যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত

311
অনলাইন ডেস্ক:যুুুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের উচিটায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। গত শনিবার রাতে নিজ কর্মস্থল পিজা সরবরাহের কাজে কর্মরত অবস্থায় দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হন বাংলাদেশি এম হাসান রহমান বাঁধন (২৬)। উচিটা পুলিশ সোমবার সকালে এক সংবাদ
সম্মেলনের মাধ্যমে বাঁধনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।wichita-KS-0
জানা যায়, উচিটা শহরের সেন্ট্রাল রক রোডের একটি গাড়িতে বাঁধনের লাশ পাওয়া গেছে। তিনি পিজা হাট নামক একটি দোকানের পিজা সরবরাহের কাজ করতেন বলে জানা গেছে। তবে বাধঁনের পিজা সরবরাহের কাজের এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেতে পারেননি স্থানীয় বাংলাদেশিরা।
উচিতার মিড কন্টিনেট বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা রবিউল করিম বেলাল জানান, বাঁধনকে খুব ভালোভাবেই তিনি চেনেন। সে পড়াশোনার ফাঁকে পিজা সরবরাহের কাজ করতো বলে জানি। কিন্তু কিভাবে সে খুন হয়েছে তা পুলিশের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে বাঁধন ছিল অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের ছেলে। সে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকতো।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। আমরা সবায় তাকে একজন ছাত্র হিসেবেই জানতাম, কিন্তু পিজা সরবরাহের কাজ করতো তা জানতাম না।
ঘটনার দিন রাতে পিজা ডেলিভারি দিয়ে সঠিক সময়ে পিজা দোকানে না আসায় দোকানের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সন্দেহ হয়। পরে তারা এ বিষয়টি উচিতা পুলিশকে জানান।পরদিন রবিবার বেলা এগারো টায় পুলিশ লাশ ৭৮০০ পেজন্ট লাইভ ওক স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে তার গাড়ির ট্যাংক থেকে উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাঁকে গুলি করার পর গাড়ির ট্যাংকে ঢুকিয়ে নিয়ে এ এলাকায় ফেলে আসে। পুলিশ নিশ্চিত করেছেন, গাড়িটি তাঁর (বাঁধন)। এ ব্যাপারে পুলিশ জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়ার পর বাঁধনের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা। জানা যায়, তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চৌরাস্তা টেরি পাড়ায়। তিনি পরিবারের একমাত্র ছেলে।
সাত বছর আগে বাঁধন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বাটলার কমিউনিটি কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট শেষ করে আগামী সেশনে ক্যানসাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছিলেন। আগামী ডিসেম্বরে তাঁর কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। আমেরিকায় পড়ালেখা করতে এসে এভাবে লাশ হয়ে ফিরে যাওয়াকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না তার সতীর্থরা। বাঁধনের ছোট বেলার বন্ধু নাঈম জানান, বাঁধন গত ২ মাস ধরে পিজা হাট ডেলিভারির কাজ করেছিলেন। প্রতিদিন সাড়ে বারটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসতেন। কিন্তু শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বাঁধন ঘরে না ফেরাতে আমি (নঈম) তাঁকে খুঁজতে রাত তিনটা বিভিন্ন হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে খোঁজ নেয়। পরে পুলিশ নিশ্চিত করেন, ‘তুমি যাকে খুঁজছ তার ডেড বডি আমরা উদ্ধার করেছি’। বন্ধুদের কথা দিয়েছিল- থ্যাংকস গিভিংডে-তে নিজে রান্না করে খাওয়াবে।বড় সাইজের মুরগিও কিনে এনে সব আয়োজন ঠিক করে রেখেছিল। কিন্তু নিয়তি সবার কাছ থেকে বাঁধনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল । উচিটা শহরে এখন যেন বোবা কান্না! বাঙালি কমিউনিটিতে বাঁধন ছিল অনন্য এক প্রতিভা। যে কোন অনুষ্ঠান বাঁধন জমিয়ে তুলত। যেন সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।
এদিকে বাঁধনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উচিটা শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.