যে কারণে ভোট যুদ্ধে নেই বিএনপির ৩ যুগ্ম মহাসচিব
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বিএনপির তিন যুগ্ম মহাসচিব। এরা হলেন-সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল।
এদের তিনজনেই রাজনৈতিক ভিত্তি অনেক মজবুত।বিএনপির এ প্রজন্মের রাজনীতিতে পোড় খাওয়া যে ক’জন নেতা আছেন তাদের মধ্যে এই তিনজনকে ধরা হয়।
এই তিন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে তিনটি মিলও আছে। এক. তারা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতি করে বিএনপিতে এসেছেন।
দুই. ছাত্ররাজনীতির পাঠ চুকিয়ে তারা সবাই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিন. এদের সবাইকে দল মনোনয়ন দিতে চেয়েছে। কিন্তু তা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে অনঢ়।
এই তিন যুগ্ম মহাসচিব বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট যুদ্ধে নেই।
তাদের মধ্যে দুজন কাঙ্ক্ষিত আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন করছেন না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অপরজন দলের মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করেননি।শোনা যাচ্ছে- হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা মান-অভিমানও কাজ করছে।
রিজভী
রুহুল কবির রিজভীর রয়েছে শক্ত রাজনৈতিক পটভূমি।তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ‘৯০-এর গণআন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি।
রুহুল কবির রিজভী বহুদিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি এর আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। পরে যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
দলের সংকটময় মুহূর্তে রিজভী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের বার্তা সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে পৌঁছে দেন। মাসখানেক টানা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার থাকার ইতিহাসও রয়েছে।
রিজভী কুড়িগ্রাম কিংবা রাজশাহীর একটি আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে নেই। মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করেননি।
নির্বাচন না করার বিষয়ে রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে এবং তারেক রহমানকে নির্বাসিত রেখে তিনি নির্বাচন করবেন না।এছাড়া বর্তমান ‘একনায়কতান্ত্রিক’ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে লড়াই করছে।শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন তিনি করবেন না।
আলাল
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের রাজনৈতিক হাতেখড়ি ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে। পরে তিনি যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে প্রায় এক দশক সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। টিভিতে টকশোয় দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গত এক দশকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ১০০ মামলা হয়েছে।বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি।
আলাল ২০০৮ সালে মোহাম্মদপুর-আদাবর আসন থেকে নির্বাচন করেন। এবার বরিশাল-৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বরিশাল-২ আসন থেকে। তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
বরিশাল-২ আসনে এবার আলালের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সারফুদ্দিন সান্টুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর আলালের কাঙ্ক্ষিত আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ভোটে না থাকার রহস্য কি? দলীয় মনোনয়ন পেয়েও কেন তিনি নির্বাচন করছেন না তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা কথা হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, কাঙ্ক্ষিত আসন বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় নাখোশ হয়েছেন আলাল। কারণ তিনি আগেই বলে রেখেছিলেন-ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে ভোট করবেন না।
অনেকে বলছেন, বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার। ওই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে সরোয়ারের কাছে হেরে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারছেন না আলাল। তাই হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে ভোট থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন ভিন্নকথা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে পারছেন না। তাদের একজন কারাবন্দি, অন্যজন নির্বাসিত। এমতাবস্থায় জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে তিনি নির্বাচন করতে পারেন না।
আলালের ভাষ্য-‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তারা আমাদের জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল অনুপ্রেরণার উৎস ও উজ্জীবনী শক্তি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে আমিও সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী নই। এ জন্যই আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করিনি।’
সোহেল
হাবিব-উন নবী খান সোহেলের রাজনৈতিক পটভূমি খুবেই সুদৃঢ়। তিনি ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে সারা দেশে এ অঙ্গ-সংগঠনকে মজবুত ভিত্তি দেন।
সোহেল বিএনপির তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। দলের পোড় খাওয়া নেতাদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি ঢাকার রাজনীতিতে সক্রিয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি পদে রয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি এখনও কারাবন্দি।
সোহেল ২০০৮ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এবারও ওই আসন থেকেই তার পক্ষ হয়ে মেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড তাকে অন্য আসন দিতে চেয়েছিল। তাই তিনি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোহেল কারাবন্দি থাকায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।এ প্রসঙ্গে সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে।
সেখানে তার বাবার মনোনয়ন সম্পর্কে ইলমি লিখেন, ‘এমন না যে তাকে আসন দেয়া হয়নি। একাধিক আসনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আমাদের দাবিতে আপসহীন ছিলাম। যোগ্যতার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’