‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য‌্যের তুলনা হয় না’

474
 শিবলী চৌধুরী কায়েস,নিউইয়র্কঃ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
Footage Courtesy: AP & CNN
“This is a disappointing day for us”-House Speaker Pall Ryan
House Speaker Paul Ryan speaks after deciding to pull the GOP health care bill because Republicans didn’t have enough votes to pass it. (March 24)
Top House Democrat Nancy Pelosi calls the move to push the GOP healthcare bill for a vote in the House before being assured enough votes a ‘rookie error’. (March 23)
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য একটি সহনশীল বা এফোর্ডেবল স্বাস্থ্য নীতি (বিল) প্রনয়ণ করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুরু থেকেই বিলটির বিরোধীতা করে আসছিলেন রিপাবিলকান আইনপ্রণেতারা।
17506078_1282805315089750_852311175_n
ওবামা কেয়ারের ৭ বছর পূর্তি হয়েছে ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার। এই দিনেই ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিল করতে হাউজে ভুটাভুটি ডেকেছিেলন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তবে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রস্তাবিত নতুন ‘স্বাস্থ্য বিলের’  American Health Care Act (AHCA) পক্ষে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানানোয়, পিছিয়ে দেয়া হয়েছে ভুটাভুটি।
U.S. Speaker of the House Paul Ryan (R-WI) holds a news conference on Capitol Hill in Washington March 17, 2016.       REUTERS/Gary Cameron - RTSAWYK
U.S. Speaker of the House Paul Ryan (R-WI) holds a news conference on Capitol Hill in Washington March 17, 2016. REUTERS/Gary Cameron – RTSAWYK
দ্বিতীয় দফায় শুক্রবারই একই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০১০ সালের ২৩ শে মার্চ রাজনৈতিক বিভক্তির মাঝেও যেই ‘স্বাস্থ্য বিল’ প্রবর্তন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ডেমোক্রাট দল, সেই স্বাস্থ্য সেবা বিলের সুবিধা নিচ্ছেন, আমেরকান প্রায় ৩২ কোটির মানুষের একটি বড় অংশ।  ওবামা প্রবর্তিত ‘এফরডেবল কেয়ার এ্যাক্টকে’ দেশের জন্য বিপর্যয় বলে অভিহিত করে এটাকে বাতিল এবং নতুন একটি বিল নিয়ে আসার কথা বলে মাঠ গরম করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হলো তার অনভিজ্ঞতা আর তড়িঘড়ি নীতির কাছে পরাজয় মানতে হলো পক্ষের আইনপ্রণেতাদের। নির্বাচনে জয়ের পর আমেরিকান ‘হেলথ কেয়ার এ্যাক্ট’ নামে যেই স্বাস্থ বিলের প্রস্তাব করেছে তা এখন পাশ করা ঝুলে গেলো।
বিলটি পাশ হতে কমপক্ষে ২১৬ ভোট দরকার ছিল। সেটা সম্ভব হয় নি ক্ষতাসিন রিপাবলিকানদের। যুক্তরাষ্ট্রর গণতন্ত্র আর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা ‘হাউজ বা নিন্মকক্ষ’ (কংগ্রেসম্যানরা) নিয়ন্ত্রণ করেন আর ‘সিনেট বা উচ্চকক্ষ’ সিনেটেররা তাদের মতের ভিত্তিতে- ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখেন। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন সত্যিকার অর্থে।
[Members of US. House and Senates]:
House Representative:
    435 Members
    5 Delegates
    1 Resident Commissioner
Party Divisions:
    237 Republicans
    193 Democrats
    0 Independents
    5 Vacancies
 Senate Members:
    100 Senators
Party Divisions:
    46 Democrats + (2 Support)
    52 Republicans
    2 Independents ( Vermont State- ‘Berni senders’ + Main State- ‘Angus King’)
Note: (Vice President votes in case of a tie)
এটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বিউটি। এই তো কিছুদিন আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত বিতর্কিত এডুকেশন সেক্রেটারিকে পাশ করিয়ে নিয়েছেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করেই।  এত কিছুর পরও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটাই প্রমাণ করেছেন। দল কি বললো সেটা বড় নয়, বড় হচ্ছে জনগণের স্বার্থ দেখা।
নতুন প্রেসিডেন্ট ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ আর ক্ষমাতিসন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাউজ স্পিকার ‘পল রায়ন’ খুব আশা নিয়ে ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। একেই বলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আর গণতান্ত্রিক চর্চা। বৃহস্পিতবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দলের রিপাবলিকান হাউজ প্রতিনিধিদের ফোন করেই কোন সুফল পান নি। হাউজ স্পিকারও না। ফলে গতকালই নতুন স্বাস্থ্য নীতি বা বিলটি পাশ করা সম্ভব হয় নি। ধারণা করা হচ্ছিল শুক্রবার দ্বিতীয় চেষ্টায় সম্ভব হবে! কিন্তু তাও হয় নি।
অবশেষে গণমাধ্যমে কাছে স্পিকার পল রায়ন ঘোষণা করলেন, “আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বাজে দিন হয়ে থাকবে।”
” Ryan said. “You just had to be against it. Now, in three months’ time, we tried to go to a governing party where we actually had to get 216 people to agree with each other on how we do things.” Calling it “the growing pains of government,” Ryan insisted that even though the House was unable to pass the bill, other parts of their legislative agenda — namely tax reform — would not be stalled as a result of this defeat.
দলের ২শ ৩৭জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার পরও ওবামা কেয়রা বাতিলে ২শ ১৬ ভোট অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আর পল রায়ন (প্রেসিডেন্ট এন্ড হাউজ স্পিকার)।
এদিকে, ‘ওবামা কেয়ারের’ বদলে ট্রাম্প প্রস্তাবিত নতুন বিল কি করে সিনেটে পাশ হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে ডেমোক্রাট দল।  বৃহস্পতিবার এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন, হাউজে ডেমোক্রাট দলীয় প্রধান ন্যান্সি পেলোসি। নতুন প্রেসিডেন্টকে তিরস্কার করে তিনি বলছেন, ট্রাম্প নাকি ভালো লেনদেন করতে পারেন শুনেছি। তার নিজের দলের ভিতরে কিভাবে এই নিয়ে লবি করলেন যে, শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিই বন্ধ করতে হলো।
বৃহস্পিতবারের শেষ খবর ছিল শুধু মাত্র রিপাবলিকান দলের ৩৩ জন সিনেটর ভোট দিচ্ছেন না ট্রাম্পের নতুন স্বাস্থ্য বিলে। অথচ বিলটি পাশ হতে হলে সর্বনিন্ম ২২ টি ভোট কম পড়লেও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় হাউজ স্পিকার স্বীকারই করেলন, তারা পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
মূলধারার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উদারপন্থী রিপাবলিকান সিনেটররা, কোনভাবেই চাচ্ছেন না তাদের রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা বাতিল হয়ে যাক। আর ডেমোক্রাট দল তো চায়-ই না। সব মিলিয়ে নতুন স্বাস্থ্য বিল পাশ না হওয়া আরো একবার ধাক্কা খেলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
মনে ভাবছি; এটা আমাদের দেশে কি সম্ভব হতো? কখনই না! কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি রাতকে দিন বলেন, আমাদের গণমাধ্যম আর আইনপ্রণেতারা (দলীয় তেলের বিনিময়ে টিকিট পাওয়া এমপি’রা) বলবেন, এটাই ঠিক। এখন রাত নয় বরং দিন। কারণ নেত্রী বলেছেন। একই অবস্থা ছিল আগের রাজনীতিতেও। কেবল বঙ্গবন্ধুর সময়ে জেনারেল ওসমানি আর অন্য একজন তার শাসন নীতির বিরোধীতা করেছিলেন। পরেও দু’একজন করেছেন, তাদের আমরা বাংলাদেশী জাতি শ্রদ্ধা করতে পারি নি। প্রাপ্য সম্মাণটুকুনও দিতে জানি নি। রাজনীতিতে নির্লোভ মানুষ ও উপমহাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা একজন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকেও আমরা সম্মাণ দিতে জানি নি।
বস্তুত বাংলাদেশ’র গণতন্ত্র আর এখানকার গণতন্ত্র’র পার্থক্য এখানেই ফুটে উঠে। যারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, রাজনীতির বাইরে কিছু একটা করতে, সেই তারাই আবার ২০১৮’র মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিপরীত দিকে ভোট দিবেন, এই ভয়ে প্রায় অসংখ্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিলের পক্ষে মত দেন নি। কারণ তাদের নির্বাচিত এলাকার জনগণ তা চায়নি বলে!
জয় হোক গণতন্ত্রের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.