যারা মানুষ পোড়ায় তারা দানব: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি বিশ্বাস করি নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবে।’ তিনি রোববার বিকেলে পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেন।
শেখ হাসিনা ধানের শীষ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একবার চিন্তা করেন- সিএনজি, লঞ্চ, বাস, প্রাইভেটকারে পেট্রল ঢেলে মানুষকে আগুন দিয়ে যারা পোড়ায় তারা মানুষ নয়, দানব। ওদের কোনো স্থান এই বাংলার মাটিতে হবে না। কাজেই ঐ ধানের শীষ ওয়ালাদের গায়ে মানুষ পোড়া গন্ধ, তাদের থেকে সাবধান থাকবেন।
তিনি বলেন, তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, আমাদের যারা মা-বোনেরা আছেন তাদের কাছে ভোট চাই, সকলের কাছেই ভোট চাই। আপনারা ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দেব, সমৃদ্ধি দেব, সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব।
মঙ্গা পীড়িত রংপুরের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামীতে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি চলমান উন্নয়নের ধারাকে আরো অনেকদূর নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে তার নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে বলেন, আপনারা তাকে নির্বাচিত করতে পারলে এবং আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলে তাকে আবার জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে পারবো। কাজেই আমি দোয়া করি তাকে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
তিনি এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডলের আওয়ামী লীগে যোগদানকে স্বাগত জানান।
পীরগঞ্জের উন্নয়নে একটি মাস্টার প্লান প্রণয়নের জন্য তাকে বলেছেন বলেও জানান।
পীরগঞ্জের উন্নয়নের তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ব্রিজ করে দিয়েছি। রাস্তা করে দিয়েছি, আজকে আমার করা ব্রিজ দিয়ে আমি চলে যাব দিনাজপুরে। এত সহজে আগে দিনাজপুরে পৌঁছানো যেত না।
তিনি পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকে সারা পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেক ঘরে আজকে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। এজন্য প্রত্যেকটি ছেলে-মেয়ের আজকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
তিনি এ সময় ২০২১ সাল নাগাদ দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নে তার সরকারের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি রংপুরে রেল যোগাযোগ স্থাপন, বঙ্গবন্ধু ও তিস্তা সেতু নির্মাণ এবং ঢাকা-রংপুর ৪ লেনের হাইওয়ে নির্মাণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, আপনারা শুধু একটা জিনিসই চিন্তা করবেন ১০ বছর আগেও এই এলাকা কোথায় ছিল আর আজকে কোথায় এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ছেলে-মেয়েরা সেখানে বসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশ মহাকাশ জয় করেছে।
এই স্যাটলাইট নির্মাণে তার ছেলে এবং তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরাট অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই দেশে আর কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। গৃহহারা থাকবে না। রোগে ভুগে কষ্ট পাবে না।
তিনি এসময় গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ায় তার সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এবং রংপুর মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন এবং বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা সহ চিকিৎসা সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তার সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথাও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা আগামীর নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে বলেন, শুধু আপনাদের কাছে এটাই চাই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন এবং আপনাদের এই পীরগঞ্জেও আমাকেই ভোট দেবেন, শুধু ব্যালটে নামটা শিরীন শারমিন চৌধুরীর থাকবে।
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনে কথা উল্লেখ করে বলেন, আজকে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়ে জেলে। আর তার ছেলে তারেক টাকা পাচার করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপাপ্ত, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এরা দেশের কি উন্নয়ন করবে। এরা দেশের কি কল্যাণ করবে। কাজেই এদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান হতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের উন্নতি হয়। তা গত ১০ বছরে আপনারা দেখেছেন।
তিনি যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এই ঋণ নিয়ে যুব সমাজ স্বাবলম্বী হতে পারবে। কারো কাছে চাইতে হবে না, নিজেরাই চাকরি দিতে পারবে।
দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার এবং ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র থাকার ফলে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ঘরে বসেই আজকে যুব সমাজের আয়ের পথ খুলে গেছে, বলেন তিনি।
‘আমরা তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব’, যোগ করেন শেখ হাসিনা বলেন।
তিনি দেশের মানুষের অব্যাহত কল্যাণ সাধনে সকলের দোয়া কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ হবে দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন। সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো, ২১০০ ডেল্টা প্লান করে দিয়েছি, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আজকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে মা-বোনের এখানে আছেন। আমরা নারীর ক্ষমতায়নে যেভাবে সুযোগ করে দিয়েছি অতীতে কোনো সরকার করেনি। কাজেই সকলের কাছে ভোট চাই।
প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জে এসেই প্রথমে তার স্বামী এবং দেশের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন।
এরআগে দুপুরে তিনি তারাগঞ্জে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ থেকে নৌকার প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও পীরগঞ্জের সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা রংপুরে তার দল এবং মহাজোটের প্রার্থীদেরকেও সভায় সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুর রাঙ্গা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।