রাজশাহী-৩ জামায়াতের ভোটেই জয়-পরাজয়
রাজশাহীর একটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ছিলো জামায়াতের। তবে শেষ পর্যন্ত হয় নি। শেষে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। নির্বাচনের মাঠে তাদের খুব বেশি দেখা মেলেনি। মনমালিন্যের কারণে ভোট সেন্টারে অনুপস্থিতি বা বিএনপির বরিুদ্ধে ভোট দেবে এমন আশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত আর হচ্ছে না। বিএনপির পকেটেই যাচ্ছে তাদের ভোট। ফলে রাজশাহী ৩ আসনের ভোটের হিসাব পাল্টে গেছে। কাল নির্বাচনী মাঠেও তাদের সহযোগীতা পাবে বলে বিএনপির প্রত্যাশা।
জানা গেছে, এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মাথাব্যাথার কারণ এই জামায়াতই। কারণ এখানে রয়েছে তাদের বড় ভোট ব্যাংক। আর বিএনপি প্রার্থীর মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি পুলিশি হয়রানি, গ্রেপ্তার আতঙ্ক। ফলে নির্বাচন যত ঘোনিয়ে আসছে দুই প্রার্থীর এই দুই আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নির্বাচনে ফলাফলেও এ দুটি বিষয়ই প্রধান নিয়ামক হতে পারে বলেও মনে করছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা।
আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা মনে করেন, জামায়াতের ভোটের একটি বড় অংশ তারা পাবেন। যদি না পায়, তবে জয় অনেকটা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ হিসাবে তারা জানান, আমাদের এই এলাকায় জামায়াতের প্রচুর ভোট আছে। কাটাখালি পৌর সভার সাবেক মেয়র ও জামায়াত নেতা মাজিদুর রহমানের বাড়িও এই এলাকাতেই। মাজিদুর রহমান নিজেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ফলে জামায়াতের লোকজন হয়তো ধানের শীষেই এবার ভোট দিবে। কিন্তু মাজিদুরসহ জামায়াতের নেতাকর্মীরা কেউ মাঠে নাই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী-৩ আসনটি ২০০৮ সাল থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। কিন্তু এই আসনে বিএনপি-জামায়াতের শক্ত অবস্থান প্রতিটি নির্বাচনেই মনে করে দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াত আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। ফলে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিরাজ উদ্দিন মোল্লা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিরাজ মোল্লা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বিএনপির কবির হোসেন পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৬৪৯ ভোট। আর জামায়াতের প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ৫২৭ ভোট।
তবে ২০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পবা এবং মোহনপুরের দুটি উপজেলাতেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়। এরপর ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনেও দুটি উপজেলাতেই বিএনপি জামায়াতের নেতারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর মধ্যে মোহনপুরে বিএনপি ও পবায় জামায়াতের প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বিগত দুটি সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, রাজশাহী-৩ আসনে জামায়াতের প্রায় ৫০ হাজার ভোট রয়েছে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত দুটি উপজেলায় জামায়াত নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরা চোখে পড়েনি। তার পরেও এই জামায়াতের ভোট ব্যাংকই আতঙ্ক হয়ে আছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে। এবার এই আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা হলেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫জন।
গতকাল সকালে পবার হরিপুরে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকায় নৌকার ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারই বেশি। মাঝে মাঝে ধানের শীষের পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ধানের শীষের পোস্টার মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, রাস্তায় ঘুরলে নৌকার পোস্টারই তো বেশি চোখে পড়ছে। ধানের শীষের পোস্টার কম দ্যাখা য্যাচ্ছে। তবে ধানের শীষের ভোট আছে গোপনে। তারা ভয়ে বের হতে প্যারছে না। আবার বের হলেও নাকি পুলিশ ধরে লিয়ে য্যাচ্ছে। তাই তাদের প্রচারণা একটু কমই মনে হচ্ছে।