মেরীল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল খ্রীষ্টানদের বড়োদিন উৎসব
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ভার্জিনিয়াঃ ২৫শে ডিসেম্বর, অর্থাৎ বড়োদিন বিশ্বের সকল খ্রীষ্টান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ন ধর্মীয় আনন্দ উৎসবের দিন। এটা শুধু খ্রীষ্টানদের উৎসব নয়, এটি একটি সর্বজনীন উৎসব- পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সবাই এই মহা আনন্দ উৎসবে অংশ নিয়ে এটাকে সর্বজনীন উৎসব করে তোলেন। এই দিনে প্রভু যীশুখ্রীষ্ট জন্মগ্রহন করেছিলেন পৃথিবীতে শান্তি ও ভালবাসার পথে জীবনযাপনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। ভালবাসা, ক্ষমা, ন্যষ্যতা, সহভাগিতা ও শান্তি হলো বড়োদিনের ভাবধারার মূল তাৎপর্য। তাইতো এই দিনে সবাই প্রভু যীশুর জন্মোৎসব পালন করার জন্য আনন্দ আয়োজনে মেতে উঠে- কারণ এই জন্ম, এই মহামানবের আবির্বাভ ছিল মানুষের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। যেমন করে বলা হয়েছে… “তাঁর জন্ম কোন ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, আধ্যাত্মিক!”
গত ২৫শে ডিসেম্বর,২০১৬ সকাল ৯টায় সিলভার স্প্রীং-এর সেইন্ট ক্যামিলাস চার্চের ক্যামেলিয়া হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বড়োদিনের খ্রীষ্টযাগ। পাঁচ শতাধিক খ্রীষ্টভক্তের উপস্থিতিতে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ন আনন্দ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বড়োদিনের এই খ্রীষ্টযাগ। স্থানীয় খ্রীষ্টভক্ত ছাড়াও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশ কিছু অতিথি এসেছিলেন এই মহা আনন্দ আয়োজনে যোগ দেয়ার জন্য, তাদের পরিবার, বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনদের সাথে একসাথে সহভাগিতায় বড়োদিন উদযাপন করার জন্য। তাই সবার সহভাগিতায় এবারের বড়োদিন ছিল অত্যন্ত আনন্দঘন।
২৫শে ডিসেম্বর সকালে বড়োদিনের এই খ্রীষ্টযাগ পরিচালনা ও উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার অনিল গনসালভেস। অত্যন্ত চমৎকারভাবে তিনি যীশুর জন্মের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং আমাদের জীবনে তার প্রতিফলনের উপর আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন- “আজকের দিনে আমরা কী পাবো সেটা বড়ো কথা নয়, আমরা অন্যকে, আমাদের চারপাশের মানুষকে কী দিতে পারবো, তাদের জন্য কী করতে পারবো- সেটাই মূখ্য বিষয়। বড়োদিন দেয়ার দিন, সহভাগিতার দিন, আত্মশুদ্ধির দিন। আমাদের চারপাশের মানুষের সাথে জীবন সহভাগিতা করার মধ্যেই বড়োদিনের তাৎপর্য নিহিত”।
মূলতঃ বড়োদিনের আয়োজন শুরু হয়ে যায় ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই। নানা আনন্দ আয়োজনে দ্রূত কেটে যায় দিনগুলো- মানুষের বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে শুরু করে দোকান-পাট, শপিং মলগুলোসহ সারা শহরসেজে উঠে অত্যন্ত চমৎকার বর্ণীল আলোকসজ্জায়, মানুষের ঢল নামে মলগুলোতে বড়োদিনের শপিং-এ- প্রিয়জনদের জন্য উপহার কেনার পালা! এছাড়া বাঙালি খ্রীষ্টান অধ্যুষিত কমিউনিটিগুলোতে চলে সান্ধ্যকালীন কীর্তন প্রতি উইকএন্ডে… মেরীল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সী, কানকটিকাট, নর্থ ক্যারোলিনা, শিকাগো, টরন্টো-মন্ট্রিয়েলসহ বিভিন্ন অংগরাজ্যে চলতে থাকে বাড়ী বাড়ী ঘুরে বড়োদিনের এই কীর্তন। আর এর মাঝেই ফিরে আসে দেশীয় আমেজে বড়োদিন উদযাপনের আনন্দ। এছাড়া কেক, নানা ধরনের পিঠা, ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়বন্ধুদের জন্য উপহার কেনাতো আছেই। স্থানীয় বিভিন্ন খ্রীষ্টান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজন করে থাকে বড়োদিন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের।
বড়োদিনের তাৎপর্য উল্লেখ করতে গিয়ে আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন… “যে দিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেইদিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহন করেছেন, সেইদিনই বড়োদিন”।
আজকের অস্থির পৃথিবীর অনাকাংখিত পরিস্থিতিতে এইটুকুই আমাদের কাম্য- পৃথিবীজুড়ে মানুষের মাঝে শান্তি ও ভালবাসার বড্ড বেশী প্রয়োজন, আমাদের চেতনার জাগরণ বড্ড বেশী প্রয়োজন, প্রয়োজন জীবনের ক্ষুদ্রতা থেকে বেড়িয়ে আসার বোধোদয়- আজকের পরিস্থিতি থেকে ভালবাসা ও শান্তির পথ ধরেআমাদের মুক্তির প্রয়োজন।