মাফিয়াদের শহর এখন বিশ্বের সেরা ব্যবসায় কেন্দ্র

684

aaএক সময় যা ছিল ড্রাগ মাফিয়াদের প্রধান ঘাঁটি, আজ সেই মেডেলিন শহরকেই লাতিন আমেরিকার দ্রুততম আর্থিক উন্নয়নশীল শহর হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। সৌজন্যে প্রযুক্তির দক্ষ প্রয়োগ।

১৯৮০-৯০ দশকে দারিদ্র চিরসঙ্গী ছিল উত্তর কলাম্বিয়ার পাহাড়ি শহর মেডেলিন-এর বাসিন্দাদের। শহরে হামেশাই লেগে থাকত মাদক পাচারকারী বনাম আধাসামরিক বাহিনীর গুলির লড়াই। দুর্গম প্রাকৃতিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে সরকারি ফৌজের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শানাত দুষ্কৃতীরা। একই কারণে এখানে যাতায়াতের প্রবল অসুবিধায় ভুগতেন শহরবাসী। শহরের সর্বোচ্চ স্থান কমিউনা ১৩ থেকে অন্তত ২৮ তলা বাড়ির সমান পথ নেমে নীচের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়। প্রতিদিন কাজে যাতায়াতের জন্য এই দুর্গম ও শ্রমসাধ্য পথ পেরোতে হতো ১২,০০০ বাসিন্দাকে।

২০১১ সালের পর থেকে এই দৃশ্য আজ ইতিহাস। মেডেলিনকে আমূল বদলে দিয়েছেন একদল নগর স্থাপত্যবিদ। উচ্চতাকে পোষ মানিয়ে যাতায়াতের পথ সুগম করেছে একাধিক দৈত্যাকৃতির এসক্যালেটর, যার সাহায্যে খুব সহজেই পণ্য নিয়ে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসতে পারছেন দোকানিরা। শুধু তাই নয়, অসামান্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা শহরে উপচে পড়ছে পর্যটকের ভিড়।

কমলা শেডে ঢাকা ৩৮৪ মিটার লম্বা চলমান পথে রয়েছে মোট ৬টি অংশ। মূল বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে পাহাড়চুড়োয় পৌঁছতে সময় লাগছে মাত্র ৬ মিনিট। অভিনব এই নগর পরিকল্পনা সারা বিশ্বে আজ মডেল হিসেবে গৃহীত হচ্ছে। অথচ প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব পেশ করার সময় প্রায় খারিজ হয়ে যেতে বসেছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রযুক্তির হাত ধরেই একদা উপদ্রুত অঞ্চলে এখন শান্তি ফিরেছে।

সাড়া জাগানো পরিবর্তনের প্রধান রূপকার বাস্তুকার কার্লোস এসকোবার। তিনি জানিয়েছেন, ‘এমন পরিবর্তন সম্ভব বলে প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। অতীতে এই অঞ্চলে মাদক পাচারকারীদের দাপট ছিল। বর্তমানে এই শহর শুধু শান্তই নয়, আমাদের গর্বেরও।’

কার্লোস জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে শহরে যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রথম রোপওয়ে চালু হয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে শহরতলির বিভিন্ন এলাকার সংযোগ তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। বর্তমানে এই পরিষেবা বেড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ যাত্রীর উপকারে লাগছে।

২০১৬ সাল থেকে চালু হয়েছে নতুন ট্র্যানভিয়া স্ট্রিটকার পরিষেবা। দেখতে অনেকটা বুলেট ট্রেনের মতো, বিশেষ রাবার টায়ারযুক্ত চাকায় ভর করে উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তায় অনায়াসে চলাফেরা করে এই গাড়ি। সব মিলিয়ে, পরিবহণ পরিষেবায় পরিবর্তনের জোয়ার এনে অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় রূপান্তর ঘটিয়ে নয়া দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে কলম্বিয়ার একরত্তি শহর মেডেলিন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.