“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার জীবন দেবতা” শ্রেয়া গুহঠাকুরতা,১৮ মার্চ আমি আসছি

239
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ওয়াশিংটনডিসিঃ শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রতিথযশা জনপ্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, যিনি শুধু ভারতই নয়… ভারত-বাংলাদেশ থেকে শুরু করে প্রবাসের আঙ্গিনায়ও ঠাঁই করে নিয়েছেন কোটি কোটি শ্রোতা-দর্কদের হৃদয়ে।
unnamed

তার সুললিত কন্ঠ মাধুর্য্যে এবং পরিবেশনার লালিত্যে ঝড়ে পড়ে রবী ঠাকুরের গানের মর্মবাণী, সৃষ্টি হয়ে যায় রাবীন্দ্রিক পরিবেশের সুষমামন্ডিত রেশ যা মনের গভীরে অনুরণিত হ’তে থাকে বহুক্ষণ ধরে, বার বার ফিরে আসে মনের গহীনে সুরেলা সিম্ফনীতে। রবীন্দ্রনাথ বাঙ্গালির জীবন জুড়ে… বাঙালির মানসে, চেতনায় ভাস্বর হয়ে আছে।

বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং গানের জগৎ রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া অসম্পূর্ন।  রবীন্দ্রনাথ শ্রেয়া গুহঠাকুরতারও জীবন জুড়ে। শ্রেয়া গুহঠাকুরতা বলেন- “রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবন দেবতা… তার গানের মধ্য দিয়ে আমি তারই সাধনা করেছি সারাজীবন, করছি এখনও, আমার এ সাধনা শেষ হবেনা জীবনেও। তিনি আছেন আমার জীবন জুড়ে… সুখে, দুঃখে, হাসি-কান্নায়, অভিমানে, মিলনে-বিরহে, নিঃসঙ্গতায়-  তিনি আছেন সব জায়গায়, সবখানে আমার হৃদয় জুড়ে”।  এমনি সাধনায় যিনি রবী ঠাকুর এবং তার গানকে বুকে ধারন ক’রে পথ চলছেন, তার কন্ঠে রবী ঠাকুরের গান ভিন্ন ব্যঞ্জনায় মূর্ত হ’য়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল শ্রেয়া গুহঠাকুরতাকে নিয়ে ওয়াশিংটনে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করার, তাই এবার আসছেন শ্রেয়া গুহঠাকরতা আমাদের “গানের ভেলায়, বেলা অবেলায়- ফাগুন সন্ধ্যা”  অনুষ্ঠানে শ্রোতা-দর্শকদের মন ভরে গান শোনাতে, আগামী ১৮ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬.৩০মিঃ ম্যানাসাস উইন্ডহ্যাম হোটেলের বলরুমে।
৩০তম ফোবানা সম্মেলন শেষ হয়ে যাবার বেশ কিছু দিন পর একান্ত সাক্ষাৎকারের নিতে গিয়ে একদিন ফোনে আলাপচারিতায় মেতে উঠেছিলাম শ্রেয়ার সাথে….. জানতে চেষ্টা করেছি ব্যক্তি শ্রেয়া গুহঠাকরতাকে, বুঝতে চেষ্টা করেছি শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতাকে, যার মানসভূমি জুড়ে রবীন্দ্রনাথের পায়ের চিহ্ন!
আলাপচারিতার রেশ ধরে উঠে এলো তার সাঙ্গীতিক, সাংস্কৃতিক পারিবারিক পরিমন্ডলের কথা, যেখানে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছেন শিল্পকলার আলোকস্নাত পরিবেশে, বিশেষ করে রাবীন্দ্রিক  পরিবেশে। তার ঠাকুরদাদা, জ্যাঠামহাশয়সহ মা-বাবা সবাই শিল্প-সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। শ্রেয়া গুহঠাকুরতার ঠাকুরদাদা শুভ গুহঠাকুরতা (দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৬ সালের দিকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন), জ্যাঠা সুদেব গুহঠাকুরতা, বাবা বিশ্বগুহ ঠাকুরতা এবং মা শাশ্বতী গুহঠাকুরতা।  তার ঠাকুরদা শুভ গুহঠাকুরতা একজন চমৎকার রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন… কলিম শরাফী, কণিকা বন্দোপাধ্যায় ছিলেন তার সাক্ষাৎ ছাত্র।
তার দাদু শুভ গুহঠাকুরতা ভারতে প্রথম শান্তিনিকেতনের বাইরে এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার জন্য ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “গীতবিতান”। এরপর ১৯৫৩ সালে স্থাপন করেন “দক্ষীণি” এবং সময়ের হাত ধরে পথ চলতে চলতে তার অক্লান্ত প্রয়াসে এর বেশ কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় কোলকাতা, দিল্লী, বোম্বে, লন্ডন এবং টরন্টোতে। উদ্দেশ্য ছিল এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে নাচ, গান, নাটক ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেয়া, বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা দেয়া। ভারতে এটিই সবচেয়ে বড় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠিত গুনী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে ছিলেন তারা হলেন- সুবিনয় রায়, সুচিত্রা মিত্র, অমল নাগ, সুশীল চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখ।
বাবা বিশ্ব গুহঠাকুরতা ছিলেন একজন অভিনেতা। তিনি কোলকাতার বেশ কিছু প্রতিভাধর শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন, যেমন- সত্যজিত রায়, তপন সিংহ প্রমুখ এবং প্রায় ৭০/৮০টা ছবিতে অভিনয় করেন। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা সবসময় তাকে ঘিরে রেখেছে। মা শাস্বতী গুহঠাকুরতা ছিলেন গায়িকা এবং অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ।
শ্রেয়ার গানের যাত্রা শুরু সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে। দু’তিন বছর বয়স থেকেই গুন গুন করে সুর ভাজতেন গলায়… জন্মগতভাবেই যেন রক্তে মিশে গিয়েছিল গানের নেশা। তবে পরবর্তীতে গানের তালিম নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। ১৯৯৪ সালে তাদেরই সঙ্গীত  প্রতিষ্ঠান “দক্ষীণি” থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর ডিপ্লোমা করেছেন। আর বিশেষভাগে উল্লেখযোগ্য যে তার মূল প্রেরণা, অনুকরণীয় শিল্পী, তার আইডল বা গানের রোল মডেল ছিলেন তাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী-  কণিকা বন্দোপাধ্যায়। শ্রেয়া গুহঠাকুরতা গান করেছে এপার বাংলা, ওপার বাংলা- দুই বাংলায় এবং দুই বাংলায়ই তার প্রচুর জনপ্রিয়তা। প্রায় ৮০০ গান রেকর্ড করেছেন এবং তা ঘরে ঘরে শ্রোতাদের কাছে পৌছে গিয়ে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে সবার কাছে।
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ৫ বছর বয়সেই ছবিতে কন্ঠ দেয়া শুরু করেছিলেন। প্রথম ছবি ছিল-  “দ্বিপার প্রেম” এবং তিনি গেয়েছিলেন-  “যতবার আলো জ্বালাতে চাই, নিভে যায় বারে বারে”।  শুধু তাই নয়, তিনি দ্বীপার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। মূলতঃ সেটি ছিল তাপস-মুনমুন জুটির প্রথম আত্মপ্রকাশ বা ডেবিউ, পরিচালনায় ছিলেন অরুন্ধতী দেবী। ১৩/১৪ বছর বয়সে তপন সিংহ পরিচালিত “স্বীকৃতি” ছবিতে প্লেব্যাক করেন… “জীবনে আমার যত আনন্দ” গানটি গেয়ে। এরপর অনেকটা সময় চলে গেছে… অব্যাহত ছিল তার সঙ্গীত চর্চা, বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ঘিরেই আবর্তীত হচ্ছে তার শিল্পী জীবন।
শ্রেয়া গুহঠাকুরতার মূল পদচারনা ছিল মঞ্চে এবং টিভি-তে সঙ্গীত পরিবেশনা… দেশ-বিদেশে অসংখ্যবার, বিভিন্ন মঞ্চে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের আপ্লুত করেছেন, জয় করে নিয়েছেন তাদের মন… এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন সবার হৃদয়ে। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ‘তারা মিউজিক’ টিভি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে আসছেন। তার গানের পরিবেশনায় মুগ্ধ বাংলাদেশের কোটি কোটি শ্রোতা-দর্শক। তিনি বাংলাদেশের যেসব টিভি চ্যানেল গান করেছেন- “চ্যানেল আই”, “মাছ রাঙ্গা”, “এন টিভি,”, “আর টিভি”, “দেশ টিভি”, “এস টিভি”সহ আরো অন্যান্য চ্যানেলে। এছাড়া এপর্যন্ত তার ‘সা রে গা মা’ থেকে ৩২টি গানের এ্যলবাম বেড়িয়েছে।  “আশা অডিও” এবং শ্রীনিবাস মিউজিক” থেকেও তার এ্যলবাম বেড়িয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ- দু’জায়গায়ই তার গানের এ্যলবাম বেড়িয়েছে শ্রোতাদের ভালবাসার দাবী মেটাতে। শুধু মঞ্চ, টিভি চ্যানেল এবং গানের এ্যলবাম নয়, তিনি দেশে বিদেশে প্রচুর বড় বড় আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত “বঙ্গমেলা”, “বঙ্গসম্মেলন”, “ফোবানা সম্মেলন”, “টরন্টো সাংস্কৃতিক সম্মেলন” ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সী, ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া, শিকাগো, ডেট্রয়েট, নর্থ ক্যারোলিনা, বোস্টন, টেক্সাস সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। ভারত, বাংলাদেশ এবং প্রবাসের বাঙালিদের তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের মুর্ছনায় আবিষ্ট করেছেন তার অসংখ্য গান দিয়ে। একান্ত সাক্ষাৎকারে শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতার  কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিছু কথা……………
রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে কিভাবে জড়ালেন?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ “আমার বোধ হবার পথ থেকেই রবী ঠাকুরের গানের সাথে আমাদের পরিচয়। পারিবারিক রাবীন্দ্রিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে যেয়ে যেন খুব স্বাভাবিকভাবেই এসে গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার জীবনে।  আমার সঙ্গীতে, আমার সমস্ত সত্বা জুড়ে বিস্তার করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমার “জীবন দেবতা” রবী ঠাকুর- এই রবীর আলোয়ই আমার জীবন আলোকিত। রবী ঠাকুর আমার নেশা, পেশা, ধ্যান, জ্ঞান-  আমার প্রানের মানুষ রবী ঠাকুর, আমার Soul Mate”।
রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া আর কার গান ভালবাসেন?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ পঞ্চ কবির গান ভাল লাগে…  অতুল প্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্তসহ সবার গান ভাল লাগে, করিও তাদের গান কখনো কখনো। মূলতঃ আমি সঙ্গীত ভালবাসি, তা সে যে কোন সঙ্গীত- আমাদের সঙ্গীত ছাড়া আমি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গীতও ভালবাসি। তাই আমি ১৪ বছর বয়সেই পিয়ানো শিখেছিলাম-  আমি প্রগতিশীল, আধুনিক ভাবধারায় বিশ্বাসী।
নিজের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া আর কাদের গাওয়া গান ভাল লাগে?
 শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ অনেকেই ভাল গান করেন, অনেক গুনী শিল্পী আছেন আমাদের মাঝে। তবে যদি নাম  ধরে বলতে হয় এমূহুর্তে, তাহলে বলবো…… পুরুষদের মাঝে দেবব্রত বিশ্বাস, সাগর সেন, শ্রীকান্ত আচার্য। আর মেয়েদের মধ্যে কণিকা বন্দোপাধ্যায়, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাগতালক্ষীদাস গুপ্ত প্রমুখ। শ্রীকান্ত আচার্য “দক্ষিনী”র ছাত্র ছিলেন এবং আমার খুব ছোটবেলা থেকে তার সাথে পরিচয়, অসাধারণ শিল্পী… চমৎকার গান করেন।
রবীন্দ্রসঙ্গীতকে তরুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে হলে বা তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে কি করা উচিৎ?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ “আসলে তরুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের গান পৌছাচ্ছে। টিভি চ্যানেল, সিডি এবং মঞ্চ অনুষ্ঠানে অনেক শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের গান করছেন এবং পৌছে দিচ্ছেন সবার কাছে। রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে আয়োজন হচ্ছে অনেক অনুষ্ঠানের। তবে আমাদের তরুন প্রজন্মকে আরো একটু অনুপ্রানিত করতে হবে রবীন্দ্রনাথকে জানতে এবং তার গান শিখতে।
আজকের সময়ে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের পথ ধরে, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে আজকাল পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের রুচী এবং সাংস্কৃতিক মননশীলতা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বা উৎসাহ সৃষ্টি করার জন্য কি করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  মানুষের জীবনধারায় এবং মননশীলতায় কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে এতে সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রচুর মানুষ রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালবাসে এটাও ঠিক- তাইতো দেশে-প্রবাসে আয়োজিত হচ্ছে প্রচুর অনুষ্ঠান এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে তাদের গান। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ভালবাসতে হলে রবী ঠাকুরকে জানতে হবে, তাকে বুঝতে হবে, তাকে ভালবাসতে হবে, তাঁর জীবনদর্শনকে জানতে হবে।  আর তার মধ্য দিয়ে রবী ঠাকুরের সাথে, তাঁর গানের সাথে, তাঁর সৃষ্টির সাথে আমাদের একটা নিবিড় বন্ধন, একটা আত্মীক সম্পর্কের সৃষ্টি হবে, যা আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। তখন রবীন্দ্রনাথ আমাদের অন্তরে বাস করবেন, তার সঙ্গীত আপনা থেকেই আমাদের অন্তরে এক অভূতপূর্ব আবেদন সৃষ্টি করবে।  আর তার জন্য প্রয়োজন তাঁর সম্পর্কে পড়া এবং জানা। রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে, ভালবাসতে হবে”।
‘রবীন্দ্রনাথ আপনার সমস্ত সত্বা জুড়ে, জীবন জুড়ে বিস্তার করে আছেন’ বলেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে আপনার কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা স্বপ্ন?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  রবী ঠাকুরকে নিয়ে আমার অন্তরের গহীনে যে স্বপ্ন, তা হচ্ছে বাঙ্গালির প্রতিটি ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথকে পৌছে দেয়া, নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পৌছে দেয়া। বাঙ্গালির গানের ভুবন থেকে রবীর আলো যেন কোনকালেই অস্তমিত না হয়, ফল্গুধারার মত যেন প্রবাহিত থাকে অনাদিকাল। এছাড়া আমাদের বাঙালির কোন অনুষ্ঠানই যেন রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া না হয়, সেটাই হবে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা প্রদর্শন। আমার জীবনের বাকীটা সময় যেন রবীর আলোয় উদ্ভাসিত থাকে, সে প্রার্থনাই আমার মনের গহীনে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথকে সকল মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য, ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি গান শেখাই-  সেটাও অব্যাহত থাকবে আমার। আগামীতে হয়তো আমাকে “দক্ষিণী”র দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে… সেটা নিয়েও ভাবছি, নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি।
অবসরে গান ছাড়া আর কি করেন? আপনার শখ কি কি?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  বই পড়ি, গান শুনি, সিনামা দেখতে পছন্দ করি, রান্না করি, বেড়াতে পছন্দ করি। এছাড়া বিশেষ করে ছেলের সাথে সময় কাটানো।
কী ধরনের খাবার আপনার পছন্দ?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  সবচেয়ে পছন্দ বাঙালি খাবার… তরকারি, ভাজি, ভর্তা, যে কোন শব্জী। এছাড়া চাইনীজ খাবার আমার বেশ পছন্দের।
আপনার প্রিয় রং কি?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  সাদা… আমার ভীষণ প্রিয় রং!
আপনার পরিবারের কথা বলুন।
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ  আমার স্বামী সুজয় মজুমদার। পেশায় একজন আইনজীবি। তার পেশাগত কারনে আমাদের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে, থাকতে হয়েছে… ফ্রান্স, ইরান, দুবাই, লন্ডন, স্কটল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায়। আর আমার একমাত্র ছেলে, আমার চোখের মনি হচ্ছে আমার আকশান। ওর নামের মানে হচ্ছে ইটারনাল।
ওয়াশিংটনে শ্রোতাদের জন্য কোন সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করলে আসবেন গান শোনাতে?
শ্রেয়া গুহঠাকুরতাঃ অবশ্যই আসবো। শ্রোতাদের গান শোনাতেই আমার যত আনন্দ, কেন আসবোনা। এর আগেও গিয়েছি কয়েকবার ওয়াশিংটনে গানের অনুষ্ঠানে, যতবার ওখানে যাই… ততবারই ভাল লাগে। আপনারা ডাকলে আসবো, অবশ্যই আসবো।
গানের ক্লাশের ফাঁকে এতটা সময় নিয়ে কথা হচ্ছিল, তাই আর দীর্ঘক্ষণ আটকে না রেখে তাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিয়েছিলাম, কানের মাঝে তখনো ঘুরে ফিরে বেজে যাচ্ছিল তার কথপোকথনের আওয়াজ।
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা একজন রবীন্দ্রভক্ত, একজন শিল্পী, একজন সঙ্গীত শিক্ষক, একজন মা, একজন পত্নী। নানা রং-এ, নানা রুপে জীবনকে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে। অসাধারণ মনোবল ও সাধনা এবং সবার ভালবাসা তার পাথেয়, আর রবীর আলোয় আলোকিত তার নিজস্ব ভুবন!  একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, একজন রবীন্দ্রপূজারী শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, যার বুকের গভীরে চিরঞ্জীব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.