যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ক্যাপ্টন পদে প্রথম বাংলাদেশি

175

নিউইয়র্কঃযুক্তরাষ্ট্র পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্বাহী পদে যোগ দিচ্ছেন খন্দকার আব্দুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই প্রথম বাংলাদেশি–আমেরিকান হিসেবে কেউ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের ক্যাপ্টেন পদে যোগ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে যোগদান করছেন ৩৩ বছর বয়সী খন্দকার আব্দুল্লাহ।b59292beee6ea1dc919fbb5146c2f9b5-5c0f542ccbdb5
রাজনৈতিক আনুকূল্য পেলে খন্দকার আব্দুল্লাহ হতে পারেন নিউইয়র্ক নগরীর প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ কমিশনার। ক্যাপ্টেনের পর নিউইয়র্ক পুলিশের পরের ধাপের পদবি পুলিশ কমিশনার, যা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
খন্দকার আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী ২১ ডিসেম্বর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে ১৯৯৩ সালে খন্দকার আব্দুল্লাহ আমেরিকায় আসেন। নিউইয়র্কের কুইন্সের এস্টোরিয়া আর উডসাইড এলাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা। ২০০৫ সালের সামারে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন খন্দকার আব্দুল্লাহ। তিনি কলেজে পড়ার সময় জব ফেয়ারে দেখেন এনওয়াইপিডিতে লোক নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে অনেকটা খেয়ালের বশে তিনি খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেন পুলিশ বিভাগে।
ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁকে পেয়ে বসে সেই সময়েই। ২০০৭ সালে পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ নেন খন্দকার আব্দুল্লাহ।

তিনি বললেন, ‘যে নগরী আমাকে, আমার মতো অভিবাসীদের অনেক দিয়েছে, সে নগরীর নিরাপত্তার শপথ নেওয়ার দিনটি ছিল বড় আবেগের।’

পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণের পরই খন্দকার আব্দুল্লাহর প্রথম দায়িত্ব পড়ে ইস্ট নিউইয়র্কের অপরাধবহুল এলাকা বলে পরিচিত ব্রুকলিনের ৭৫ প্রিসিংটে (পুলিশ অফিস)। ২০১৩ সালে খন্দকার আব্দুল্লাহ এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এবার দায়িত্ব পড়ে সাউথ ব্রংকসে, যা নিউইয়র্ক পুলিশের সার্ভিস এলাকা-৭ নামে পরিচিত। অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাদা পোশাকের পুলিশের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। লঙ আইল্যান্ড সিটির ১০৬ প্রসিংটেও এক বছর সার্জেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের আগস্টে খন্দকার আব্দুল্লাহ আবার লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান।
লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতির পরই তাঁকে নিউইয়র্কে নগরীর ২৮ প্রিসিংট দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হার্লেম এলাকায় লেফটেন্যান্ট খন্দকার আব্দুল্লাহ কমান্ডিং অফিসারের একান্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন নিজের সততা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায়। এ সময়ে অপরাধ সংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ, কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ও গৃহীত কৌশলের সাফল্য নিয়ে কাজ করে কৃতিত্ব দেখান খন্দকার আবদুল্লাহ।
একই সময়ে খন্দকার আব্দুল্লাহ নগরীর কৌঁসুলিসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। হার্লেম এলাকায় তাঁকে স্পেশাল অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮—এই দুই বছর পালন করেন। পরপরই তিনি পুলিশের পেশাদারি দেখাশোনাসহ নানা প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
বিভাগীয় চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ১০ ডিসেম্বর খন্দকার আবদুল্লাহকে জানানো হয়, তিনি ২১ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এনওয়াইপিডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে প্রায় তিনশ বাংলাদেশি আছেন। নিউইয়র্ক নগরীর ট্রাফিকসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ মিলে ১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
কমিন্যাল জাস্টিসে স্নাতক খন্দকার আবদুল্লাহ তাঁর কর্মের জন্য এর মধ্যে পুলিশের আটটি মেডেল লাভ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ নগরী নিউইয়র্কে খন্দকার আব্দুল্লাহর হাতে গ্রেফতার হয়েছে অনেক খুনি, মাদক সম্রাটসহ দুর্ধর্ষ অপরাধী।
সিলেটের বালাগঞ্জ থানার তালতলা গ্রামের প্রয়াত খন্দকার মদব্বির আলী ও মুহিবুন্নেসা চৌধুরীর ছেলে খন্দকার আবদুল্লাহ শিশুকালে আমেরিকায় এলেও এখনো সাবলীল বাংলায় কথা বলেন। দুই সন্তানের জনক খন্দকার আব্দুল্লাহ স্ত্রীকে নিয়ে লঙ আইল্যান্ড এলাকায় থাকেন। খুশির সংবাদ জানার পর তিনি বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
খন্দকার আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যাঁরা স্বদেশিদের সাফল্যে সদা গর্ববোধ করেন, তাঁদের প্রতি আমার সব ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। তাঁদের মুখ উজ্জ্বল হলেই নিজেকে ধন্য মনে করি।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.