যে কারণে ইসরাইলি কারাগারে মারা হলো ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে

156

ইসরাইলি কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মারা হয়েছে ফিলিস্তিনের এক যোদ্ধাকে। যিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত ইসরাইলের রিমন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি কী এমন অপরাধ করেছিলেন?

তার মৃত্যুর জন্যই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করা হচ্ছে বিশ্বজুরে।

৫১ বছর বয়সি ফারিস বারউড ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসী। গত বুধবার ইসরাইলের রিমন কারাগারে তিনি মারা যান।

বারউড ১৯৯১ সালে আটক হয়েছিলেন। ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হত্যার অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বারউডের ২ বছর বয়সের সময় তার বাবা মারা যান। তার মা তাকে লালন-পালন না করতে পারায় তিনি গাজার আল-আমান অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠেছেন।

তিনি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ওই অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছেন। এর পাঁচ বছর পরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হত্যার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।

এদিকে ইসরাইল ৩০ বন্দির মুক্তির তালিকা প্রকাশ করেছিল যার মধ্যে বারউডেরও নাম ছিল।

এ ঘটনায় তার বোন ফায়জা বারউড বলেন, আল্লাহ তাকে ইসরাইলি কারাগারের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

বারউডের পরিবারের বিশেষ করে তার মা বলেন, তার মুক্তির জন্য অভিবাদন জানাচ্ছি।

এর আগে তিনি ১০ বছরের অধিক সময় নির্জন কারাবাসে কাটিয়েছেন। তার আত্মীয় ও সমর্থকরা জানান, তিনি সে সময় মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

তিন বছর আগ থেকে তিনি লিভার ও হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন।

ফিলিস্তিনি মন্ত্রিসভার বন্দিদের গণমাধ্যম ও সাবেক বন্দোবস্ত বিষয়ক সংস্থার পরিচালক ইসলাম আবদু মিডলইস্ট আইকে বলেন, তিন বছর ধরে আমারা বহু আপিল করেছি কারাবন্দি বারউডের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে। কিন্তু এটি সবসময় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

বারউডের সহকর্মী ইনমেটস মন্ত্রণালয়কে জানান, মৃত্যু আগে সে রক্ত বমি করেছিল। তার অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল।

ইসরাইলের নিজস্ব আইনানুসারে কারাবন্দিকে প্রয়োজন অনুযায়ী মেডিকেল সুবিধা দিতে হয়।

যুদ্ধবন্দি আইনানুযায়ী কারাবন্দিকে অবশ্যই আটক দেশ মেডিকেল সুবিধা দিতে হবে। তার খরচ সেই রাষ্ট্র বহন করবে। এছাড়া প্রতি মাসে তার নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।

এ ছাড়া আইনে আরও বলা হয়েছে, বন্দিদের আটক করা রাষ্ট্র কারাবন্দিদের প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয় এবং পোশাকের ব্যবস্থা করবে।

এদিকে ফিলিস্তিনের মন্ত্রণালয় এবং বারউডের সহকর্মী ইনমেটস জানান, এসব অধিকার থেকে বারউড বঞ্চিত হয়েছেন।

ইজরাইলের কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।

বারউড মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে থাকা বন্দিরা প্রতিবাদ শুরু করে যাতে ইজরাইলি কর্তৃপক্ষে প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাগ প্রকাশ করে এবং বারউডকে হাসপাতালে স্থানান্তর করে।

১০ দিনের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বারুদকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। তবে একই দিনে তাক মৃত ঘোষণা করা হয়।

গত ১৮ নভেম্বর বারউডের অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে তার লিভার ও টিউমারের অংশ কেটে ফেলা হয় ইসরাইলের সরৌকা মেডিকেল সেন্টারে। তবে অস্ত্রোপচারের পর তার কোনো চিকিৎসা করানো হয়নি। তাকে সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার করা হয়নি বলছিলেন আবদু।

আবদু বলেন, তার অস্ত্রোপচারের পর তাকে রিমন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তাকে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা উচিত ছিল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.