রাজশাহীতে ইফতারে বাটার মোড়ের জিলাপী ক্রেতাদের এখনো টানে
রাজশাহী অফিসঃরাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র বাটার মোড় এলাকায় গেলে প্রথমেই আপনার নাকে বিধবে একটি মিষ্টি সুবাস। এরপর নজর ঘুরালেই দেখতে পাবেন বড় একটি লোহার কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে গরম গরম জিলাপি। মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য এটি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।অনেকেই বলেন রাজশাহীতে এসে যদি বাটার মোড়ের জিলাপি না-ই খেলেন তাহলে তো সব মজাই হারালেন।
জানা যায়, রাজশাহীতে এই খাবারটি প্রথমে বিচরণ করে ১৯৬০ সালে। ওই সময় নগরীর বাটার মোড়ে জিলাপী ব্যবসা শুরু করেন সোয়েব উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী। সেসময় তার একমাত্র কারিগর ছিলেন জামিলী সাহা। তখন থেকেই ধীরে ধীরে প্রচলিত হতে থাকে এই জিলাপি। ১৯৭২ সাল থেকে জামিলী সাহার ছেলে কালী পদ সাহা(কালী বাবু) বাবার সঙ্গে জিলাপীর কারিগর হয়ে উঠতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে জামিলী সাহা মারা গেলে কালী পদ সাহা প্রধান কারিগর হয়ে উঠে। সেই থেকে অদ্যবধি তিনিই জিলাপি বানিয়ে আসছেন। আর এখন তাঁর সাথে যুক্ত হয়েছেন ছেলে পরী বাবু। দুই বাপ-ছেলে মিলে ঐতিহ্যবাহী এই জিলাপী তৈরী করে আসছেন সোয়েবের জিলাপীর দোকানে।
আরও জানা গেছে, ২০০২ সালে সোয়েব উদ্দিনের মৃত্যূর পর তাঁর চার ছেলে সোহেল, শামীম, নাইট এবং এমরান আলী নাহিদ বাবার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে শুরু করেন।
দোকান মালিক মো.শামীম জানান, বাবার প্রতিষ্ঠানটি অনেক পুরোনো। এই জিলাপীর চাহিদা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে রয়েই গেছে ঠিক আগের মতই। ৫৭ বছর ধরে রাজশাহীতে এ জিলাপী এখন ঐতিহ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহীর নতুন-পুরোনো ক্রেতারা ভীড় করেন জিলাপী খেতে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ক্রেতা আসেন এখানে। আর রমজানে এই জিলাপীর চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়।
জিলাপীর জন্য এখন পুরো হোটেল তৈরী করে নিয়েছেন তারা। বলা হয়, এটিকে বাটার মোড়ের জিলাপীর হোটেল। যেখানে ঐতিহ্যবাহী জিলাপী ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।তবে রমজান এলে নিজেদের বানানো সেমাইও পাওয়া যায় এখানে।
কারিগর কালিপদ সাহা জানান, এখানে জিলাপি তৈরি হয় খামির পদ্ধতিতে। এক থেকে দেড় দিনেআগে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ একসাথে মিশিয়ে রাখা হয়। তারপর্ তৈরি করা হয় গরম গরম সুস্বাদু এই জিলাপি। যাতে থাকে না কোনো রং বা কেমিক্যাল। ফলে এই জিলাপী খেতে হয় সুস্বাদ। ছুটে আসে মানুষ।
দোকান মালিক শামীম জানান, তাদের চার ভাইয়ের প্রত্যেকেরই অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু শুধুমাত্র বাবার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান টিকে রাখতেই তারা এখনো ধরে রেখেছেন জিলাপী ব্যবসা। যা ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।