যেভাবে গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা

397

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই টানা তৃতীয়বারের মতো এবং স্বাধীনতার পর চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি।

govt-20181231155046

এখন উৎসুক সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরনোদের মধ্যে কারা থাকছেন, আবার নতুন করেই বা কারা আসছেন, কে পাচ্ছেন কোন দফতর- এমন নানা প্রশ্ন।

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দাফতরিক কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কতগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে।

দু’একদিনের মধ্যেই নির্বাচিত এমপিদের গেজেট জারি করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর স্পিকার তাদের শপথ পড়াবেন।

মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (বিধি ও সেবা) শফিউল আজিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এমপিদের গেজেট হওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি চাইবেন। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান শফিউল আজিম।

সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশভাগের ৯ ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলেও সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছে এটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন তাদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সঙ্গে নতুন সদস্যদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখবে সরকারি যানবাহন অধিদফতর (পরিবহন পুল)।

নতুন করে শপথ নেয়ার কারণে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২৮৮টি আসনে (আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কাস পার্টি ৩, জাসদ ২, বিকল্পধারা ২, তরিকত ফেডারেশন ১, জেপি ১) বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি ৫, গণফোরাম ২) আসন। স্বতন্ত্রসহ অন্যান্যরা জয় পেয়েছেন ৩টি আসনে।

তবে ভোটের দিন গোলযোগের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী মারা গেলে এ আসনের ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জানুয়ারি।

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.