রাবি শিক্ষক ফারুক হোসাইনের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি

254

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফারুক হোসাইন স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষক বুদ্ধিজীবী ও মরহুমের সহকর্মীরা বলেছেন, ‘ড. ফারুক হোসাইন ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’

তারা বলেছেন, একজন বিষণ্ণ ব্যক্তিরও মন ভালো হয়ে যেতো তার সাহচর্যে এলে। অসম্ভব জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিল তার জীবনযাপন। মানুষকে আপন করে নেয়ার দুর্লভ গুণের অধিকারী ছিলেন ফারুক।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের উদ্যোগে গত শনিবার রাতে অনলাইন প্লাটফর্মে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রাজিনা সুলতানা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম আজম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কে এম রবিউল করীম, প্রথিতযশা সমাজতাত্ত্বিক ও গবেষক প্রফেসর ড. এএসএম আতিকুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর সমাজবিজ্ঞানী ড. রেজাউল করীম, প্রফেসর ড. সৈয়দা আফরিনা মামুন, প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোস্তফা হাসান, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আখতার হোসেন মজুমদার, প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, মরহুম ফারুক হোসাইনের বড়ভাই সিনিয়র সাংবাদিক হারুন জামিল, সহকর্মী বন্ধু আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে খালিদ ফেরদৌস, মাহমুদ মোস্তফা, স্বপ্না আক্তার প্রমুখ।

ঢাকা, রাজশাহী, শাবিপ্রবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ স্মরণসভায় অনলাইনে অংশ নেন।

প্রফেসর ড. গোলাম আজম বলেন, মরহুম ফারুক হোসাইন একজন আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তার মানবিক গুণাবলী ছিল ঈর্ষণীয়। মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ছিল তার। শারীরিকভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার কর্মের কোনো মৃত্যু নেই। কর্মের মাধ্যমে তিনি বহুকাল বেঁচে থাকবেন।

প্রফেসর ড. কে এম রবিউল করীম বলেন, ফারুক হোসাইনের আকস্মিক মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের সম্পদ। কর্মজীবনে তার সাথে বহু স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু তিক্ততার কোনো স্মৃতি নেই। সবাইকে আপন করে নেয়ার বিশেষ গুণ ছিল তার। মানুষের মন ভালো করার দুর্লভ এক গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি যেটা বিশ্বাস করতেন, মনেপ্রাণে সেটাই করার চেষ্টা করতেন। কমিটমেন্ট রক্ষায় তার দৃঢতা প্রদর্শন মুগ্ধ করার মত। সুশৃঙ্খল ও পরিপাটি জীবন ছিল তার।

প্রফেসর ড. এএসএম আতিকুর রহমান বলেন, ফারুক ছিল আমার খুবই প্রিয় ছাত্রদের একজন। সততা, মানুষের জন্য দরদ, উত্তম ব্যবহার এসব গুণে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকশিত হয়েছেন তিনি। আমার সন্তানতুল্য ছিল সে। জীবদ্দশায় এমন আর কারো মৃত্যুর দৃশ্য যেন দেখতে না হয় সেটাই কামনা করি।

ড. মোস্তফা হাসান বলেন, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও দর্শনের বাইরে উঠে সবাইকে যে আপন করে নেয়া যায় ড. ফারুক ছিলেন তার উদাহরণ। তিনি ছিলেন অজাতশত্রু। একাডেমিক দিক থেকেও ছিলেন অত্যন্ত সরব একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়।

প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রফেসর ফারুক হোসাইন ছিলেন একজন স্বপ্নচারী। মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন। তার দায়িত্ববোধ ছিল অপরিসীম। নিজের এলাকায়ও বহু মানুষের জীবনধারা পাল্টে গেছে তার সাহচর্যে।

প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ওর কথা শুনলেই হৃদয় ঠাণ্ডা হয়ে যেতো। এমন দরদমাখা কণ্ঠে আর কারো কথা শুনতে পাবো না। এমন প্রণোচ্ছল হাসিখুশি, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ আমি আর দেখিনি। বাংলা ইংরেজি আরবী ভাষায় তার দখল ছিল। এমন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক আমি আর দেখিনি।

প্রফেসর আখতার হোসেন মজুমদার তাকে দীর্ঘ জীবনের সহপাঠী উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, চারিদিকে ক্রন্দনধ্বনির মধ্যে হাস্যোজ্জ্বলভাবে ফারুক বিদায় নিয়েছেন। সমাজের বহু বখে যাওয়া ছেলেরা তার সাহচর্যে নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে তিনি মনে করতেন আমানত। মন খুলে প্রাণ খুলে তাই তাদের সাথে মিশতেন।

প্রফেসর ড. সৈয়দা আফরিনা মামুন বলেন, ফারুক ছিলেন সবদিক থেকে অতিশয় সমৃদ্ধ একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা ছিল ওর জন্য পাগলপারা। শিক্ষার্থীদের মনের ভাষা তিনি বুঝতেন।

আলোচনাকালে প্রফেসর ফারুকের শিক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাদের প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিরক্ষার্থে একটি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের তরুণ জনপ্রিয় অধ্যাপক ড. ফারুক হোসাইন গত ২৭ ডিসেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে ইন্তেকাল করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.