রাজশাহীর রাজনীতিতে নির্বাচনি আমেজ, সক্রিয় এমপি প্রার্থীরা

248

 

 

 

 

 

 

রাজশাহী: সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি এবং দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের পদচারণায় এখন মুখরিত রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রায় দুডজন নেতা চষে বেড়াচ্ছেন নিজ নিজ এলাকা।

 

এতোদিন তাদেরকে মাঠে না দেখা দিলেও মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভও দেখা দিচ্ছে।

 

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির নেত্বত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশ না নিলেও আগামি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে-এমন ধারণা রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে আগামি নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীতে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছেন বিএনপির সাবেক এমপি ও নতুন করে এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশিরা।

 

পাশাপাশি তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আওয়ামী লীগেরও বাদ পড়া সাবেক এমপিরা পুনরায় রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে মাঠে নেমে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে টেনে চাঙ্গা করারও চেষ্টা করছেন রাজশাহী বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপিরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে বর্তমান এমপিরাও। তারা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছেন নানাভাবে।

 

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে ১৯৯১-২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বার এমপি নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। সর্বশেষ চরদলীয় জোট সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকায় এবং বিএনপির সংস্কারপন্থিদের কাতারে ভেড়ায় আমিনুল হকের পরিবর্তে তার ভাই এনামুল হককে দলীয় মনোনয়ন দেয় বিএনপি। তবে ওই নির্বাচনে সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক মাত্র সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে মহাজোট প্রার্থী ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে।

 

গত নির্বাচনেও ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। তবে আগামী নির্বাচনে এবার বিএনপির প্রার্থী হয়ে অংশ নিতে এরই মধ্যে মাঠচষে বেড়াতে শুরু করেছেন সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তাঁকে জায়গা করে দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন বড় ভাই আমিনুল হক।

 

স্থানীয় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ারু আলম মণ্ডল বলছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আমিনুল হকই হবেন এখানকার একমাত্র প্রার্থী। ফলে সেই অনুযায়ী তিনি এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। তানোর-গোদাগাগাড়ী উপজেলা কমিটি থেকে শুরু শুরু করে চারটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন কমিটি গঠনও শুরু করেছেন তিনি এরই মধ্যে। কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে আগামী নির্বাচনে আমিনুলের পক্ষে কাজ করার উদ্দেশ্যেই এটি করা হচ্ছে বলেও জানান ওই নেতা। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেকার লবিং-গ্রুপিং নিরসন করে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছেন আমিনুল।

 

রাজশাহী-২(সদর) আসনের সাবেক এমপি ছিলেন মিজানুর রহমান মিনু। তিনি একবার এমপি ছিলেন। ২০০৮ সালের আগে এ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালেও মিনু কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মহাজোট প্রার্থী ও ওয়াকার্স পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার কাছে পরাজিত হয়ে সাবেক এমপির খাতায় নাম লেখান মিনু।

173047_1

এখন আগামী নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু। যদিও সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মহানগর বিএনপির সভাপতি করায় কিছুটা হলেও মিনুর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে ওঠে। তবে আগামি নির্বাচনে মিনুই এখানে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন-এমনটিও মনে করছেন তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই। সেই হিসেবে সাবেক এমপি মিনু দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করারও চেষ্টা করছেন।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন কোনো বিরোধ নাই। মাঝে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হলেও সেটি আমরা নিরসন করে সামনের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দল আগামি নির্বাচনে অংশ নিলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে মাঠে নামবো। সেই হিসেবে আমি কাজও করে যাচ্ছি।’

 

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনটি ২০০৮ সাল থেকে নতুনভাবে সংযুক্ত হয়। এর আগে পবা ও রাজশাহী সদর নিয়ে একটি আসন ছিল। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে সৃষ্ট হওয়া রাজশাহী-৩ আসনে প্রথম বারের মতো এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। তবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তার স্থলে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হওয়ায় সাবেক এমপি বনে যান মেরাজ উদ্দিন মোল্লা।

 

এরপর দলের সভাপতি পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সহসভাপতির পদ দেওয়া হয় তাকে। এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা আবারো নতুন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছেন। ফলে মাঝে অন্তত দুটি বছর রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই নিস্ক্রিয় হয়ে গেলেও নতুন করে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এ নেতা।

 

জানতে চাইলে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দল করে গেছি দীর্ঘদিন ধরে। আগামিতেও রাজনীতিতেই থাকতে চাই। সঙ্গে দলের মনোনয়নও পেতে চাই। তাই কাজ করে যাচ্ছি। এখন বাকিটুকু দলীয় প্রধানের ওপর নির্ভর করছে।’

 

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনটিও ২০০৮ সাল থেকে এককভাবে নতুন আসন হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। আগে মোহনপুর ও বাগমারাকে নিয়ে ছিল রাজশাহী-৩ আসন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে নতুন করে শুধু বৃহত্তর উপজেলা বাগমারাকে নিয়েই একটি আসন সৃষ্টি করা হয়। সেই নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে। বিএনপির আমলে  ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা আমলা হিসেবে পরিচিত আবু হেনা। সংস্কারবাদী হবার কারণে তিনি এলাকাতে এবং দলের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে এলাকায় কোনো সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। এই আসনের মনোনয়নের জন্য ব্যপক প্রচার প্রচারণা ও দলীয় সকল প্রকার কর্মসূচীতে আর্থিক সহায়তা করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র সাইন্টিষ্ট আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম। জানতে চাইলে সাবেক ভিপি ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম বলেন, ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রবাসেও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্বদানের পাশাপশি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বর্তমান গনতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় আছি। প্রবাসে অবস্থান করেও এলাকায় নেতাকর্মিকে সাথে নিয়ে সকল দলীয় কর্মসূচির পালন করছি। দলীয় চেয়ারপারসন মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি আমার আছে।

 

সেইসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আব্দুল গফুর। এই দুই প্রার্থীকেই পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন এনামুল হক। গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন এনামুল হক।  এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আবু হেনা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন ভিতরে ভিতরে-এমনটিও নিশ্চিত করেছেন বাগমারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী। তার এমন আচরণে অনেকটা সুবিধা অবস্থানে থেকে ফের বিএনপি থেকে বাগমারায় দলীয় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়েছেন সাবেক আরেক এমপি আব্দুল গফুর। এরই মধ্যে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজও শুরু করেছেন বলে দাবি করেছেন গফুর। তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবু হেনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

রাজশাহী-৫(পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বর্তমান এমপি রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওদুদ দারা। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এমপি হয়ে আছেন। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এখানে এমপি ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা। তারও আগে ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। তবে আগামি নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক এই দুই এমপিই আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছেন।

 

জানতে চাইলে সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আমিও প্রস্তুত আছি। সেই হিসেবে কাজ করছি। এখন বাকিটুকু দলের চেয়ারপার্সনের ওপর নির্ভর করছে।’

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আমাকে চাচ্ছেন। তাই মাঠপর্যায়ে আমি তাদের নিয়েই কাজ করছি। এখন নেত্রীর ওপর নির্ভর করছে কে আগামি নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন।’

 

রাজশাহী-৬(বাঘা-চারঘাট) আসনে বর্তমান এমপি রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি ২০০৮ সাল থেকেই এখানে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তবে গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অংশ নিয়েছিলেন আরেক সাবেক এমপি রায়হানুল আলম। অন্যদিকে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত এখানকার এমপি ছিলেন প্রয়াত বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান।

 

আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নেওয়ার দৌড়ে আবারো কাজ করে যাচ্ছেন রায়হানুল আলম। জানতে চাইলে তিনি গতকাল বলেন, ‘আমিও এখনো মনোনয়ন প্রত্যাশী এর জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজও করছি। এখন দলের ওপরই নির্ভর করছে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবো কি না।(সুত্র:rtnews)173047_1

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.