মুসলমানদের নীরবতা ভারতের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে
ভারতের বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন শাহ দেশের সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষ্ভাপ দিনদিন বেড়েই চলছে, এর কোনো আশু সমাধানও দেখা যাচ্ছে না।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ভয় না পেয়ে ভারতের সুশীল সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিবিসির দিল্লি প্রতিনিধি শাকিল আখতারের প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নাসির উদ্দিন শাহ ভারতের বিখ্যাত থিয়েটারশিল্পী ও অভিনেতার পাশাপাশি একজন সংবেদনশীল বুদ্ধিজীবী।
মহাত্মা গান্ধীর নাতি রাজমোহন গান্ধীও এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বিস্তারিত একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
ইতিহাসবিদ ও আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক রাজমোহন গান্ধী বলেন, ‘ এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, মুসলমানদের বড় একটি অংশ মনে করে যে, ভারতে তাদের চুপ থাকতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিক হিসেবে মুসলমানদের এ নীরবতা নিয়ে ভাবতে হবে। এটি আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দিন আগে ভারতের ৮০টিরও বেশি নেতৃস্থানীয় সাবেক শীর্ষ কর্মর্কতারা দেশের নাগরিকদের ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানান। এই কর্মকর্তারা বলেন, ‘ রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক আচরণে ভারত প্রতিষ্ঠার মূল ভিতই নড়েবড়ে হয়ে যাচ্ছে।’
ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মূলত মুসলমানদেরই টার্গেট করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করলেও মুসলমানরা এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।
তাজমহলকে মন্দির করার দাবি, ফয়জাবাদের নাম পরিবর্তন করে অযৌধ্যা রাখা,বাবরি মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করাসহ এমন বিষয়ে মুসলমানরা এখন তেমন সরব হচ্ছে না। মুসলমানদের এমন নীরবতা সুখকর হবে না। কারণ এ নীরবতায় লুকায়িত রয়েছে গভীর বেদনা ।
ভারতের মুসলমানরা এখন যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে, অতীতে এমন অবস্থা কখনো সৃষ্টি হয়নি। মুসলমানরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাসহ সব সেক্টরেই বিরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে। রাজনীতিতেও তারা বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
ভারতের মুসলমানরা অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, কিন্তু নীরবতাই কি এর সমাধান?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুসলমানদের এমন নীরবতা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়। তাদের মতে, মুসলমানদের এমন দুর্বল অবস্থা শুধু তাদেরই নয়,ভবিষ্যতে তা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।
এ কঠিন অবস্থার মোকাবেলা না করে পিছু হটে যাওয়া এবং প্রতিবাদ না করে নীরবে সয়ে যাওয়া ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
কোন মতাদর্শ, রাজনীতি ও সরকার যা দেশের সব নাগরিকদের সমানভাবে দেখে না, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি সামগ্রিকভাবে পুরো রাষ্ট্রের জন্যই ক্ষতিকর।