদেশি-আমেরিকান মজিবুর রহমানের ওপর ‘আইএস সদস্য’ অপবাদ দিয়ে করা হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্স, ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসকে ‘ভুতুড়ে শহর’ অ্যাখ্যা দিয়েছে মার্কিন সংবাদপত্রগুলো।
স্মরণকালের ভয়াবহ এ তুষারঝড়ে নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জর্জিয়া, টেনেসী, পেনসিলভেনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, কেন্টাকি, নর্থ ক্যারলিনা, নিউজার্সী, নিউইয়র্ক, দেলওয়ারে, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় ৭১ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। লাখো ঘর-বাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ২০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে ভারি তুষারপাত শুরু হয়। সাড়ে আট কোটি মানুষ এর কবলে পড়ে।
ভয়ঙ্কর এ দুর্যোগের কারণে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিসহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সব বিমানবন্দর বন্ধ ও প্রায় ১০ হাজার ২০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত সাংবাদিক হারুন চৌধুরী শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৩৮ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে জানিয়ে বলেন, “পুরো রাজধানী লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি দুই ফুট তুষারের নিচে তলিয়ে গেছে। রোববার ভোর পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।”
নিউজার্সির প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা ড. নূরন্নবী এ পর্যন্ত সহস্রাধিক গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।”
এদিকে আটলান্টিক সিটি থেকে সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী খান বাবুল জানিয়েছেন, ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে এ এলাকার অনেক বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। এর পাশাপাশি বরফের কারণে রাস্তা-ঘাট ঢেকে যাচ্ছে।
‘বাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স’-র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুর রহমান ফ্লোরিডায় দিনব্যাপী ঝড়-বৃষ্টির খবর জানিয়েছেন।
“ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তুষার দেখছি না। বাংলাদেশিরা নিরাপদেই আছেন,” বলেন তিনি।
১৮৬৯ সালের পর এমন ভয়ঙ্কর তুষার ঝড় আর হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো একে ‘ইতিহাসের পঞ্চম ভয়াবহ তুষার ঝড়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।